এক
দিনভর হালকা কুয়াশার চাদরে জড়ানো ছিল শহর, যেন বিমূর্ততায় মোড়ানো কবিতা। তার সাথে মন খারাপ করিয়ে দেয়ার মতো আকাশে কিছুটা মেঘলা ভাব। অবশ্য তাতে শহরের ব্যস্ততায় কোন ভাটা পড়েনি সেদিন। অন্তঃ ও আন্তঃ জেলা সড়ক দিয়ে লোকজনের চলাচল বরং বেড়ে গিয়েছিল যে কারণে। শহরের প্রধান ও অপ্রধান রাস্তা দিয়ে একটার পর আরেকটা মিছিল ঢুকেছে ব্যানার- ফ্যাস্টুন হাতে। হোটেল-রেস্তোরাগুলো বাড়তি জনসমাগম সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল। স্কুল-কলেজ নির্দিষ্ট পিরিয়ডের পর বিশেষ পারমিশনে ছুটি হয়ে গিয়েছিল। শুধু সে কারণে উত্তেজনার কমতি ছিল কোথাও কোথাও; কেননা, কিছু লোক আদপেই এসবের ধার ধারেনা কিংবা বিশ্বাস করেনা যে এমন সব বক্তৃতা অথবা কর্মসূচী তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এরকম নিরুৎসাহী, নৈরাশ্যবাদী, উপদ্রুত কিছু লোক আর বিরোধী পক্ষ বাদে বটতলা মাঠে যখন জনে জনারণ্য। স্থানীয় বক্তারা বক্তৃতায় যে যার মতো গোল পোস্টে গোল দিচ্ছে। ঠিক তখনই মাথার উপর হেলিকপ্টার চক্কর দিল।ওপারে জিলা স্কুল মাঠে হেলিকপ্টার থামতে না থামতেই বিপুল জয়ধ্বনিতে উল্লোসিত জনতার স্লোগান আর হর্ষধ্বনি।
দীর্ঘ সারহীন বক্তৃতা শুনে শুনে এক ধরণের ঝিমানো ভাব এসে যাওয়া পাবলিকের ভেতর যেন উত্তেজনা ফিরে আসল তাৎক্ষণিক। তারা দাঁড়িয়ে উষ্ণ অভিনন্দন জানালেন জনগণের দন্ডমুন্ডের কর্তাকে ।
সময়ের ঘাসফুল, লতাগুল্ম মাড়িয়ে গালিচা পথে হেঁটে আসলেন তিনি। মূহুর্মুহ করতালি আর মোসাহেব বেষ্টিত হয়ে তিনি ভাসতে ভাসতে শীর্ষমঞ্চে এসে দাঁড়ালেন । বাগ্মীতাশিল্প বিশারদ কর্তার নিবিষ্টচিত্ত শ্রোতা হতে এ অছিলায়, সেদিন একটু সকাল সকাল অফিস থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম । জীবনের তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে আমিও আম- জনতার অদূরে বসে পড়লাম। আফিমের নেশার মতো ঘুম পাড়ানিয়া ভাষণগুলো যেমন হয় আর-কি!
কী কী খেলে গলা অব্দি আটকে হাঁসফাঁস হবেনা। কতটুকু ভাবলে অ্যান্টেলিয়াগুলোর বিরুদ্ধে জনরোষ আটকে থাকবে কিছুকাল।
কৃতজ্ঞতাবোধ কতটা ঠনঠনে হলে মুকেশ আম্বানিদের মহানুভবতা ক্ষুন্ন হবেনা।
কতটুকু জাগলে পাপিয়া, সাহেদ, সাবরিনা শিল্প টিকে থাকবে। মুনিয়ার যোনিগহ্বরের কতবার ব্যবচ্ছেদ হলে, কতটুকু অসতী প্রমাণ করলে, বসুন্ধরা অধিপতিদের সাম্রাজ্য সুরক্ষিত থাকবে।
ইমপোর্ট আর এক্সপোর্ট কতটা ইমব্যালেন্সড হলে ভাসা যাবে অ্যালসেশিয়ান আয়েশে।
উড়াল সেতু দিয়ে কত কিঃ মিঃ অতিক্রম করলে জনপদের ভাসমান দুঃখদৃশ্য সুখস্বপ্নে দেখা যাবে, ইত্যাদি ইত্যাদি । পৌর নর্দমায় পুষ্ট মশাদের কামড় খেতে খেতে আমি বসে ভাষণ শুনি, হাততালি দেই,বগল বাজাই। আর হাততালি দেই, বগল বাজাই।
কৃতজ্ঞতার আহলাদে কর্তার পদযূগলে চুম্বন চিহ্ন এঁকে দিতে এগোতে চাই। সামনে, পিছনে, ডানে,বামের দেহরক্ষী আর মোসাহেবদের ভীড় পাড় হয়ে এগোতে পারিনা।
সাইলেন্ট করা মোবাইলে চোখ রাখি-স্ত্রীর পঁচিশটা মিসকল! বড্ড বেশী জ্বালায় আজকাল বউটা। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য নিশ্চয়ই ! বউয়ের একঘেয়ে আদিখ্যেতায় হাই তুলতে তুলতে রেহেনার কথা মনে হয,ওর জন্য ভেতরে তাগিদ অনুভব করি । দরজা খোলা রেখে প্রতিদিন পরিপাটি হয়ে বুক খুলে বসে থাকে, শুধু আমার জন্য?
ওর স্বামীটা পরকিয়ায় জড়িয়ে খুন-টুন করে জেলে ঠেসে গেছে।ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। অন্য কোন ইনকাম সোর্স নেই বুক ও দরজা দুই-ই খোলা রাখতে হয়।আমিও চাকুরীর উপরি পয়সা উদগীরণ করতে মোবাইল অফ করে রেহেনার বাড়ি যাই।রেহেনার ঘামে ভেজা সুগন্ধির শেষ আমেজটুকু নিয়ে মাঝরাতে বাড়ি ফেরার জন্য পা বাড়িয়ে ভাবতে থাকি-এত রাতে আর বউকে বিরক্ত করবোনা। যুবতী হযে ওঠা কাজের মেয়েটি একে একে গেইট খুলবে, দরজা খুলবে…। আমি ভেতরে চুপচাপ ঢুকে যাব,ও চুপচাপ বেড়াল চোখে আমার দিকে চেয়ে থাকবে। আমি ভরা পেটে শুধু টক- মিষ্টি আচারটা চেখে ঘুমিয়ে পড়বো,তারপর আহ্- কি আয়েশি ঘুম!
টলতে টলতে বাড়ি ফিরি। গেইট খোলা। বউ দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে , দরজায় পাশে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে!প্রতিবেশিরা ক’জন হা-পিত্যেস করছে। সকালে কোচিং এ গিয়ে ইলেভেন ক্লাসে পড়ুয়া মেয়েটা ফিরে আসেনি।
আমার মাথায় মিলিয়ন ভোল্টেজ বাজ পড়ে স্কচ এর এক্টিভিটি উবে যায়।।
আমি দৌড়াতে থাকি কাছাকাছি পুলিশ স্টেশনের দিকে।সাধারণ নাগরিকরা যা থেকে দূরে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে কিংবা পারত পক্ষে যেতে চায়না।
পুলিশ স্টেশনের সামনে ভীড়। পার্ক থেকে কলেজ পড়ুয়া ক’টা ছেলে ধরা পড়েছে, ওদের পক্ষেই ছেলে ছোকরারা জড়ো হয়েছে ।
“পকেটে মাদক ঢুকিয়ে, মামলা করা চলবেনা”
“ছাত্রদের উপর পুলিশি হয়রানি বন্ধ কর, করতে হবে।”
ভীড় আর স্লোগান পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।
ছাড়ানোর সুপারিশে নেতৃস্থানীয় ক’জনকে ভেতরে কথা বলতে দেখলাম। সে যা হোক,এ নিয়ে আর আগ্রহ দেখালাম না,অন্যের ভালো-মন্দের ব্যাপারে গা না করা মানুষ আমি। তার উপর খুকির দুঃচিন্তায় আমার উত্তেজিত স্নায়ুগুলি ক্রমশ অনিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল ।
অত রাতে বড় সাব নেই, ছোট সাব গোছের একজনের সাথে অবশেষে কথা বলা গেল।
“কখন থেকে নেই?”
“সকাল থেকে, বিকেলে ফেরার কথা ছিল।”
“সকাল থেকে নেই,আগে জানাননি কেন?
“অপেক্ষা করছিলাম, যদি ফেরে!”
“রাত করে বাড়ি ফেরার অভ্যাস নাকি? আজ কেবল ফেরেনি,তাইতো?”
“না না,কোনদিন এমন হয়নি, কোচিং-ক্লাস শেষে রোজ বিকেলে বাড়ি ফেরে।”
“বয়ফ্রেন্ড আছে?ওর বাড়িতে নাইট শো করতে গেছে নাতো? মানে , বলছি বয়ফ্রেন্ডের সাথে সেক্সুয়াল রিলেশন আছে? ছোট সাহেব গোছের ওই কর্মকর্তা আমার উপর ঝুঁকে জিজ্ঞেস করলেন।
“না,নেই। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়েই আমি উত্তর দিলাম। ”
“হাত খরচ মেনটেইন করতে কলে-টলে যায়-টায় নাকি?এখনো অনিয়মিত তো, তাই ভাবছেন।”
“না না,কী বলছেন? “আমি যেন আত্মচিৎকার করি।
” না এ-ই, এভাবেই, প্রথমটায় যেভাবে শুরু হয়, তারপর এ লাইনে নিয়মিত হয়ে যায়। চিন্তা করবেননা, রাত শেষে ফিরে আসবে।” নাটকীয় ভঙ্গীতে দু মিনিট রুমে পায়চারি করে আবার টেবিলে ঝুঁকে পড়ে বললেন।
আমার মর্যাদাবোধে ঘা পড়ল। আমি উত্তেজিত হয়ে অফিসারের কলার ধরার মতো মানসিক অবস্থায় পৌছে গেছি, তবু নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে বললাম-কি বলছেন!
আমার ভেতরের অবস্থা সে বুঝতে পেরেছে মনে হয়। আমার মতো মানুষ ও পরিস্থিতি উনারা চরিয়ে খায় কিনা!
“আবাসিক হোটেলে রেইট করে ক’টাকে তোলে এনেছি। দেখুন তো এদের মধ্য কেউ আপনার মেয়ে কিনা!”
“কি বলছেন! আমাদের মতো পরিবারের মেয়েরা আবসিক হোটেলে যাবে কেন? “কথাগুলি খুব দৃঢ় আর স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে পারলেও
আমি কেমন যেন একটু দমে গেলাম। অফিসার আমার মুখের ভেতর তার আশঙ্কার সত্য সম্ভাবনার চিহ্ন দেখতে পেলেন?
“ওদেরও চেহারার কোথাও অনাভিজাত্যের ছাপ নেই। “তিনি বললেন।
সেন্ট্রি লক-আপ খুললে ওদের পোশাকে-আশাকে, অভিব্যক্তিতে আমি খুঁজলাম এদের কেউ একজন আমার খুকি কিনা। আশ্চর্যজনকভাবে আমার উপস্থিতি, ওদেরকে কোন লজ্জা বা অনুশোচনায় অধোবদন হতে দেখিনি।
নানা জটিলতায় সে রাতে আর জি ডি ই করা হয়নি। শেষ রাতের বাকিটুকু শহরের নির্জন রাস্তায় রাস্তায় খুকিকে খুঁজেছি, খুকিকে কেউ ফেলে রেখে গেছে কিনা! কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পেছনে নারীর ঝুলন্ত লাসের বিষয়টা আমার মাথায় ছিল, তাই শহীদ মিনারের পিছনটা তন্ন তন্ন খুঁজলাম। গাছে কেউ ঝুলে আছে কিনা দেখলাম। হতাশাজনক নিষ্পত্তির আশঙ্কা বুকে নিয়ে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে খোঁজ করে রেল লাইনের পাশ দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। পরিত্যক্ত পানির ট্যাংকির পেছন থেকে চাপা আর্তনাদ আর ধস্তাধস্তির শব্দে আমার পঞ্চ ইন্দ্রীয় স্তব্ধ হওয়ার যোগাড়। আমি মোটর সাইকেলের গতি কমাতেই দুটো লোক মেয়েটাকে ফেলে দৌড়াল। সম্ভবত টহল পুলিস ঠাওরাল ওরা।মেয়েটা আমার খুকি নয়, স্টেশনের ভাসমানদের একজন, এ বিষয়টা জানার পর আমি স্বস্তিবোধ করিনি বরং খুকির সঙ্গে পাশবিক কিছু ঘটে যাওয়ার অজানা আশঙ্কাটা বহুগুণ বেড়ে গেল।মেয়েটি কিছুটা প্রকৃতস্থ হওয়ার পর আমি তাকে নিরাপদ জায়গায় পৌছে দেবার প্রস্তাব করলে হয়তো সে আমাকে বিশ্বাস করতে পারেনি । আমার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টি ফেলে উল্টোদিকে দৌড়ে পালাল।
দুই
পুলিশ স্টেশনে পরের সকালটাও ছিল আমার জন্য অস্বস্তিকর, কেননা ডিউটি অফিসার ভিন্ন একজন হলেও, আমাকে প্রশ্ন করা বা তথ্য নেয়ার পদ্ধতি ও কৌশল ছিল অভিন্ন। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে আমি শেষ পর্যন্ত ডাইরী করে ফিরে এসেছিলাম।
আমি জি ডি ই এর আপডেট জানতে প্রায়ই থানায় যাই। নতুন সব অভিজ্ঞতা জমা হতে থাকে আমার মগজে। অফিসাররা আমার দিকে তাকান যেন আমি দুর্গন্ধ বাহক ভিখিরি। আমি একই বৃত্তের পরিধির ভেতর পাক খেতে থাকি-খুকিকে ফিরে পাবার চেষ্টায়।
কেউ একজন বলে,দন্ডমুন্ডের কর্তাকে বেষ্টনী দিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে রাখে যারা,তারাও কর্তাদের ক্ষমতায় ক্ষমতাবান। তাদের প্রভাব আর লম্বা হাত,চোর- পুলিশ খেলা,সাপ-লুডু খেলা থেকে শুরু করে জনগণের ভাতের হাড়ি পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে ।
কোন বিষয়ের বিহিত ব্যবস্থায় তাদের সুপারিশ নাকি ইনজেকশন পুশ করার মতো দ্রুত কাজে লাগতে পারে। আমার ঘোর তখনো কাটেনি-
মোসাহেব বেষ্টিত দন্ডমুন্ডের কর্তা।
অ্যালসেশিয়ান আয়েশ।
উড়াল সেতু।
রেহেনার ঘামে ভেজা সুগন্ধি।
আমি ঘোরের ঘোরে লাটিমের মতো ঘুরতে থাকি।
“দেখছি।”
“খোঁজ করছি।”
“কোন ক্লু পাচ্ছিনা।”
এ রকম কিছু কাজ এগোল।
“অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েটি মাসখানেক ধরে নিখোঁজ” বিষয়টা মানবাধিকার পরিপন্থি বলে মানবাধিকার সংগঠন গুলি আমলে নিল।
মানব বন্ধন,স্মারক লিপি পেশ,দফায় দফায় বড় কর্তাদের সাথে বৈঠক চলল।
পুলিশে তদন্তে এতদিনে একটা ক্ষীণ পথের দেখা মিলল।
বিশিষ্ট বিজনেস ম্যান ও পার্টি লিডার জনাব আহমেদের বখাটে ছেলে রবিনও শহরে লাপাত্তা। সেদিন সন্ধ্যায় দন্ডমুন্ডের কর্তা আসা উপলক্ষে যে মিটিং হয়েছিল তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন জনাব আহমেদ।
খুকির অপহরণের ব্যাপারে রবিনকে সন্দেহ করে আরো আলামত জব্দ করা হল।
যদিও আশাতীত কিছু নয়,পরিণতি ভালো-মন্দ যাই হোক,খুকির নিখোঁজ পরিস্থিতির কোন একটা নিষ্পত্তি মূলক সমাধানের দিকে যাওয়ার একটা সম্ভাবণা দেখছিলাম।
আমার অজানা কোন কারণে হয়তো, খুব দ্রুত পরিস্থিতিটা যেন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিই থ মেরে গেল। মানবাধিকার সংগঠনগুলি নতুন কোন ইস্যুতে মাঠে নেমেছে। ইস্যুর তো আর শেষ নেই! পুরোনো ইস্যু, পুরোনো ঘটনা নিয়ে পড়ে থাকলে হবে কেন? ভাবতে পারবেন না এমন অবস্থা আমার জন্য কি ভয়ানক হতে পারে, জনাব আহমেদের মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির ছেলে আমার প্রতিপক্ষ! যেখানে আমি একজন সাধারণ অফিস কর্মচারি। বুঝতে পারি খুকিকে খুঁজে পেতে একটা ইমব্যালেন্স যুদ্ধ করতে, কতটুকু অসমর্থ আমি। কিংবা মামলায় জড়ানো কতটা ভুল হয়ে হেছে! আমার খুকি না হয় গেছে, খুকির প্রায় সমবয়সী আর একটি মেয়ে আছে আমার। তার কিছু হবেনা তো?
সমস্ত পরিস্থিতি আমার প্রতিকুলে, খুকির ফেরার আশা ছেড়েই দিয়েছি, এই গুমট পরিস্থিতিতেই খুবই আশ্চর্য সেই ঘটনাটি ঘটল।
আগুনে পোড়া, গলিত দেহ, ছেঁড়া টুকরো, ছোপ ছোপ রক্তের দাগ, গলায় ফাঁসির চিহ্ন, যেমন আমারা নিউজপেপারে বা খবরে প্রায়ই দেখি পীড়িত, বিকৃত নারীদেহ, তেমন নয়।
আমার জীবিত খুকি ফিরে এসেছে!
আমার খুকিকে ওরা ফিরিয়ে দিয়েছে!
আমি,আমার স্ত্রী, আমরা চিৎকার করে কাঁদি খুকিকে দেখে।
ঝড়ে বিধ্বস্ত গাছগুলো কখনো বাঁচে,ডালপালা ছড়ায়,নতুন কুঁড়ি, ফুল-ফল হয়।
পোকা কাটা নেতানো পুঁই গাছও পুনঃরোপন এ কখনো বা সতেজ হয় ।
আমরা খুকির বাকরুদ্ধ মুখের দিকে চেয়ে থাকি,আশায় ।
পরিস্থিতি এখন অন্য এক মোড় নিয়েছে। খুকিকে ফিরিয়ে দেয়ার কৃতজ্ঞতা বোধ আমাদের ত্রস্ত করে রাখে।
প্রভাবশালী পৃষ্টতল থেকে চাপ অনুভব করতে থাকি।
“মেয়েকে ফিরে পেয়েছেন, মামলাটি উঠিয়ে নিন।”
“আপনার দ্বিতীয় মেয়েটিও কিন্তু বেশ!”
“কানপোনা, পুটি হয়ে রুই-কাতলা-রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে লড়বেন, পারবেন?”
“আপনার পক্ষে, সাক্ষ্য-প্রমাণ পাবেন?”
“অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই,যেন আর কোন মা-বাবাকে চোখের সামনে সন্তানের অন্তর্যাতনার কষ্ট সইতে না হয়। ” আমি এ দৃঢ় বক্তব্য থেকে সরে আসি৷
আমার ঘোর কেটে গেছে ।
আমি এখন আর দন্ডমুন্ডের কর্তার আগমণ উপলক্ষে হাততালি দেইনা, বগল বাজাইনা।
রেহেনার ঘামে ভেজা সুগন্ধী গায়ে মেখে বাড়ি ফিরিনা।
এখন আর ভাসিনা অ্যালসেশিয়ান আয়েশে।