আত্মহত্যা এবং অতিমানবীয় প্যাঁচাল
আত্মহত্যা বিষয়ক জমিনী কিতাবগুলো পড়ে যা পেলাম-তা হলো জীবন একটা কদবেল গাছ।
আর বেলতলায় বোকারা একবারই যায় ।
চালাকরা বহুবার গিয়ে বহুবেল পেয়েছিলো।
জগতের বাজারে তারা সেই বেল বেঁচে হয়েছিলো ধনকুবের।
যেহেতু জীবন আপনার পৈত্রিক সম্পত্তি, সেহেতু আপনি চাইলে যেকোনোভাবে মরতে পারেন।
অধিক আনন্দ কিংবা ভূয়িষ্ঠ বিষাদে মরে যাওয়াটা অতিউত্তম মানবিক সিদ্ধান্ত।
আর ইতিহাস খুঁড়লে যে কয়টি হাড্ডি পাওয়া যাবে, তাদের মধ্যে সে হবে সবচেয়ে সাহসী নাম।
তাই, নিঃসঙ্গ আত্মহত্যার চেয়ে আসুন আমরা গড়ে তুলি মরণ বিষয়ক যৌথ খামার।
ব্যক্তিগত আকাশ
আমার কোনো ব্যক্তিগত আকাশ ছিলো না।
তাই স্বপ্নের পরিসীমা বাহু আলোক কোরে দ্যাখানো হয়নি কোনো নক্ষত্রবীথিকে।
শুধু ঈর্ষান্বিত মশাল জ্বালিয়ে অন্ধকার রাতে দেখেছি সম্মিলিত আকাশ।
ভাদ্রমাসের গ্রাফপেপারে অগণিত চাঁদ রূপসী হয়ে ঝরে গ্যাছে বহুদিন
আমাদের সম্মিলিত চোখ সেদিনগুলিতে দেড়মিনিটের জন্য অন্ধ হয়েছিলো।
তাই দ্যাখা হয়নি কারো।
কেবল ব্যক্তিগত জানালা খুলে বিষাদপোকা তাড়িয়ে ছিলাম
ঘৃণার টুকরো টুকরো কয়েল জ্বালিয়ে।
নরকের সোনালী আগুনে ফাগুনের নম্রবাতাস
হঠাৎ জ্বলে উঠে বলেছিলো কবিরা দণ্ডিত নয়।
তারপর বহুরাত কফির বদলে গিলতে চেয়েছিলাম কবিতার রস।
ঈশ্বরের মতো রাঙা চোখে তাকাতেন আমাদের মাতারা এবং পিতারা।
এখন অবশ্য ওসব নিয়ে ভাবিনা, বড়জোর নিঃশ্বাস বদল করি নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে।
ব্যক্তিগত আকাশ এখন নির্মানাধীণ পথে।
প্রার্থনা
কি চাইছো তোমার ঈশ্বরের কাছে?
স্বর্গ? নরক? নাকি আমাকে?
ঈশ্বর কি বললো? তোমাকে দিবে?
তোমার ঈশ্বর তো অন্ধপয়ারের মতো দুর্গম!
তার চোখে-কানে-হৃদয়ে ঝুলে থাকে বন্ধতালা!
তোমার ঈশ্বর তো হিংসুটে!
তোমার ঈশ্বর তো ছেলেমানুষ!
খুব নাবালক।
ঈর্ষার বাগানে বসে কুড়ায় প্রলুব্ধ লোলুপ ফল।
তোমার ঈশ্বর তো আমাকে ঈর্ষা করে!
গোপনে বিছিয়ে রাখে অভিশাপের ফাঁদ
তোমার ঈশ্বর তো দেখা হলেই আমাকে গন্দম খেতে বলে।
ভালোবেসে আমি হাতে নিই গন্দমের ঝুরি।
বিনয়ে খাই, কামড়াই, খেলি, ছড়াই এবং ঢিল মারি গন্দমফল।
ছুঁড়ে ফেলা গন্দম গিয়ে বাজ হয়ে পড়ে ঐ পাতানো স্বর্গ এবং নরকের মাঝখানে।
গন্দমের আঘাতে নষ্ট হয় স্বর্গ
আরো নষ্ট হয় সুসজ্জিত রঙের পর্দা!
পবিত্র দেবীগণও নষ্ট হয় ঢের!
নরকেও তাই হয়, খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমি গন্দম খেতে খেতে ফিরে যাই
যেতে যেতে গান গাই গন্দমের সুবাস রটিয়ে।
দিনশেষে তোমার ঈশ্বরকৃপণ, ভয়ানক পাষাণ।
আমাকে রেখে আসে হাবিয়া দোজখে।
আমি দোজখে বসে আগুন পোহাই
ওম দিয়ে শুকিয়ে নিই আমার শীতার্ত হৃদয়।
তারপর…
অনাবিল ঘুম উড়ে আসে চোখের তারায়
আমি বিরহ পান করে ঘুমাতে যাই,
বিরহ বিষাদ লাগে, নিঃসঙ্গতার মতোন।
তবু টলতে টলতে শুতে যাই বিছানায়
অথচ, শুতে গিয়ে পৌঁছে যাই তোমার ঈশ্বরেরই কাছে।
ঈশ্বর বুকের দরজা খোলা রাখে
আমি প্রণয়ের জলে অযু করে ঢুকে পড়ি কৌশলে একা।
নিথর হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি সেখানে।
তোমার ঈশ্বর আমাকে বুকে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় বিবাদের, অবসাদের, আর বিব্রত নরকের। ঘুমন্ত ‘আমি’কে বুকে ধরে জেগে থাকে তোমার ঈশ্বর!
অনন্তকাল ধরে জেগে থাকে একা, ভিতরে আমি পাপিষ্ঠ, নাক ডেকে ঘুমাই।
এভাবে এক জীবন বিসর্জন দিয়ে তুমি
কি চাইছো তোমার ঈশ্বরের কাছে?
স্বর্গ?
নরক?
নাকি আমাকে?
তোমার ঈশ্বর কি বললো?
‘আমাকে’ তোমার ঈশ্বর তোমাকে দিবে?
ক্ষুধার্ত লাটিমের বয়ান
ক্ষুধার্ত লাটিম হয়ে ঘুরতে ঘুরতে আমরা হঠাৎ থেমে যাই
হাত থেকে মাটি, মাটি থেকে হাত
যেভাবে দিন ঘুরে রাত, আর রাত ঘুরে দিন আসে!
অতিরিক্ত অংগের অভাবে আমাদের পুরোটাই শরীর, পুরোটাই ললাট
আমাদের ললাট বেয়ে ক্রমশঃ বেড়ে ওঠে দড়ি
শরীর পেঁচিয়ে নিক্ষেপ করা হলে আমরা অবিকল্পসুখ নিয়ে ঘুরি
এবং ততক্ষণ সচল থাকি।
এখানে যে-কেউ আমাদের ঈশ্বর হতে পারে বিনাদ্বিধায়
যে-কোনো সময় আমাদেরকে ঘোরাতে পারে যে-কোনো ঈশ্বর।
পরিত্যক্ত গোধূলির মতো আমরা নিরুপায়,
পরে থাকি মাটিকে আঁকড়ে ধরে
আমাদের পা নেই, হাত নেই, চোখ নেই, নোখ নেই
তবু আমরা ঘুরতে পারি!
শুধু ছুঁড়ে ফেলার মতোন প্যাঁচালো আঘাত পেলেই ঘুরি
মূলত ওটুকুই আমাদের গর্ব!
ওটুকুই আমাদের লজ্জা!
আমরা কোনদিন কোন ঈশ্বরের নাগালের বাইরে যেতে পারিনি
কিংবা ঈশ্বর ছাড়া আমরা নির্জীব।
আমরা পরিত্যক্ত হতেই পছন্দ করি
কেননা আমাদের কোনো নিজস্ব বোধ এখনও জন্মায়নি অথবা নেই…
দৃশ্যের দ্রষ্টব্য
সেখানে আপনাকে আর আমাকে দেখা গিয়েছিলো শেষদৃশ্যে।
খোদার কসম, মা কালীর দিব্যি, বিশ্বাস করেন হে ঈশ্বর!
স্বর্গে যাওয়ার পথে আমি ভুলে ঢুকে গিয়েছিলাম সিনেমা হলে।