তরুণদের কবিতার একটা ইতিবাচক দিক নিশ্চই থাকে আগামীকে প্রভাবান্বিত করার৷ সেই আশা নিয়েই ২৫ কবির ২৫ কবিতা গ্রহণে “কিংবদন্তি” সম্মত হয়েছে। এখানে অনেকের কবিতায় বাস্তবপ্রসূত কবিতানুভূতি যে ইমেজ তৈরি করেছে তা শিল্পসুশোভিত। এত জনের কবিতা একত্রকরণ করতে গিয়ে একটু কষ্ট হলেও যা পরবর্তীতে বুকের ভেতর সুপ্ত রেখেছি উৎকৃষ্ট ফল ভেবে।
সাদিক সত্যাপণ
যেভাবে মঙ্গল
সর্বদা বিজ্ঞানের চোখে
দেখলে চড়ুই
ঝরে যেতে পারে পালক
ভেঙ্গে যেতে পারে ডানা
কেননা,
মানুষের মধ্যে যে চড়ুই
পুরোটাই তার
বস্তুগত কোনো
চড়ুই তো না;
সর্বদা বিজ্ঞানের দ্বারা
আলব্ধ চড়ুইয়ের
খন্ড খন্ড ধারণা
ক্রমশ গড়ে তোলে
চড়ুইয়ের মতো, আবছা
আরেকটা চড়ুই
সেহেতু,
হৃদয়ে চড়ুইয়ের
পারস্পারিক ক্রীড়া—
অবিরাম ঘটতে দেওয়া ভালো।
শ্বেতা শতাব্দী এষ
অপার
তুমি অনেক ভাবেই বলতে পারো
ভালো বা খারাপ থাকার কথা
তবু ভালো হয় কিছু না-বলা
মাছের চোখে যে কথা লেগে থাকে
আমরা বাড়িতে এনে শুনি না সেসব
নদীর গন্ধ নিয়ে রোদ চলে যায়
লাল হয়ে উড়ে উড়ে একা একা
তামাটে ত্বকের নীচে অনিচ্ছার অসুখ
তোমার না-বলাই ভালো
বিগত দিনের স্মৃতি মৃত জবাফুল
রক্তের ভেতরে রেখো জলপ্রপাত
ভাসিয়ে দিও সব—থাকা না-থাকা।
ইয়ার খান
অ্যাবসার্ড
একা একা নিত্য প্রধানের নিচে
যা কিছু মানতে কষ্ট কিন্তু সত্য
ধরো তাই অদ্ভুত, পুরাই ভূত
যেমন চাঁদের দিকে বামনের হাত
শরীরের সাথে হৃদয়ের সংঘাত
কিবা অনাবিল আকাশ ওড়া শেষে
ডানা থেকে সদ্য মুক্ত পালকের
প্রকৃত মুক্তির স্বাদ নিয়ে
একদম ধিরে সুস্থে মাটিতে পড়া
অদ্ভুত লাগে, অদ্ভুত জীবনের সব বলা চলা
তার চেয়েও আরো অসম্ভব অদ্ভুত লাগে
এই আমার নিজেকে ফাঁকি দিয়ে
কেবল তুমি আর তোমাকে ভালবাসা
পার্থ মল্লিক
ঘর ছেড়ে একদিন
আমি জানি, আমার দ্বারা হবে না ঘরে থাকা
নদীকে কথা দিয়েছি, তার সঙ্গে বেড়াত যাব একদিন
কুয়াশায় পা ভিজিয়ে চায়ের সাথে চিবিয়ে খাব টোস্ট
আমার ছিল একটা সবুজ রঙের জামা— এই যেমন ছাতিমের ছায়ার মতন
পাখির পালক পড়ে থাকে আমার ঘুমের ভেতরে আজও;
যতদূর গিয়েছি আমি, কোনো এক ভৈরবী সুরের পেছনে
ততদূর দুপুর আমার— হাতখরচের জন্য ছিল কিছু গান
নীল রঙ, নীল রঙ আকাশের— হঠাৎ হাওয়া এসে
ভুলিয়ে যায় সব নাম
সব কথা লিখে যাব, একদিন আমিও চেয়েছিলাম।
খালিদ হাসান ঋভু
কথাশূন্য পৃথিবী থেকে
কে বিশ্বাস করে তোমাকে
নত হয়ে থাকা হাঁটুর ভাঁজে—
অতি উজ্জ্বল হয়ে আছে
বিনম্রতা। তবুও তোমাকে—
কেউই বিশ্বাস করে না—
এই দিকহীন পাঁজরের হাড় চেটে
খেতে খেতে— তুমি আমি যতদূর
ভেসে যাবো অন্ধের মত, ততদূর
ক্ষতি হোক। বিগত জন্মের মতো
আরও গাঢ় স্বরে যদি ডেকে আনি—
আমার আত্মাকে— তোমার আত্মার
কাছে, আমাদের পরস্পর বিমুখতায়—
এই চোখ, এই দেহ আমি রেখে যাবো—
গৃহ সজ্জায়, আর জড় সমাধিতে।
মুহিন তপু
র ফিলিংস
ঘোরের বৃত্ত ছাড়িয়ে যতদূর যাই, তত কাছে আসে যেন জলপাই বন।
বনে বনে চুকা চুকা হাওয়া, ঘন ঘন করে আসা যাওয়া।
যেন জিকিরের হল্লায়, ধ্যানের ওপর পড়েছে, কামনার আছর৷
আছরে পুরোপুরি পেয়ে গেলে ইশারার ধ্বনি,
জমে ওঠে আসর।
পাখীদের ঠোঁটে ঠোঁটে বেজে ওঠে উল্লাসের বিউগল।
ক্লোস শটে, দুটী পাখী একই ডালে আয়োজন ছাড়া চুমু খায়।
দৃশ্যায়নে লং প্লে
ঠোঁটের ওপর ঠোঁটের পরশ …
ঘোরের বৃত্তের ভেতর যতকাছে আসি,
তত দূরে যায় জলপাই বন।
বৃষ্টি তাগড়া দিয়ে আসে।
ঘর চেনার আগেই, ভেজা ভেজা কাঁপুনিতে
ঘোর কেটে যায়। কালাজ্বর নিয়মমত হাজিরা জানাতে আসে।
হিম ঋতব্রত
জলের ভেতর জলপরী
সময়কে বুকের কোটরে রেখে ভোরবেলা নদীতে নেমে কাছিম সাঁতারে ডুবে থেকে
দেখে নিও অতল শ্যাওলার আরও গভীরে কিভাবে হাসেখেলে জলপরী দল। তাদের রঙীন দেহে জামা ছাড়া সুষম বুক বেয়ে নেমে গেছে যে নাভিরেখা একটি কূপের দিকে; তার নিচে কী সুন্দর হেলেদুলে নাচে আঁশের পোশাকে ঢাকা আদুরেলেজ। লেজের ভেতরে মাছের কাঁটার মতো সাজানো হার।
আহা জলপরী! আহা সুন্দর জলপরীরা! জল স্নানে, জল ডুবে তাদের কাছেই যাও। ডানার প্রাণী তুমি, ইচ্ছে হয় মাছ ভেবে ভেজে খাও; কখনো সঙ্গমে যেও না!
জেসিকা আক্তার জেসি
ঘনসন্ধ্যা
আধখানা চাঁদকে পাহারা দিয়ে রাখি।ঘনসন্ধ্যায় স্মৃতির পৃষ্ঠা উল্টেপাল্টে দেখি একটি বির্মষ গোলাপ আত্মহত্যা করে কঙ্কালসার হয়ে আছে।দীর্ঘ প্রেমের পরে দীর্ঘ বিরহ নিয়ে চেয়ে থাকি স্মৃতির দুয়ারে।আরও পাতা ঝড়ে পড়ুক আরও বৃষ্টি হোক এবঙ আমরা আরও দূরে থাকি।এমন হওয়ার কথা ছিলো না।দারিদ্র্যের পাশে প্রেম ও কাম নিষ্ফল মনে হয়।সবকিছু ব্যর্থ মনে হয়।
তবুও আঙুরের বীজ বপন করেছি আমাদের হৃদয়ে।চুমো খেতে খেতে গান করেছি পৃথিবীর সুন্দরের।আরও কাছে এসে দিন ও রাত্রির মাঝখানে দাঁড়িয়ে সৃষ্টি করেছি একটি ঘনসন্ধ্যার__
রিদওয়ান নোমানী
জীবনযাত্রার পথে
জীবন ছাড়েনি তবু পলেস্তারার মত খসে যায় অস্তিত্ব। নাকচের বারান্দায় কত ফুল ঝরে যায়। তার কোনটা হলুদ।
এমনই জীবন যার অর্ধেক যায়
বাবার পকেটে আর অর্ধেক নিতান্তই ভুলে।
তবুও তো ঝরে পড়া ফুলের কথা ভাবি?
শেষ আশ্রয় খুঁজে কারো কাছে যাই।
টিকে থাকার লড়াইয়ে সবাই-ই সমবয়সী।
যেন এক একজন ক্লাসের রোল কলের মত আগাই।এবং জানি এমন করে আগাতে আগাতেই চলে আসবে হাসরের ময়দান।
আর
পুলসিরাত পার হওয়ার ভয়েই কেটে যাবে গোটা জীবন।
নাফিস রাশান
কোনো কিছুরই কোনো মানে নাই
কোনো কিছুরই কোনো মানে নাই লাগে
ধরেন,
কোনো একটা নিয়ম ভাল্লাগে না
তখন সেই নিয়ম কেমন হইলে পছন্দ হইতো তা চিন্তা করতে থাকি
চিন্তার যাত্রাটা খুব আরামদায়ক তা না
খুবই চিপা মারা পথ এইটা
তোয়ালে চিপার মতো
মাঝেমধ্যেই চিন্তা কইরা ফলাফলে পৌছাইতে পারিনা
তখন ছটফট লাগে
আমি হাত বাড়াই কোনো মনিষীর দিকে
কিন্তু সকল সময় আমি তাদের থেকেও সাহায্য পাইনা
অমীমাংসিত চিন্তার মতো যন্ত্রণা আর কিসে আছে যখন মীমাংসাই আপনার লক্ষ্য?
আমি মীমাংসা খুজি
আমার উপশম হিসাবে তখন সামনে দাঁড়ায়;
কোনো কিছুরই কোনো মানে নাই।
এইভাবেই প্রতিনিয়ত পলায়নপর মানসিকতা সম্পর্কে আরেকবার জ্ঞান লাভ করি।
রিফাত বিন নুরুল
চিত্রোপম
ঢের দস্তখৎ অথবা যথাযথ খরচের
সংবিৎ হারানো, রাং। কাগজের হোক
অথবা যেভাবেই থাকাকালীন বরং
হরগুলো সাঁজাই। দেহের কান্ড করা,
প্রচুর সরবরাহ করে একমত হওয়াকে
যখন পশুপাখিদের মধ্যে একজোড়া
স্ত্রীপুরুষ একটি
অসীম নন্দন
শত্রু ১২
এতটাই অসম্ভব–
আর এতটাই আপন যে
শত্রুর মুখের মতো লাগে,
যেন এক বৈশাখের শেষে
ফল পরিপক্ব হবার মতন তাপ।
এদিকে একলা মৌসুমের শেষে
আরো যেন সবুজ প্রভাব;
বিকেলের ঘরে বাতাসের ভীষণ প্রতাপ,
যেন ঝড়ের মতো মেঘে মেঘে বিদ্যুৎ;
আর যাকে বন্ধু বলে জানি
সেই মসৃণ ছায়াতেই
লুক্কায়িত থাকে হিসহিসে
বিষধর কালসাপ।
আমরা সবাই বন্ধুর মতন
খুব বন্ধু হয়ে ঐসব ঝড়ের রাতে
খুব নিভৃতে জোঁকের মতো
এক্কেবারে ভ্রুণ-শিশুদের মতো
একজনের রক্ত অন্যজন করেছি পান।
ভ্রুণ-শিশুরা যেমন মায়ের রক্তে হয় বলীয়ান
ঠিক তেমনি বন্ধুর বিশ্বাসে শত্রুর মতো
ফিরে পেয়েছি আত্মবিশ্বাস;
বিগত বসন্তে যা ছিল বিস্মৃত।
নস্ফোদ্র দিলাওয়ার
উড়াল বাছুর
কারা যেন আমার মাংস ছিঁড়ে খাচ্ছে; কারা যেন─ কী নিপুণ ঘরোয়া পরিবেশনায় কুঁচিকুঁচি করে, কারা যেন হায়! চারিদিকে উত্থিত শিশ্নের মহড়া; কোনঠাসা যোনীর গোঙানি, যেন রাও নেই; যেন ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে কারা; কারা যেন হায়─ খাড়া হয়ে যায়, প্রতিটি বাছুরের ডাক মহাকাল ধরে─ প্রতিটি মুখ থেকে ফুলকি ফুলকি হয়ে বের হয় ভাষার অন্তরজ্বালা; হালা হয়ে যাই। খুব কৌশলে হাওয়ার গিঁট খুলে ভিতরে ঢুকে পড়ি সংগত কারণেই আজ শুক্রবার─ বারুদের মুখোমুখি হই।
থির হয়ে যাও যেমন প্রতিটি ছিদ্র
হতে বের হয় মনোগ্রাহ্য সুর──
পৃথক হয়ে যাও ছুরি আর বাছুর
থেকে কেননা বোকাচোদা বনে
যাবে অতীতে বহুজন গেছে ঝরে,
বহু খুন── ফলে তারা পবিত্র!
প্রতিটি সময়ের কসম তারা ফলত
খুব মাংসভোজী কারণ ঐতিহ্যের
কথা তুললে-ই ধারালো অন্ধ হয়ে
যায় স্তর!
নাফিদা নওরীন
চা
একটা ফোন কলের অপেক্ষার মতো বিকালে
শরীরে বিগত জ্বরের ইতিহাস নিয়া বইসা থাকি অলস।
এই সময়টায় আমি বকুল ফুলের ঘ্রাণ পাই ভীষণ রকম!
সাথে আরও কিছু শরীরী ঘ্রাণ হাতরাইতে থাকি,
যা নিয়মিত পাবার কথা ছিল না।
তারপর টুপ কইরা সন্ধ্যা নামলে আমি চা বসাই চুলায়।
চাপাতি ফুটতে থাকে আর ঘ্রাণ ছড়াইতে থাকে,
চায়ের ঘ্রাণ অন্যসব ঘ্রাণরে ঢাইকা ফ্যালে দ্রুত।
নিজেরে আমার মাতাল মনে হয়!
একটা টোস্ট বিস্কুটের হাহাকার নিয়া চায়ে চুমুক দেই
চা একটা দারুন এস্কেপ কিন্তু!
ভুলায়ে দিতে পারে সমস্ত চুমুর আক্ষেপও,
হায় খোদা, আমি তো চায়ের পাতিও হইতে পারতাম!
শাশ্বত লুব্ধক
অন্তরাল
আমাকে কেউ দেখছে না কিন্তু সবাইকে দেখছি।
বৃদ্ধ ময়লার ভ্যানকে বৃদ্ধতর চালক বিরক্তি নিয়ে টানছে
সবাই স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেলেও বর্ণমালা ভোলেনি,
গাছেদের পাতা মুছলেও বিশুদ্ধ হবে না বাতাস।
হানিকর হাওয়ায় – গাছ কেটে চলছে কাগজের কারখানা;
অভিজ্ঞ কচ্ছপ নিজেকে বোকা ভাবছে
ডিপ্রেশনে ডুবে আছে এফিশিয়েন্ট কেঁচো
সৃজনশীল বাবুই হ্যাসেল কালচারে খাবি খাচ্ছে
দেখছি পৃথিবীর জ্বর, আমাকে কেউ দেখছে না।
নিঝুম খান
নপুংসক
ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে
যে মানুষটি মিছিলে নেমেছিলেন, একা
শুধু এইটুকু বোঝাতেই যে
জ্বালানি তেলের দাম এখনও বাড়েনি
তাঁকে জনসম্মুখে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এই শীতের শহরে
আমি যেন এক বিচ্ছিন্ন দর্শক
সানন্দে পোহাচ্ছি সেই আগুনের ওম।
শুভ চক্রবর্ত্তী
হারিয়ে যাওয়া সহজ নয়
হারিয়ে যাওয়া সহজ নয় কখনো। পৃথিবী এক পাখির চোখের ঘর- আফ্রোদিতির প্রেমে পড়ে ঝিনুক ভুলে গেছে তার ঠিকানা, তবুও পড়ে আছে পায়ের নিকট।
হেমন্তের শেষ দিকে তোমার জানালায় এক কুকুরের গোঙ্গানির শব্দ বলে যায় তোমার নিকট আশ্রয়ের কথা। তুমি জড়িয়ে ধরে আছো জানালার গ্রিল – কুকুরের গোঙ্গানি তোমার কাছে শুধুই মনে হয় মতিভ্রম।
আমাদের বসতঘরে উপর নীচের দেয়ালে মধ্যবর্তী যে শূন্যতা সেখানেই থাকে আয়না। আয়নার মাঝে হারিয়ে যাওয়া পরিপাটি বসে থাকা দেখি আমারই প্রতিচ্ছবি।
হারিয়ে সহজ নই তো!
ছোট্ট শিশু যাচ্ছে দূরে,
মা বলছে যাক না-
মায়ের কাছে আছে চাবি, ফিরিয়ে আনবে তার ময়না।
ওয়াসিফা জাফর অদ্রি
ইঁদুরের গর্তে বাবা
ইঁদুর আমাদের কাপড় কেটে ফেললে
বাবা ইঁদুর মারার বিষ আনতেন,
মা সাদা ভাতের সাথে সেই বিষ মাখিয়ে রাখতেন ঘরের আনাচে কানাচে।
বিষমাখা ভাত খেয়ে আধমরা ইঁদুরগুলো হাঁপাতো,
আর তাদের বুক এত জোড়ে ধুকধুক করতো
যেনো হৃদপিন্ড বেড়িয়ে আসবে এখনই।
আমি পানি নিয়ে দৌড়াতাম ইঁদুরের পেছনে,
ওদের পানি খাওয়াতে।
বাবা শেষবারের মত অসুস্থ হয়ে পড়লে আর
তার বুক জোড়ে জোড়ে ধুকধুক করলে,
মনে হচ্ছিলো যেনো হৃদপিন্ড বেড়িয়ে আসবে এখনই।
মা পানি নিয়ে দৌড়াতে থাকে বাবার পেছনে
তাকে শেষবারের মত পানি খাওয়াতে।
বাবা, তুমি কার কাপড় কেটেছিলে?
সাদাফ আমিন
প্রত্যাখান
তোমার খোঁপায় উঠব উঠব করে
প্রত্যাখান করেছি বাসর
প্রত্যাখান করেছি কবর
মসজিদ মন্দির পূজো পাঠ
প্রদর্শনী, রাজনীতির মাঠ
প্রত্যাখান করেছি অভিনন্দন।
তোমার খোঁপায় উঠব উঠব করে
প্রত্যাখান করেছি ঘরবাড়ি
বনভূমি, নদীর চর, বাগান
প্রত্যাখান করেছি সুগন্ধি
পোশাক, জুতো, ডানা
আত্মীয়, তাবিজ, দুনিয়াবি বন্ধন
প্রত্যাখান করেছি বাগান
হাওয়াতে ঝরাপতন।
উঠব উঠব করে
প্রত্যাখান করেছি বোঁটা
হৃদয় থেকে হৃদয়ে
মানুষের দুনিয়ায়
এড়িয়ে গেছি ভীড়,
জলে ডুবে ভিজে
প্রত্যাখান করেছি স্রোত
নৌকা ও নদীর।
খাদ্য নাই
টাকা নাই
ঘরমাটি নাই
পঁচব না কী প্রতিদিন?
বুদ্ধি নাই
চাকরি নাই
ভাতা নাই
প্রত্যাখান করেছি ঋণ।
প্রত্যাখান করেছি ঘরে ফেরা
বুকে ঢেউ আসে ফের
ভেসে ভেসে
তোমার খোঁপায় উঠব উঠব করে
হয়েছি একাকী ফুল
কাগজের।
জোবায়ের দুখু
খোয়াবনামা
খোয়াবে মধ্যকর্ষ বৃক্ষবিহীন পাতা
পালকে পালকে আহত ক্রোমোজোম।
তুমি সর্বদা চেয়ে থাকো পূর্ব পশ্চিম পবনে। রবির অপেক্ষায় আলোকের খোঁজে।
হতাশার চাদর গুমরাইয়া গুমরাইয়া ঘুমাই নিহত হৃদয়ে। স্পর্শ কাতর যতো বেদনাবোধে।
তুমি কথা কও, যেন হ্যামিলিয়নের বাঁশি বিষণ্ণতার সুর তোলে খোয়াবনামার ফাঁকেফাঁকে। তুমি পাখি অথচ পালকহীন। কোনো বৃক্ষ হারা ঝরা পাতা।
তন্দ্রাহীন গভীর নিদ্রাবেশে তোমাকে খোয়াবে দেখাও একটি বিষাদ চিহ্ন।
সুপ্রিয় সাহা
এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন
পোপ ত্রয়োবিংশ যোহনের সমাজ
নুড়ি কুড়াই
জীবনের
সপ্তম শ্রেণিতে যার রিপিটেশন : নেমেসিস
শয়তানের গায়ে পাথর ছোড়ার মতো করে
ছুড়ে দিই শেষ সম্বল
জোটে সারমাদ-ভাগ্য
ইটারনাল রিকারেন্স শিখি
হয় রোমান্টিক রেভিলিউশন
স্বপ্নের আবাদি বাধাহীন
যুদ্ধের প্রস্তুতি
অন্তহীন
সেইন্ট মাইকেলস প্রাইমারি স্কুল
তোমার সাথে প্রথম দেখা..
একটি হন্টেড হাউজ
দৃষ্টি আকর্ষণের বিচিত্র মেনিফেস্টো
তুমি তো প্রথম দেয়ালপত্রিকা আমার
ভালোবাসিনি ফুল
তবে স্মৃতিচারণায় ভালোবেসেছি
ও আমার প্রথম স্কুল
আমাকে চেনোনি তুমি
ডাকোনি কোনোদিন কাছে
অথচ জানোনি, প্রতি বছর নির্ধারিত সকালে তোমাকে দূর থেকে দেখি
আর দেখি গভীর জ্বরের স্বপ্নে
সবচেয়ে স্পষ্ট
তোমার সংস্পর্শে আমি যাই সবার অলক্ষ্যে
স্বীকৃতির সাথে কর্তৃত্বের সম্পর্ক জেনে
বজায় রাখি প্রাগৈতিহাসিক দূরত্ব
ডাইনোসরের মতো সুবিশাল
ফুলকুঁড়ি, আজ পা তোমার কততম সংখ্যায়?
নাকি এখনো তুমি ঝুঁটি বাঁধা পাঁচ বছরের মেয়েটি?
চালনা বাজার সরকারি আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়
বিশ্বাস করো, এক বিন্দু পরিমাণ ঘৃণাও যদি
আমার মধ্যে অবশিষ্ট থাকতো
তবে আমি তোমাকে নিয়ে লিখতাম
একশ’টি ট্র্যাজেডি, অনন্ত মহাকাব্য
আমাকে ক্ষমা করিও, আর বিশ্বাস করিও
আমি বিশ্বাস করি ফিরে আসায়
ফিরে ফিরে আসায়
বারবার
চক্রাকার
মোহাম্মদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়
এই মহাবিশ্বে একটি আলয় আছে’
তার নাম তাবৎ পৃথিবীর গোচর নয়
অথচ সেখানে কেটেছে আমার একটি কৈশোর
একটি প্রথম প্রেম, একটি প্রথম সিগারেট
একটি প্রথম চুমু, একটি প্রথম মৈথুন
সেখানে দেখা যেত বিস্তৃত মাঠ
অন্তত আমাদের ছোট পায়ে তাই-ই
অন্তরঙ্গ জ্যেষ্ঠ, স্নেহময় অনুজ
ছিল শাসন, ছিল ক্ষমা
সুদৃশ্য ইউটোপিয়া
উৎসবের আয়োজনে ছিল একটি প্রথম ছোঁয়া
আমরা দেবশিশুর মতো শুভ্র বসনে
ঘুরে বেড়াতাম প্রান্তরময়
কথা হতো বিষ পিঁপড়ের সঙ্গে
সেখানে ছিলাম আমি এবং আমরা
হঠাৎ স্বর্গীয় গোলযোগ আলাদা করে দেয় আমাদের
তারপর বহুদিন, বহু বহু দিন, বহুকাল
পা ভেজেনি তার ঘাসের শিশিরে
ভুলে থাকার ভানে পার করেছি এক বরফযুগ
তবু আমার বিশ্বাস, তার প্রতিটি বালুকণা চিনে ফেলবে আমাকে
আমার আশঙ্কা, তার কাছে গেলে আমি বারো বছরের বালকটি হয়ে যাবো
তুমিও!
চালনা এম এম কলেজ
তবে কি স্বপ্ন থেকেও দূরে চলে যাবে?
একটি মাত্র স্থান আমার
সারিয়েল ল্যান্ডস্কেপ
বাস্তবতার বহুবিধ পাঠে
আমাদের দূরত্ব তোমার বাড়ির উঠান সমান
তবে মহাকাল জানে
এখানেই আমরা ভ্রণাবস্থার সবচেয়ে অপরিণত দশায় ছিলাম
এইটুকু জেনো
বাকিটা জানুক বিশ্বশান্তি আর জাতিসংঘ
তাতেই চলবে কিংবা স্থির রবে আমাদের শীতনিদ্রা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফাকিউ
সুবাইতা প্রিয়তি
মৃত্যু-পুলক
শরীরের সবচেয়ে আবেদনময় কেন্দ্র হলো
মরে যেতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষাগুলো,
আর এই হন্তারক শরীরেই আজন্ম বসবাস।
আত্মঘাতী দু’হাতের চেয়ে আর পবিত্রতর কী?
(উপকারী, সহায়ক একজোড়া হাত)
মানব কত সংঘাতময় যে কান্নাকে সমর্থন করে
অথচ, প্রেমহীন মৃত্যুকে শিকার করে ফেলে!
আমাদের আনন্দ, আমাদের মৃত্যু;
প্রবল উচ্ছ্বাসের যতো মৃত্যু—
মিইয়ে যাওয়া কামনার দাগ’র মতো মৃত্যু
আর কিছু চাওয়ার
থাকতো না স্রেফ কয়েক সহস্রবার যদি শরীর
ছুঁয়ে যেত মৃত্যু; এই প্রাণ মূলত এতো পুলকের
আধিক্যে বিধ্বস্ত।
এতো বেপথুমান, নির্মূল হতে পারে যে কখনোও
এতো অসহ্য রোমাঞ্চ তবু মিলিয়ে যাবে স্বেদকণার মতো।
অজ্ঞাত পরিণামের চেয়ে তাই মৃত্যু ভালো।
রক্তিম রাজিব
ইতিহাসের পৃষ্ঠা সংখ্যা, ন্যূনতম দুই…
যখনই চিন্তার বাজারে হাঁটতে শুরু করি, দাপটের সাথে ক্লান্তিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তখন কি আর লেখা হয়! আমাদের তো দমের সাথেই কেটে যায় নহর। যে বহর বহর আমলা করে ডুব দিয়ে যায় অঘোরে।
অতিরিক্তের হিসাবে নিজেকে যখন বাজার ধারণায় আঁটানো যায় না তখন থেকে পথ ধরে ফেলে হয় বিলাতের; স্বাচ্ছন্দ্যেই বসে যায় এম্বাসিদের মহান খাট। এ দণ্ডে খেই খাবেন— তবে তার আগেই বুঝে যাবেন হালকা কিছু আচ্ছাদন। আমাদের বিষয়টা ছিল বাস্তবের সাথে— শুরুটাও হয়েছিল জাদুর। তবে আদুর ব্যাটা ঘরে ফিরে গেছে বলেই আমাদের কোল থেকে বেড়িয়ে যায় গরানের। আর শ্মশানের পথে হ্যাবলাদের ছাগল।
এভাবেই আমরা পৌঁছে দাঁড়াই, খেই হারিয়ে দণ্ডের সমান…
সুমাইয়া নূপুর
সংসার সমাচার
আব্বা মূলত একজন সূর্যমুখী কিংবা
লতানো মিষ্টি কুমড়ার ডগা, দায়িত্বের পাতানো জাংলায়।
পথ যেদিক এগোনোর মনোবল নিয়ে ডিঙিয়ে যায়।
এই জাংলার নিচে মা পেতেছেন সংসার,
আব্বা দিলেন শেকড়, মা দিলেন ফুল, ফল!
ভাই বোন তিনজন একই বীজের ফসল!
দুই
বাজার ফেরত আব্বা, হাতে লাল ব্যাগ—
মুখে সমস্ত দুঃশ্চিতার ফ্যাকাশে প্রলেপ!
মা হাসিহাসি মুখে দেয় আশ্বাস—
ব্যাগ ভর্তি দামাদামির দীর্ঘশ্বাস।
তৃপ্তির আহার শেষ, ভরে উদর থলি, ঢেঁকুর তুলে বলি—
আব্বার দীর্ঘশ্বাস, বড়ই মুখরোচক খাদ্য!
হাসান রাকিব
খোয়াব
হরিদাস লেনের ঘুপচি বাড়িটায় চুয়ান্ন বছর কেটেছে!
উচু উচু দালানের মাঝে নুয়ে পরা বাড়িটা –
অনেকবার আপনার আফসোস শুনেছি,’বাড়িতো নয়;কুয়ো একটা’
কাকগুলোও এখন চিলেকোঠায় ভিড় জমায় না,জায়গা পাল্টেছে।
ভ্যাপসা গরমে পাখার পূর্বে আপনার কথা মনে হয়!
‘ঘর্মাক্ত দেহ,বদ্ধ বাড়ি, একরত্তি বাতাস নেই ‘
দূর থেকে যেন ভেসে আসে স্বর,সম্মুখে কেউ খাড়া নেই!
এইতো সময়;কালবোশেখী যেন এনে দেয় কাঙ্ক্ষিত জয়।
উত্তাল বাতাসে সুপারি শাখা নত হয়,সাথে নত হয় বাতাস স্বয়ং!
আদিগন্ত উদ্যান ভুলায় -ঘুপচি ঘর,বদ্ধ জানালার ভং।
রোজকার আফসোস,নিশীথের মুগ্ধ খোয়াব;ঈশ্বর দিয়েছে বর-
দূরন্ত বাতাসে কাঁপে আপনার কবর।