ইমরুল হাসান
শবে বরাতের দিন
শবেবরাতের দিন। মাংস আর মসলার দোকানে ভীড়। চাইলের রুটি দিয়া বুটের হালুয়াখাওয়ার পর মনে হইলো, গরুর মাংসের ঝোল দিয়া একটু খাইতে পারলেও খারাপ লাগতোনা। এইরকম সামান্য অতৃপ্তির ভিতরই যেনো আটকাইয়া থাকে সমস্ত বাসনা। আমার শবেবরাতের নমাজ, প্রার্থনা!
পিয়াস মজিদ
ক্রুশকুসুম
আমিই আনন্দম, ক্রুশের মিনার। আকাশেরও মগডাল থেকে দেখি কোথায় তুমি -চোরাগোপ্তা ফুল। তুমি তো কাননে নও। কবরখানায় নৃত্যরত লাবণ্যপ্রেত। তোমাতে প্রেম ঢালি। তুমি আজ হাড়ে গলা মোম। আর এমতে কৃষ্ণনিখিল চুরমার। আয় ধ্বংস, আয় সবুজ। চাঁদ ডুবে যায় করুণ রসধারায়। আবার তুমি মা মেরিতে ছেয়ে গেছ; জেরুজালেমে খড়ের গাদায়। রাত গাঢ় হলে তুমি সোনালি রক্তের জতু। যখন বনভূমি দগ্ধ শৈত্যে, জল ডুবন্ত ঘৃণায়। এই পথ কাঁটাশোভা, এই পথ যিশু। আজ ঝরে পড়ে সমুদয় সিডারের গাছ। তুমি তবে নবরূপে রোপিত বিষাদ। তার ছায়ামূলে আমি সংগীতের রিমঝিম জলসা বসাই।
সেথা দেখো কেমনে অসুর ঘনায়!
নাঈম ফিরোজ
শব-এ-বরাত
(পুনর্লিখিত ‘বরাত’ এর বরাতে— মম বাবাকে— )
আঁখিরাত খুলে দেখি তিনি— কোথাও যান নাই
আছেন।
অনন্তর আখিরাতে—
বরাত শব রাত্রি শর্বরী
আরও কী কী দেখি
অশ্রু আঁকশিতে তারে খুবভাবে দেখি দেখি আজ
আখিরাতে আর কভু দেখি কি তাহারে, দেখিনা।
শুভ্র সরকার
মা কালী
ভরসা দে মা, অসুরঘাতিনী
আঁকতে দিয়েছি ক্ষত
এমন নতশিরে এ’ হাহাকার
নিয়ে পরাস্ত নিঃশ্বাস
যেন ভেতরটায় আজো চাষ করছি
মহামায়ামুখর ভূমি !
সোয়েব মাহমুদ
কোথায় যাবো
আমি বহুবছর নুরজাহান রোডের মোড়ে
একটা ডিম রেখে দেখেছি,
গাড়ির চাকা উঠে গেলে কেমন করে ফাটে?
একটা ক্রুশ দাও
আমি বিদ্ধ হয়ে আছরের দিকে যাবো,
মাগরেবে আমার চীতকার মৌণতায়,
এশা আমাকে দাফন করেনা।
একটা ক্রুশ দাও,
আমি বিদ্ধ হই,
ফজরের পর চল্লিশ দিন তর্জণী উচিয়ে পরেছি
মুগ্ধতার বাণী,
তাই জোহর আমায় আত্মাহুতির নোট পড়ায়,
একটা ক্রুশ দাও,
আমি বেথেলহাম যেতে যেতে বিদ্ধ হই,
একটা ক্রুশ দাও,
আমি জেরুজালেমের রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
জমজ শহরের মৃত্যুতে ডেকে আনি পরমারাধ্য ইসহাককে।
একটা ক্রুশ দাও,
একটা ক্রুশ,
আমি বিদ্ধ হতে হতে দ্যাখি তেরোতম চেয়ার থেকে
কে উঠে দাঁড়ায়,
আমি মরে যেতে যেতে দ্যাখতে চাই ছয় আর নয় পালটিয়ে,
কারা সরে যায়?
একটা ক্রুশ দাও এজরা পাউন্ড একটা ক্রুশ দাও,
একটা ক্রুশ দাও, পশ্চিম তীর ছাপিয়ে উঠে আসবার
আগে
আমি বিদ্ধ হতে হতে
মরে যেতে যেতে শুনতে চাই ” লাব্বায়েক আল্লা হুম্মা লাব্বায়েক।”
একটা ক্রুশ দাও ফাল্গুনী
একটা ক্রুশ চাই জীবন,
একটা ক্রুশ দাও রুদ্র,
আমাকে একটা সফেদ ক্রুশ দাও বিদ্ধ হয়ে ঝুলে রই,
তোমাদের জানলায়,
বাচিয়ে দিয়ে কাপড় পর্দার।
বহুবছর আমি একটা ডিম
নুরজাহান রোডের মোড়ে
রেখে দ্যাখেছি কিভাবে ফাটে হৃদয়?
আমি আছরের দিকে যাবো,
একটা নিঃসন্তান আকাশের বুকে মাথা রেখে
আমি ছুয়ে দেবো জন্মজরায়ু।
আমাকে একটা ক্রুশ দাও
মেলোড্রামায় চুপ করে বসে পড়বার আগেই
আমি বিদ্ধ হই,
আমি বিদায় নেই,
সদর দরোজায় হিসাবের মুনকার নাকির,
ঘরের ভেতর প্রশ্নকর্তা কিরামান কাতেবিন,
আজরাইল আসবার আগে,
ইস্রাফিলের শিঙ্গা বেজে উঠবার আগেই
আমি ক্রুশবিদ্ধ রোদ,
আছরের দিকে যাবো।
চাণক্য বাড়ৈ
মহালয়ার ভোর
শঙ্খ সুরে রাত পোহাল– মহালয়ার ভোর
দুচোখ জুড়ে ঘুম তখনো দুচোখ জুড়ে ঘোর
স্বপ্নটুকু উসকে ওঠে সামান্য একরোখা
দৌড়ে ছুটি তোদের বাড়ি, আমি এমন বোকা
সাতসকালে দেখব তোকে, ইচ্ছেটা চমকালো
কেমন লাগে তোর গালে ওই আঁধার মাখা আলো
ঠিক তখনই বারান্দাতে করছিলি পায়চারি
আমার পায়ে শেকল আঁটা আমার দু’পা ভারী
সামনে এসে দাঁড়াস যখন এমন কেন হয়
বুকের ভেতর ভিসুভিয়াস, মনের ভেতর ভয়!
আকাশবাণী হচ্ছে শুনি আগমনীর সুরে
বুকের মাঝে ধুকপুকানি, ষষ্ঠী কত দূরে
দুগ্গা ঠাকুর দুগ্গা ঠাকুর এবার যেন পারি
তাই না হলে তোমার সাথে এক জনমের আড়ি।
হাসান রোবায়েত
আমার রসুল
আমার রসুল থাকেন দূরের দেশে
আমি তারে চিনি, দেখি নি কখনো হায়
তিনি কি আমার গোধূলির পদাবলী
তার বিনে আমি অগোছালো অসহায়—
চর্যাপদের ডোমিনী বঁধুয়া শোনো
শোনো বৈষ্ণব পদাবলী থেকে শ্লোক
রূপকাহিনীর পথভোলা যত হাওয়া
রসুলের সাথে চিরকাল দেখা হোক—
আমার রসুল থাকেন দূরের দেশে
তার রূপে মজে কাজলি নদীর পানি
আমি তারে দেখি আবার দেখি না যেন
টলমল করে তাহার বিম্বখানি—
এ নদীর মায়া এমনি বিরহে লীন
রসুল আমার স্মরণে-বিস্মরণে
আমি তার পথে হিজল গাছের ছায়া
সন্ধ্যার নদী পাড়ঘেঁষা বর্ষণে—
রীতিতে-রূপেতে আমি তারই আবহাওয়া
তারই কথা জপি তার নামে ভেসে যাই
আমার রসুল থাকেন দূরের দেশে
কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে তার কথা হতে চাই—
শামশাম তাজিল
পাথরের জিকির
ডিমের ভেতর আদম ফোটে হাওয়ার বুকের তাপে
স্বর্গচ্যুতির কারণে নয়, কেঁদেছে সন্তাপে
আলোর নদী পাড়ি দিয়ে অন্ধ হলো দিন
বন্যতাকে তাড়িয়ে বেড়ায় উঁচিয়ে সঙ্গীন
তিনশো বছর কেঁদে আবার হাওয়ায় ওতপ্রোত
পাঁজর ছেঁড়া আদিম নারী বেদনাসম্ভূত
স্নানযাত্রার পর্ব শেষে এসেছে সন্তান
খুনের ভেতর খুন জেগেছে__ রাখেনি সন্ধান
ভ্রাতার হাতে নিহত ভাই, চিত্তে অবসাদ
দ্বন্দ্বমুখর জীবন প্রদীপ, __ রক্তে ভেজা হাত
হস্তরেখায় ভুল ছিল না,আত্মপহারক
ভয়ের দিশায় ফেরার জীবন রেখেছে বন্ধক
পিতার তবু কাঁদে হৃদয় কাঁদে প্রাণের বায়ু
আদিম মাতার বক্ষে পাষাণ রুদ্ধ পরমায়ু
পাষাণ ভাঙে পাষাণ পোড়ে বক্ষে পাষাণভার
চিত্তদাহে পাপের হরণ, জেগেছে এত্-বার
রৌদ্রে জ্বলে লক্ষ বছর সাংখ্য-জাগতিক
কোরান মানে মুসলমানে হিন্দু পূজে ঋক
পিঠের ওপর বইছে বোঝা ধনুকভাঙা শর
পাথর থেকে জীবন খোঁজে মৃত্যু অতঃপর
উপল বড়ুয়া
বুদ্ধ
একটি বুদ্ধ জন্ম নিতে পারতো আফ্রিকায়
মাদাগাস্কারের বাওবাব বৃক্ষের ছায়ায়
কালো কালো মানুষের পাশে আলো করে
থাকতো যদি কালো এক মৈত্রীর বুদ্ধ!
একটি বুদ্ধ জন্ম নিতে পারতো সিরিয়ায়
যুদ্ধ বিধ্বস্ত শিশুদের পাশে থাকতো যদি
এক শান্তির বুদ্ধ; ফোঁকলা হাসির বুদ্ধ।
বুদ্ধ নেই ক্ষুধার্ত সোমালিয়ায়। সুদানি
কষ্টের পাশে। বুদ্ধ নেই ইতিহাস হারানো
ইরাকের পাশে; বুদ্ধ নেই বাতাস ও জলে
এমনকি তোমাদের প্রার্থনা বা অন্তস্তলে
বুদ্ধ নেই।
‘নিজভূমে পরবাসী’ আদিবাসীদের পাশে
বুদ্ধ দাঁড়ায়নি এসে। আফগানিস্তানের বুদ্ধ
তবে কোথায় হারালো!
বুদ্ধ থাকতে পারতো মিয়ানমারের নিযার্তিত
রোহিঙ্গাদের পাশে। চীনের লাঞ্ছিত উইঘুর
ফিলিস্তিনের ঘর হারানো মানুষগুলো
যদি দেখতো একবার সম্যককান্তির বুদ্ধ!
কেন বুদ্ধ তুমি কেবল হাসছো উপমহাদেশে
কেন বুদ্ধ শুনেও শোনো না; বলো না কথা
আফ্রিকার জঙ্গলে কেন তোমার হলো না ধ্যান
কেন সইলে না মৃত্যুমাখা সাইবেরিয়ান ঝড়?
কাউকাব সাদী
আশহাদুআল্লাইলাহাইল্লাল্লাহ
খোদা, সম্মিলিত সেজদা আমি দেবো না
লোক দেখানো নামাজে তোমার বীতরাগ—
এ কথা আমি কী করে বুঝাই—তোমার কঠোর ঘোষণা
তোমাকে নীরবে খোঁজার
আমি ভয় পাই, খোদা, নিজের চেয়েও তোমাকে ছাড়ার
তাই চক্ষু চড়ক রাখি
ভুল করেও দেই না কুর্নিশ, দেবো না কুর্নিশ
এই ভালোবাসা ভুল বুঝে তাবৎ সাজেদ, জানি
আমার শির নিতে কোষ মুক্ত করবে তলোয়ার
শুনো খোদা, তখন তোমাকে
আরো একবার ভালোবেসে তাদের কলবে জুড়ে দিয়ে যাব
তোমার গূঢ় অন্ধকার।
সানোয়ার রাসেল
মর্সিয়া
কার ঘায়ে ছিঁড়ে যায় কাঞ্চণমালা
কার ঘায়ে অন্তরে জাগে কারবালা
হোসেইনি কাফেলাতে শামিল শহিদ
মহব্বতের টানে মরণেও জিত
ফোরাতের জল ছোটে বাঙলার চোখে
মর্সিয়া গেয়ে কাঁদে ইমামের শোকে
নবীর বংশধর রক্তে লুটায়
যেন বা দুপুরে এক ঘুঘু উড়ে যায়
যেন বা বিধবা এক সাদা থান গায়ে
উঠানে বসেছে একা দুঃখ বিছায়ে
যেন বা ধানের মাঠে পুড়েছে ফসল
মরেছে বুকের ধন, মা’র চোখে জল
কোথায় রক্তে ভাসে দূর কারবালা
কার বুক ভেঙ্গে যায়, খসে যায় বালা
সেই শোক বুকে নিয়ে আমি আজাদার
মাতমে মগ্ন থাকি, দীল ছারখার
আমি তো বেসেছি ভালো রাসুল তোমায়
আহাজারি করি তাই প্রতি আশুরায়
কি করে সইবো বলো কারবালা শোক
যে শোকে কাঁদছে আজও আমার মা’শুক
বুকের ভেতর ফাটে প্রেম-বুদ্বুদ
অস্ফুটে ডেকে উঠি, ‘মাবুদ! মাবুদ!’
কাউসার সাকী
একটি সূফী কবিতা
বাতাসে আগর গন্ধ ধ্যানী গাছ চুপ
তোমার আমার প্রেম এই তাসাউফ
পাইনা তোমার দেখা তাও তুমি সব
ধ্যানে জ্ঞানে নিয়ে চলি নাই-অবয়ব
মাত্র স্ফটিক লাগে, মুহূর্তে ধাঁধা
প্রেম-পথে মন অধিক শরীরই বাধা?
ভুল করে পুন:পুন বেসে ফেলি ত্বক
অথচ ‘রুহের প্রেম’ তোমার সবক
মানব শরীর এক প্যান্ডোরা বক্স
ভরপুর ব্যাধি তাতে— শ্লেষ্মা পুঁজ পক্স
মরমী স্পর্শে কর এ শরীর তুলা
ফুঁ দিয়ে সরাও ব্যাধি কলবের ধুলা
ঢেউয়ের আকার দেখে যদি দীর্ঘশ্বাস
তুমি হও জ্যোতির্বিদ জাইরোকম্পাস
ভ্রান্ত নাবিক তাকে নিয়ে ফিরো তীরে
তখনও যে প্রেম খোঁজে শরীরে শরীরে
কিয়াস আহমেদ
এক আল্লাহতে সিজদা
কিসমিস ভিজানো বোতল থেকে
ঢকঢক করে গিলে ফেলি পানি
তারপর কিসমিস গুলো খেতে খেতে
আকাশের দিকে তাকাই,
আমি দেখি কোটি কোটি তারার আলো
নিচের দিকে নত হয়ে আছে
আমি দেখি সবচেয়ে লম্বা গাছটাও
ডালপালা নিচের দিকে ছড়িয়ে দিয়েছে,
আমি দেখি ফুল গুলোও পাপড়ি ছড়িয়ে
তারপর নিচের দিকে নেমে এসেছে,
আমি দেখি ফল গুলোও বোঁটার সাথে ঝুলে
নিচের দিকে পড়ে আছে,
আমি দেখি খয়েরি পাতাটাও ঝরে
নিচের দিকে চলে আসে,
প্রকৃতির এই নিচু হওয়া দেখে
আমিও নিচু হতে শিখি,
নিচু হতে হতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি,
যেভাবে সমস্ত সৃষ্টিকুল এক আল্লাতে সিজদায় আছে।
সৈয়দ এনামুল তাজ
হরিনাম সংকীর্তন
প্রথমে আমি ছিলাম প্রজাপতি সুতপা
তুমি পৃশ্নি ও আমার ব্যক্তিগত পতিতা
করেছি প্রেম, ছিলাম একে অপরের ছায়া
খেয়েছি বার হাজার বছর বৃন্তচ্যূত পাতা ও
নিশিগন্ধা বায়ু, যা হয়েছে গোবিন্দ তপস্যা
গোবিন্দ তুষ্ট হইল, করিল বরদান তথা
অবিকল চতুর্ভূজ পুত্র হয়া জন্ম নেব তোমার
পবিত্র গর্ভে, জয় নমঃ মাতা ও পিতা
জয় নমঃ প্রেম ও সুবিচার
ফুলের পাশে মিহিঘ্রাণ, কাঁটা ও ভনিতা
দ্বিতীয়ত আমি কংসের কারাগারে বন্দি বাসদেব
তুমি দেবকী ও আমার ব্যক্তিগত রতিকা
সয়েছি দুঃখ, করেছি ভক্তি; ভগবানের হয়েছে মায়া
তোমার অষ্টম গর্ভ প্রমাণিত স্বয়ং
ভক্তের ভক্তি কোনদিন এঁটো হয় না
অজিত দাশ
পথ
যেনো আমারই শরীরে বিছানো
ইটের গাঁথুনি থেকে এইমাত্র উড়াল দিল
একটা শালিক,
তার পায়ের ছাপে পিঠের ভাঁজ খুলে
যেদিকে সেজদা দিয়ে দাঁড়াই
আমাকে পাখি হতে বলে
পড়শিবেলার তাড়া খাওয়া মাছ,
সাপুড়ে দুলালকানাই।
আমি বেফিকর দিলের কাছে হাত পাতি
একটা জলঢোড়ার সমস্ত মগ্নতায়
নত হয়ে বাতাসে ডুব দিই–
রূহ এর বন্ধক রেখে আসমানে
সিধ কাঁটা মাটির-শরীরে বাজে ‘আল-বাছীর’
কে জানে?
জীবন আর মৃত্যুর কাসিদা লিখে যে মিহির
তার সামান্য ইশারায় পুলসেরাত হতে পারে
একটা দাগকাটা শামুকের নামলিপি।
নোমান প্রধান
ইব্রাহিমের সন্তান
আদি আদম
আর মা হাওয়ার-
সিলসিলায়, উজ্জ্বল
ছেলে একজন, ইব্রাহিম
সেই ইব্রাহীমের তিনটি সন্তান
তারা আজ অনেক বড়, দিকে দিকে নাম।
বড় হতে হতে, সীমালঙ্ঘনের সব শর্ত মেনে নিয়ে
মেঘের সীমানা পেরিয়ে মাথা গলিয়েছে নীল আসমানে।
জাদুর শক্তিকে সরিয়ে এসেছে শুশ্রূষার মজেজা, পরে এলো
আঁধার ভেদী শব্দময় ঝংকার বাজিয়ে সুষম বন্টনের নির্দশন
নিজের পায়ে দাড়াতেই তারা অস্বীকার করলো অন্যরে,
বাজলো যুদ্ধের দামামা, অঞ্চল দখলের আক্রমণ
কারো দ্বীনের জন্য, কারো ধর্মের জন্য মরণ।
একই পৃথিবীতে, একই লক্ষ্যে এসে হায়
ইব্রাহীমের প্রভুকে সন্তানে ভুলে যায়।
প্রভু তার তবুও নিত্য রোজ
রাখে অবিরাম যতনে
রাখে খোঁজ।
হাসান মাহমুদ
সাক্ষী উপাসনাল
কতটা ভালোবেসেছি তোমায়
দেখেছে, আকাশ, গ্রহ-নক্ষত্র, চাঁদ-সূর্য, তারা—
দেখেছে, জামরুল, গোলাপজাম, নাশপাতি
ফুল, নিমেরপাতা; কতটা বিরহ করেছি
তোমার।
পেয়ারার ভেজাপাতা, একচোখে চেয়ে থাকা
নয়নতারা, দেখেছে আমার মাতম।
দেখেছে, সুবিল, জলপ্রপাত, হিমছড়ি, মিঠাপুকুর,
কতটা কেঁদেছি ঝরনার নীরব বয়ে চলার মতো।
সমস্ত সবুজ দেখেছে আমার বিবর্ণ হয়ে যাওয়া—
দেখেছে, মসজিদ, মন্দির, সিনেগগ, প্যাগোডা
আল্লার দোহাই দিয়ে তোমার জন্য
হৃদয় ঝাঁঝরা করেছি।
শুধু তুমি দেখো নি আমার পুড়ে যাওয়া—
সোহরাব ইফরান
জাফরানমিশ্রিত পোশাক সম্পর্কে
লীলাময় পাঞ্জা কুসুম, ঐরাবত ঐ জ্বলছে— এমন রাতে—জ্যোতির্ময় তাঁতকল থেকে, নামো পোশাক—জাফরান মিশ্রিত। আজো হেঁশেলে বেহোশ হয়ে আছে হোসেন এর ঘোড়া। কোন কারবালা কুটিরের ‘নিদ্রাতুর মানুষ’কে তাই ফুল দিও না, ডাল দিও’। গাছের কাঁখ সোজা হলে দিও! মুখসুরাত্তুন দেশের বালিকাদের দিও।’ আমাদের সামনে কেবল বালির বাঁধ, ধরে আছি ঝিনুকজাত দুটি চোখ। নীলাভ আকাশের সবচেয়ে কোমল দৃশ্যগুলোয়, ঐ জাফরানমিশ্রিত পোশাক যাচ্ছে বয়ে। অন্তরে অনুখন! কেউ ধরেছিল লক্ষ্যাধিক কপোত সীরাজীর, কেউ শুনেছিলো সে কোপোতের-ই ক্বালাম!’আমারাও জপি হরিণের নাম!’ হেঁ লু হাওয়ারা, লহো সালাম— ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! দেখো নাকি, জনশ্রুত না হলেও; জ্বলে উঠে ঠিক প্রগাঢ় অনুভব? শান্তির মমি’কে রেখে এসে কীটদষ্ট হৃদয়ে—অধিক আরও লিখিত হয়েছিলো—কেন প্রেত বিবেচক বোধের পরিপ্রেক্ষিতে? তবু সুস্থির মন পৃথিবীতে কিছু কি ছিল না? বিস্মিত তরু কাঁপে—এসব জিজ্ঞাসার অলক্ষ্য পথিকে’রা ভ্রমণ করে ধূপে!
রোকন শাহরিয়ার
বীরে শেফা
বহু গভীর তৃষার পাশে অপেক্ষা জেগে থাকে
রাত্রির পয়গামে কাফেলা জানে ভোরের খোঁজ
আহা!এই যাত্রা বিরতিতে চাই জলের আলিঙ্গন
প্রার্থনায় বসে গেছেন মহা পবিত্র একমাত্র হৃদয়।
পরওয়ার দিগার দিশা দিন! দিশা দিন হে মালিক!
এই পথ তো আপনার দেখানো আলোর পাশেই
দিন তবে জলের সন্ধান, মৃত্যুর সামিয়ানা নিয়ে
জানি কিছু দূরে বদর জেগে আছে, রক্তের ভিতর।
প্রভু, দিন তবে জলের সন্ধান, তৃষ্ণার্ত কাফেলায়
পাহাড়ের পায়ে পায়ে মানচিত্র খোদাই হোক
জলের পাণ্ডুলিপি থেকে আজ তবে লিখে দিন
বীরে শেফায় চুমুক! তাবেইনরা জিকিরে বলুক —
শুকরিয়া ইয়া মোহাম্মদ,
শুকরিয়া ইয়া মোহাম্মদ।
শাওন রিছিল
আড়াল
অতঃপর…
অনেকগুলো রাতের বীজ বপন করে দিল ঈশ্বর নামক
আগন্তকের হাতে, বিকেলের ছায়া ওত পেতে থাকে
নোকিয়া, লুমিয়া অথবা স্যামসাং গ্যালাক্সির রিং টোনে
ছেলেগুলো ধার্মিক হয়ে গেছে!
রবিবার গির্জায় যায়, প্রেমিকার হাত বগলদাবা করে,
রোদচশমা রোদ আড়াল করে না, চোখও আড়াল করে
চশমার আড়ালে সুডৌল বুক
নায়কেরা বাঁশির ছয় গর্তে আঙুল না রেখে এক হাতেও বাঁশি বাঁজাতে জানে,
আমি নায়ক নই তাই দুই হাতেই সাইকেল চালাই,
বৃষ্টি গাছে বৃষ্টি-ফুল দেখে আবেগ তাড়িত হই…