শিকারী নহি হে
•••
‘আমারে ঘায়েল করো
করো ধরাশায়ী’
আমি কি শিকারী নাকি?
কূট গরল মিশ্রিত তীর ভরা তূণ
লয়ে ঘুরতেছি বনে বনে!
ছিলা টান টান করে করতেছি তাক
তোমার কোমল হৃৎপিণ্ড
হায়, হরিয়াল!
শিকার হইতে চাইতেছো যে বড়ো!
শিকারী নহি হে
নিজেই শিকার—রাঙা বটফল
ধারালো চঞ্চুতে তোমার
ফালি ফালি হইতেছি
কাছিম মায়ের প্রতি
•••
গর্ভে তো রাখতে পারবা না চিরকাল
মানুষে মানুষে গিজগিজ তটে ছেড়ো না
ওদের পায়ের চাপে স্রেফ ভচকায়ে যাবো
ওরা বালি খুঁড়ে তুলে নিয়ে ভেজে খাবে
জন্মাতেই দেবে না!
নীল জলে সাঁতরাতে দেবে না
সোনারোদ গায়ে মাখতে দেবে না
না, এইখানে, মানুষে মানুষে গিজগিজ তটে
ছেড়ো না, ছেড়ো না, ছেড়ো না আর বারে
কোথাও, কেউ
•••
কোথাও দুনিয়াদারির ফাঁকে
কেউ তুলে রাখতেছে প্রেম
যেমত শিকার বাটিতে দুধের সর
গেরস্তের বউ জমা করে রোজ
এমত ভাবনায় কোত্থেকে এসে
সুস্বাদ যতো জড়ো হয় জিভে
গোঁফ ও থাবা খুব চেটে নিই
তৃপ্ত বেড়ালের চোখ বুজে আসে
আগে তো শীত আসুক
•••
শবযাত্রীসকল গোরস্তানের দিকে হাঁটছে নত মুখে। নিজেরাও একেকটি শবপ্রায়। নিষ্কম্প। নির্বাক। নির্বিকার।
এখানে কচি পাতার গায়ে লেগে আছে সোনা রোদ। কী ভীষণ তাজা প্রাণ! তাকেও কি তুমি ঝরে যেতে বলো, কফিনের ‘পরে? খোরাক হতে বলো যে ইঁদুর দাঁতে শান দিচ্ছে অনন্তকাল ধরে তার আজকের নৈশভোজের?
কচি পাতাটি দেখে যেতে চায় একটি সজল বরষা, একটি নীলাভ শরৎ! হেমন্তের নরোম শিশির গায়ে মেখে পেতে চায় শেষ স্নানের পবিত্র আরাম।
আগে তো শীত আসুক। তারপর তাকে ঝরে যেতে বলো তোমার বুকের মতোন মিলনকাতর মাটিতে।
এ পৃথিবীর মরে যাওয়ার আগে
•••
কেন্দ্রের বিন্দুটির সাথে মিলে যাবে বলে, দ্যাখো, ডানা গুটিয়ে নিচ্ছে পৃথিবী।
ক্রমশ সকল আকাশ আর সমুদ্র আর সমতল জুড়ে ছড়ানো কমলা-নীল-সবুজ সেই বিন্দুটির দিকে জড়ো হচ্ছে; জড়ো হচ্ছে সমস্ত সুর—হাওয়া ও শূন্যতার নিনাদ। থইথই করছে বিন্দুটি রঙে ও সুরে—সারাবেলা।
আমাদের আর কী কী চাইবার আছে?
আমাদের আর কী কী চাইবার ছিলো?
উত্তাপ হারিয়ে এ পৃথিবীর মরে যাওয়ার আগে লিস্টিটা তৈরি করে ফেলা দরকার।