হিন্দি থেকে ভাষান্তর
ধুমিল (সুধামা প্রসাদ পান্ডে) এর জন্ম ৯ নভেম্বর ১৯৩৬ ভারতের উত্তর প্রদেশের খেবলি গ্রামে। মৃত্যু ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫। মাত্র ৩৯ বছর বেঁচে থাকা এই কবি ষাটের দশক পরবর্তী হিন্দি কবিতায় অন্যতম প্রভাবশালী কবি হিসেবে সুপরিচিত। নিজস্ব কাব্যরীতির জন্য বিশেষভাবে চর্চিত ধুমিল কবিতায় ঐতিহ্য, আভিজাত্য, শালীনতা ও তথাকতিথ ভদ্রতার বলয়ে যে হৃদয়বৃত্তি তৈরি হয় সেসবের বিরোধিতা করেন। যে সিস্টেম নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমস্ত আয়োজন করে তিনি সেই সিস্টেমের বিরোধীতা করেছেন। এই বিরোধিতাই তার কবিতার সার্থকতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি ষাটের দশকের অকবিতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কবি। তার কাব্যভাষা নতুন সময়ের রোমান্টিকতা, অতিরিক্ত কল্পনা ও জটিল চিত্রকল্প থেকে মুক্ত। মূলত কবিতায় সত্যকে জীবনের খুব নিকটবর্তী করে তুলে ধরতে চেয়েছেন ধুমিল। ‘সংসদ সে সড়ক তক’, ‘কাল সুননা মুঝে’ ও ‘সুধামা প্রসাদ কা প্রজাতন্ত্র এই তিনটি কাব্যগ্রন্থ। তাঁর কবিতায় বহুলভাবে গ্রামীণ শব্দের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। মূলত ভারতবর্ষের নগ্ন বাস্তব চিত্র তার কবিতায় জলজ্ব্যন্তভাবে উপস্থিত। “কাল সুননা মুঝে” কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৭৯) পেয়েছিলেন।
যাত্রীর বক্তব্য
হাতের বিঘায়
অসুস্থ চেহারায়
আজন্ম তৃষ্ণা
ধারালো চুক্তি পান করে
উপুড় হওয়া পেয়ালার মতো
উল্টো আকাশ
আমার হাতের তালুতে
আমাকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে
আবারো আলাদা…
গাঁটকাটা চোখের অর্থহীন নীরবতায়
ডুবে যাওয়া সীমান্তের দুর্বোধ
পরিচয়ের অচলতা
আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়
একেবারে বেনামী…
তারপর আমি পথ চলি
আমার অতৃপ্তি
লক্ষহীন দূরত্বের উজ্জ্বল ছুটে চলা
পায়ে দিয়ে যায় স্বস্তিকা চিহ্নের ঘা।
দিনচর্চা
সকালে যখন কোথাও অন্ধকার থাকবে না,
আমি নিভে যাওয়া বাতিগুলো
একত্র করবো আর
গোপনে ভাগাভাগি করে নেব
দুপুরে কোথাও যখন বরফ পাওয়া যাবে না
না কোনো ঝরে যাওয়া পাতা
আকাশ নীল আর স্বচ্ছ থাকবে
নগর ক্রেন এর কামড়ায় ঝুলতে থাকা
আমরা মোড়ে দেখা করবো
একে অপরকে ঈর্ষা করবো।
রাতে যখন যুদ্ধ একটা পংক্তির মতো
প্রিয় হবে, আমি ভায়োলিনকে
কান্না করতে শুনবো
নিজের ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্কের
কথা ভেবে দুঃখী হব।
সিলসিলা
তপ্ত হাওয়ায়
বিস্ফোরণ সামান্য একটা ঘর্ষণের
অপেক্ষায়
তিক্ত হয়ে যাওয়া চেহারায় আনন্দ
ফিরিয়ে আনতে
জাগো আর হাতের তালুতে
হামলা কর
শেকড়কে বলো অন্ধকারে
বেহিসাব না দৌড়ে
গাছের প্রয়োজনে
মাটি থেকে যেনো বাইরে বেরিয়ে পড়ে
এই ভয় না পেয়ে,
যে জঙ্গল শুকিয়ে যাবে
এটা সত্য যে
নক্ষত্রের নতুন শাখা গজাবে না
না পাবে যন্ত্র কখনো ঘুমের সুযোগ
কিন্তু এটা তোমাদের ন্যায্য পাওনা
অন্তত এইটুকু তো হবেই
বাটালির সামান্য সাক্ষীতে
তুমি দরজাকে নিজের দরজা আর
মেঝেকে নিজের ঘরের
মেঝে মনে করবে।
নগর-কথা
সবাই দুঃখী
সবার বীর্য বাহিত শিরা
সাইকেলে চেপে
লুকিয়ে আছে
সবাই দৌঁড়াচ্ছে
সম জড়তার বিষম প্রতিক্রিয়াঃ
সবার সজল চোখে
মাটির প্রলেপ লেগে আছে।
ব্যক্তিত্বের পৃষ্ঠভূমিতে
তুমুল নগর-সংঘর্ষ
আদিম পর্যায়ের পরিচর
বিবশ মানুষ
যেখানে টিকে আছে
বামন পদচিহ্নের ছাপে
ওপড়ে আছে সম্প্রীতির পাথর
মোড়ে মোড়ে দেখা যাচ্ছে
পথের উদাস ব্রহ্ম-মুখ
নেই-নেই বলে
চিৎকার করছে।
ধুমিলের শেষ কবিতা
“শব্দ কিভাবে
কবিতা হয়ে পড়ে
সেটা দেখ
অক্ষরের মাঝে আটকে থাকা
মানুষটিকে পড়
তুমি কি শুনতে পেরেছো
এটা লোহার শব্দ নাকি
মাটিতে টপকে পড়া
রক্তের রঙ”
লোহার স্বাদ
কামারকে জিজ্ঞেস করো না
সেই ঘোড়াকে জিজ্ঞেস কর
যার মুখে লাগাম দেওয়া
গৃহস্থঃ চার মাত্রা
আমার সামনে
তুমি সূর্য-নমস্কারের মূদ্রায়
দাঁড়িয়ে আছ
আর আমি লজ্জিত হয়ে তোমাকে
চুপ চাপ দেখছি
(নারীঃ আচল,
যেমনটা লোকে বলে থাকে, স্নেহ,
কিন্তু আমার মনে হয়-
এই দুইয়ের অধিক
নারী একটা শরীর)
আমার মাথায় সংকুচিত হয়ে
তুমি মৃত্যু কামনা করছো
আর আমি আছি-
এই রাতের অন্ধকারে
দেখি সূর্যের আলোর
এক টুকরো তোমার চেহারায়
রাতের প্রতীক্ষায়
আমি সারাদিন পার করে দিয়েছি
আর এখন যখন রাত চলে এসেছে
আমি এই গভীর নীরবতায়
অসুস্থ বিছানার শিওরে বসে
একটা সুস্থ মুহূর্তের
প্রতীক্ষায় আছি
না আমি
না তুমি
এরা সবাই শিশু
আমাদের মিলন জেনেছে
আমরা দুজনে কেবল
এই অবোধ জন্মের
মাধ্যমে এসেছি
পার্থক্য
কোনো পাহাড় উঁচু নয়
সংগীতের চেয়ে।
কোনো চোখ
ছোট নয় সমুদ্র থেকে
সে কেবল আমাদের অপেক্ষার পার্থক্য–
যা কখনো আমাদের
লোহা অথবা ঢেউয়ের সঙ্গে যুক্ত করে
পূর্বে দিকের সূর্য
পূর্ব দিকের সূর্য
এক দীর্ঘ যাত্রা শেষে ফিরেছে
পাহাড়ি নদীতে ঘোড়াকে স্নান করানো শেষে
হাঁক দেয় কালো জঙ্গলে চড়ার
আর রাস্তায় দেখা দৃশ্যগুলো
দেখতে থাকে…
চাঁদ
গাছের শাখায় চমকাতে থাকে
যেনো ঘোড়ার জিনে আটকে থাকা হুক
আর রেবা নদীর কিনারে
আমি দ্রাবিড়ের শরীর থেকে বয়ে
যাওয়া রক্ত
আমি অনার্যের রক্ত
ঘুমের মধ্যে যেনো
চাকু ছোড়া হয়েছে…