বাড়ি
আমার মুর্খতা-আমার বাড়ি
বাড়ি কোথাও নেয় না, ফিরিয়ে আনে
ঘুম থেকে জেগে দূর কোথাও যেতে চাই
সারাদিন অবিশ্রান্ত চলার পর, রাত্রে
যেখানে পাই-তার নাম বাড়ি
বাড়ি আসলে অবাস্তব, মেটাফর
মানুষ নিজেকে হারিয়েছিল যেখানে
সেইসব চেনামুখ-গৃহস্থলি তৈজসপত্র
ঘ্রাণ ও দৃশ্যের জগৎ
যে কন্যা বাবা বলে ডেকেছিল
যে নারী শুয়েছিল পাশে
তাদের স্মৃতির ঘ্রাণ
অন্ধ কুকুরের মতো ডাকে
বাড়ি একটি কক্ষপথ
মানুষের গ্রহাণুপুঞ্জ
একই আবর্তে প্রদক্ষিণ করে।
ঈশ্বরের নাম
ঈশ্বরকে যখন আমরা ঈশ্বর নামে ডাকি
তখন ঈশ্বর গুটিয়ে যান নিজের সত্তায়
আমাদের দিকে না তাকিয়ে
তিনি তার ইজেলের দিকে তাকিয়ে থাকেন
শিশুদের হাতের সাথে একটি প্রজাপতি
কিংবা একটি আপেলের রঙ নিয়ে থাকেন ব্যস্ত
একজন কবিকে তুমি যদি কবি নামে ডাকো
প্রাথমিক উদ্দীপনায় হয়তো দেবে সাড়া
কিন্তু যখন সে জানবে তার কবিতাগুলো অনধিত
তখন অবজ্ঞায় ফিরিয়ে নেবে মুখ
বলবে এসব লোকের কাছে কবিতার কি মানে
বরং তার কবিতা থেকে একটি পংক্তি
যদি নির্ভুল করে থাক পাঠ
তাহলে কবির হৃদয় প্লাবনে হবে সিক্ত
ঠিক প্রভুও ফুলের নামে পাখির নামে
নদী ও সমুদ্রের নামে ভাস্বর
তবে মানুষের নাম তার সব থেকে অপছন্দ
কারণ একটি ফুল চিরকাল ফুল
যেমন গোলাপ বেলি চামেলি জুঁই; কিন্তু মানুষ!
গোত্রের বাইরে সে পরিচিত হতে চায়-
রহিম গনেশ বুশ।
পথ নতুন
আমাদের এই যাত্রা হয়তো পুরনো
যেহেতু জরাজীর্ণ পরিধানে বস্ত্রসমূহ
যেহেতু অনেকবার রোদে ফেটেছে আকাশ
গৃহস্থলির কাজে যে-সব বালিকা লাগাচ্ছিল হাত
তাদের মায়েরা হয়তো চলে গেছে বাবার সংসারে
যদিও অনেক সূর্যাস্ত, অনেক রাত শীতার্ত কেটেছে
সরিষার ফুল ঝরে আবার কুসুম এসেছে
কুসুম তোমার কি কেবলই শরীর
মন বলে কিছু নাই
যে সব মৌমাছি এসেছিল ঘাটে
তাদের মধূত্থের ভা- কোথায় রেখেছ
এত এত মানুষ, পাখিদের বিচরণ
সকল পথ যদিও অদৃশ্য পদভারে ক্লান্ত
তবু স্পর্শের আকাক্সক্ষা উদ্দীপ্ত শরীরে
কোথায় নিয়ে যাবে তুমি
কতটুকু তুলে নেবে হাতের মুঠোয়
তুমিও কি একাকীত্বের ভয়ে জড়িয়ে ধরেছ
কাগজের ঠোঙা থেকে একটি শারস
তোমার পপকর্ন নিয়েছিল তুলে
তবু কি গভীর দেখেছ তার ঠোঁটের বিস্তার
সর্বদা ভয় ও রোমাঞ্চ
ময়ূরের নৃত্য থেকে রেখেছে নিরত
আজ এই ভেবে অনেক কষ্ট সয়েছি
যদিও বা নেমেছিলাম জলে প্রাণকৌড়ির জগতে
তবু কেন বৃষ্টির ভয়ে আশ্রয় খুঁজেছি
যদিও হেঁটেছি পাশাপাশি
যদিও গন্তব্য বানারস
তবু পথের ভিন্নতা রয়েছে নিশ্চয়
নতুবা কেন এই বারংবার জড়িয়ে ধরা
কেন রয়েছে চুম্বনের ভয়
হয়তো আমরা হারিয়ে যাব সহসাই
হয়তো আনন্দ রয়েছে বিচ্ছেদের গানে।
প্রত্নপথের সন্ধানে
যদিও আমরা সকলেই করেছিলাম একটি
গুপ্ত পথের অনুসন্ধান
তবু প্রত্যেকের যাচ্ঞা ছিল গোপন
আমারা যখন কিছুটা অংশ হারিয়ে ফেলেছিলাম
আমরা যখন পরষ্পর মুখোমুখি
তুমি তখন কপাল থেকে মুছে দিচ্ছিলে ঘাম
সরিয়ে নিচ্ছিলে অবাধ্য চুলগুলো
আমরা যখন গভীর মমতায় গলে পড়ছিলাম
যখন আমাদের পবিত্র চিন্তাগুলো
শারীরের প্রমূর্তি হয়ে গেয়ে উঠছিল আনন্দস্তুতি
এই পথেই তো আমরা উদ্যানে হেঁটে বেড়াতাম
প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে রয়েছে এসব পথের অনুপুঙ্খ বয়ান
এ পথ হারিয়ে গিয়েছিল প্রত্ন-স্মৃতির ভেতর
নৃতত্ত্বের শিক্ষকগণ এখনো তাদের ছাত্রীদের
যে মাতৃতান্ত্রিক বপন ক্রিয়ার কথা বলেন-
এ তো সেই পথ
এই তো আমাদের শোষণমুক্ত সমাজ
এ পথ পুনরায় হারিয়ে যাওয়ার আগে
আমাদের কি উচিত নয়
যারা দিকভ্রান্ত এখনো দিনান্তে ফুরিয়ে যায়
তাদের লুপ্ত পথটুকু পথের সাথে
পুনরায় মিলিয়ে দেয়া!
নির্জন বিটপীর তলে
আবার কি আমাদের দেখা হতে পারে
আমরা কি অনেকটা দূর চলে গেছি
সায়াহ্ন কি হয়েছি পার
ফিরতে গেলে বেলাবেলি বড় কি দেরি হয়ে যাবে
বৃক্ষের নিচে কি নেমেছে ছায়া
পাতার আড়াল থেকে পারব কি চিনতে অবয়ব
আলো থেকে দূরে গেলে তুমি কি তেমনই থাক
পুনরপি ভাবতে গেলে নিশ্চিত সায়ংকাল
নদীও হয়েছে উত্তাল ভরপুর
মাঝি চলে গেছে পারে
অথৈ তটিনী আমি পাব কি সন্তরণে
এই ভর সন্ধ্যায় ফিরে গেলে তুমিও
নাকি আমারই মতো দ্বিধায়
নাকি বিপদ ঘনিয়েছে ঘনিষ্ঠতার দায়ে
এখনো প্রান্তরে বুড়ো বিটপীর নিচে
সাঁঝের অন্ধকারে খুঁজছ কোনো মুখ
প্রেতমূর্তি হয়তো একা একা কইছে কথা
এখানে এসেছে নেমে বিচ্ছেদের শূন্যতা।