১
গায়ে রোদ মাখতে মাখতে মৃত নদীটির গায়ে হলুদ আলো ছুঁড়ে মারে কবি
পথের কবিতা পড়ে থাকে পথেই
ঢেউ এলে নৌকায় পাল তুলবে ভানু কাকা।
সে গল্প বর্ষার যৌবনে ফুল হয়ে ফুটবে।
ভীষণ কৌতুকপ্রিয় লাল চায়ের চুমুকে খালি দুপুর ক্রমে জড়ায়।
ছড়ায় মানবের পদচিহ্ন নদী ও নারী
যে পৃষ্ঠায় তার নাম লেখা, তারে কেমনে ছাড়ি?
অপর পৃষ্ঠায় গৌতম, মেঘ সরায়
নির্জণ মেঘের নীচে বসে রামকিংকর বলেন-
কোন সীমা নেই। এখানেই শেষ এখানেই গোড়া।
২
মৃতের সংখ্যার উপর বাজি ধরেছে রাষ্ট্র।
ক্যাসিনো টেবিল থেকে ধর্মশালা,
আইয়ামে জাহেলিয়াত থেকে হলি আর্টিজান
চাপা চাপা রক্তের নীচে চাপা পড়েছে ঈশ্বরের বাণী।
কারো মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।
হারমোনিকা হাতে নিয়ে আগুনে মরে গ্যালো হিমালয়।
কুকুরের পাশে শুয়ে যে ঘাসের ছবি আঁকতো আকাশে।
বাতায়ন খুলে দিলে দেখবে,
পৃথিবীর আকাশে ঈশ্বর নেই, নীল নেই, কেবল রক্ত পোড়া ধোঁয়া।
পৃথিবীর মাটিতে ঘাস নেই, প্রেম নেই, কেবল ঝলসানো চোখ।
প্যারা নাই- বলে হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে আগুনে মরে গ্যালো হিমু
কত সহজে মরে যায় মানুষ
কত সহজে মারা যায় মানুষ।
৩
ঘটনাচক্রে আমরা একসাথে হলাম।
হাসির ছলে একটা রক্তাক্ত ঘটনা বলে ফেলি আমরা নির্দ্ধিধায়।
আমাদের বিষ্মিত আত্মায় কোন আর্তনাদ নেই।
গভীর ক্ষত কোথায় যেন, কোন প্রবাহে হারিয়ে যায়।
জবাফুল আর ফোটে না গাছটায়
গ্রীষ্মের বাতাসে অস্থির লাগে।
অস্থিরতা বেড়ে গেলে আমরা ব্রীজটার উপর হাজির হই
আমাদের যৌথজীবনের সংলাপ ক্রমে লাশ হয়ে ভাসতে থাকে
মনে মনে আর আর কত লুকাবো অন্তর্গত প্রাণ!
ঘটনাচক্রে আমরা এক হতে পারি না আর
এক হয়েও বিচ্ছন্ন হয়ে থাকি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো।
৪
যে সকল সকাল বিলুপ্ত তাদের কেন মনে পড়ে বারবার?
তুলা গাছের শরীরে লেখা ছিলো পূর্বপুরুষের ভ্রমণ কাহিনি।
আমরা উত্তরাধিকার হয়ে ভাসিয়ে রাখতে পারিনি পেঁজা তুলার মতো শরীর।
অপচয়
পদচিহ্ন করিনি সঞ্চয়।
বলেছি- আমি
বলেছি- আমার।
যেদিন থেকে ‘আমার’ বলা শুরু সেদিন থেকেই টুকরো হলো সকাল।
খেতের মধ্যে আল।
পৃথিবীর সকল বাগান সবার জন্য- এই ছিলো ঈশ্বরের বাণী
বাণী মলাটবন্দি করে ঠুনকো অনুভূতি করেছো আমদানি।
পৃথিবীর সকল সকাল সবার জন্য- এই ছিলো পৃথিবীর বাণী
৫
বনভূমি থেকে মনভূমি
কোথাও জল নেই।
মরুভূমির মাঝে একটা সূর্যমুখি বাগান
এক বিষন্ন কচ্ছপের যাত্রা বিরতি
বৃষ্টির দিন কবে আসবে প্রকৃতি?
৬
গভীর রাতে
সূর্যমুখী বাগানের ভিতর ঢুকে পড়ে একদল জলপাই রঙের নেকড়ে।
তীব্রভাবে, খুব তীব্রভাবে বেঁচে থাকে অন্তর্মুখী ক্ষত।
মানচিত্রের আড়ালে মেয়েটির চোখ
মেয়েটি তার পিতৃহত্যাকারীদের মুখ এঁকেছিলো রক্তে।
৭
যথেষ্ঠ দুপুর হয়েছে
আড়মোড়া ভেঙে
জোড়া জোড়া আমপাতার বনে চাবুক মেরে, ঘোড়া চড়ার আকুতি।
অন্যদিকে
দুপুর মাথায় নিয়ে মেয়েটি পা গুনে গুনে হাঁটে।
কালো ছাতার নীচে সাদা সাদা বকের মতো হৃদয়,
ডুবে-ডুবে উড়ে-উড়ে কিংখাবে জড়ায়।
ছড়ায়,শরীরের উত্তাপ শরীরে।
দ্বিপ্রহরে, তোমার বুকের আল
একটি ফুলতোলা রুমাল
কবীরের দোহায় যৌথ হয়ে যায়।
৮
পর সমাচার এই যে,
দীর্ঘতম দিনে তোমার হাত ধরে পৃথিবীর প্রান্তে যাবো
সেখানে সবাই সবার জন্য অপেক্ষা করে আছে।
তারা জানে
পৃথিবীর অন্য প্রান্তে ফোটা ফুলের প্রাণ ও বীজ,
ওষ্ঠে করে এই প্রান্তে নিয়ে আসবে প্রিয় মানুষেরা।
তখন তাদের দুঃখ বলে কিছু থাকবে না
মানবের পদচিহ্ন ধরে রাখবে মানব।
৯
ছোট প্রাণ হারিয়ে যাবার ক্লান্তি ছেড়ে বের হয়ে এসো
দ্যাখো, আকাশ থেকে এক নীলাভ আলো ছড়িয়ে পড়ছে।
বেঁচে যাওয়া মানুষেরা জড়ো হয়েছে পৃথিবীর শেষ বৃক্ষের নীচে।
দীর্ঘদিন স্বমস্বরে চিৎকার করে কাঁদে না মানুষ
একটু একটু করে বেদখল, ব্যক্তিগত দৃশ্যসমূহ।
হাহাকার করছে কোকিলের সুর।
১০
মৃত মানুষের বয়স বাড়ে না
রোদের কার্র্নিশে বসে আছে নিশ্চল হাওয়া
অন্তমিলে বাঁধা যায় না এ চলে যাওয়া।
১১
একটি উজ্জ্বল রুমাল মাথায় বেঁধে
হসপিটালের কেবিনে শুয়ে আছেন আন্দ্রেই তারকোভস্কি।
মনে মনে তিনি একজন জলদস্যু এখন।
দৃশ্যের তরজমা করতে করতে ডুবসাতারে চলে গেছেন ভিনদেশে।
তার বিছানার নীচে অজনা দেশের মানচিত্র
অচেনা ফুলের বাগান।
বাগানের মালি, যে তার বন্ধু ছিলো স্বদেশে।
প্রিয় কুকুরটা তার ফেলে আসা ভষ্ম বাড়ি পাহারা দিচ্ছে এখনো।
আবছা কুয়াশাসকালের পাশ দিয়ে মোমবাতি হাতে হেঁটে যায়
মৃত্যু ও স্মৃতি তাড়িত এক চরিত্র,
অবিচল নিশ্চল নির্লিপ্ত সেই দৃশ্যটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দৃশ্য
দৃশ্যটি ধারণ করেছেন আন্দ্রেই তারকোভস্কি
যিনি প্রেমিকার বুকের ভিতর চড়ুইপাখি রেখেছিলেন যতনে।
১২
অনেকগুলো জীবন একসাথে শুয়ে বসে কাটিয়ে
প্রায়ই আমাদের মরে যেতে ইচ্ছা হয়।
ছাতা হাতে দামি জুতা বাঁচিয়ে মানুষগুলো হেঁটে যায়
ড্রেনের পানি আর গুয়ের পানিতে ডুবে যাওয়া শহরের গলি ধরে।
গতরাতের ঠান্ডা ঝড়ে সাঁকোটা ডুবে গিয়েছিল
সে ডুবতে চায় নি বলে ভেসে গিয়েছিল।
১৩
কিতাবে যা লেখা নাই, তা আছে মানুষে
মানবের পদচিহ্ন পাঠ করি চলো।