অমৃতা প্রীতম ৩১ আগস্ট, ১৯১৯ জন্ম গ্রহণ করেন এবং ৩১ অক্টোবর, ২০০৫ মৃত্যু বরণ করেন। তিনি একজন ভারতীয় লেখিকা ছিলেন। তাকে উল্লেখযোগ্য পাঞ্জাবি মহিলা কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রবন্ধকার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। বিংশ শতাব্দীর এই কবি ভারতের বাইরেও খুব জনপ্রিয় ছিলেন। ছয় দশকের দীর্ঘ সময় ধরে তিনি কবিতা, কল্পকাহিনী, জীবনী, প্রবন্ধ, লোক সঙ্গীত প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ২০০ গ্রন্থ রচনা করেন, যা বিভিন্ন ভারতীয় ও বিদেশী ভাষায় অনূদিত হয়।
অমৃতা প্রীতম এর শহর ও অন্যান্য কবিতা, কিংবদন্তি’র জন্যে অনুবাদ করেছেন কবি মুনমুন সরকার শইকীয়া ।
সিগারেট
এটা আগুনের কথা
তুই এই কথাটা আমায় শুনিয়েছিলি
এটা জীবনের সেই সিগারেটটা
যেটা তুই জ্বালিয়েছিলি
স্ফুলিঙ্গ তুই দিয়েছিলি
এই মনটা সব সময় জ্বলেই থাকল
সময় হাতে কলম ধরে
অনেক হিসেব লিখে রাখল
চোদ্দ মিনিট পেরিয়েছে
এই খাতাটি দেখো
চোদ্দ বছর ধরে লিখেই চলেছি
এই কলমকে জিগ্গেস কর
আমার এই শরীরে তুমি
নিঃশ্বাস চলাফেরা করল
পৃথিবী সাক্ষ্য দিবে
ধুয়ো বেরোতে থাকলো
বয়সের সিগারেটটা পুরে ছাই হয়ে গেল
আমার ভালোবাসার সুগন্ধ কিছুটা তোর নিঃশ্বাসে
কিছুটা হাওয়ায় মিশে গেল
দেখো এটাই অবশিষ্ট সিগারেটের টুকরো
ফেলে দে আঙুল থেকে
আমার প্রেমের আঁচ আবার তোর আঙুল না ছুঁয়ে নেয়
জীবন নিয়ে এখন আর কোনো দুঃখ নেই
এই আগুনটুকো সামলে নে
তোর হাতের জন্য দোয়া করি
চল আরেকটা সিগারেট জ্বালিয়ে নে
পরিচয়
তোমায় পেয়ে
এমন লাগল যেনো কয়েকটা জন্ম
আমার নাড়িতে স্পন্দিত হলো
আমার শ্বাস প্রশ্বাস যেনো তোমার নিঃশ্বাসের এক ঢোক পান করল
আর অমনিতেই আমার কপালে কয়েকটা কাল ওলটপালট হয়ে গেল
একটা গুহা ছিল
যেখানে আমি এবং একজন সন্যাসী থাকতেন
উনি যখন বাহুবন্ধনে জড়িয়ে ধরে
আমার নিঃশ্বাসকে ছুঁয়ে দেখলেন
তখন ভগবানের শপথ খেয়ে বলছি
সেই একই সুগন্ধে ভরে গেলো হাওয়া যা ওনার ঠোঁট থেকে বেড়িয়ে ছিল
এ কেমন মায়া
কেমন লীলা
যে হয়তো তুমি কখনো সেই সন্যাসী ছিলে
বা হয়তো সেই সন্যাসীই তোমার চেহারা ধারণ
করে আমার সামনে ধরা দিয়েছিলেন
আর সেই একই আমি, এবং সেই একই সুগন্ধ
শহর
আমার শহরটা একটা লম্বা বিতর্কের মতো
রাস্তা ঘাট- অনর্থক দলিলের মতো
এবং গলিগুলো এমনটা
যেনো একটা কথাকে কেউ এদিকে টানছে কেউবা ওদিকে
প্রত্যেকটা ঘর একমুঠোর সমান, চাপা লাগানো
দেওয়াল গুলো কালো কিচকিচে
নলা-নর্দমা, ওদের মুখেরা যেনো ফেনা তুলছে
এই বিতর্ক বোধহয় সূর্য থেকে শুরু হয়েছিলো
যে তাকে দেখলেই শহর রেগে আগুন হয়ে যায়
তারপর প্রত্যেক বাড়ির দরজা খুলে
সাইকেল আর স্কুটারের চাকাগুলো
গালির মতো বেরিয়ে পড়ে
আর সাইকেলের ঘণ্টা , স্কুটারের হর্ণ একে ওপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
যে শিশুই এই শহরে জন্মায়
জিগ্গেস করে এই বিতর্ক কিসের ?
তারপর তার প্রশ্নটাই একটা বিতর্ক হয়ে দাঁড়ায়
বিতর্কেই জন্ম, বিতর্কেই মিশে যায়
শঙ্খ, ঘণ্টার শ্বাসকষ্ট হয়
রাত আসে, টুপ টুপ ঝড়ে পড়ে তারপর রাত গড়ায়
কিন্তু ঘুমের ঘোরেও বিতর্ক শেষ হয়না
আমার শহরটা একটা লম্বা বিতর্কের মতো…
নাস্তিক
আজ আমরা একটি পৃথিবী বিক্রী করে দিলাম
এবং কিনে নিলাম একজন দীন-দুখী মানুষ
আমরা নাস্তিকতার কথা বললাম
স্বপ্নের এক থান কাপড় বুনেছিলাম
তার থেকে এক গজ কাপোর ছিঁড়ে নিলাম
এবং বয়সের জামা একটা সেলাই করে নিলাম
আজ আমরা এক কলশ ভর্তি আকাশ থেকে
মেঘের একটা ঢাকনা নামিয়ে
একঢোক জ্যোৎস্না পান করলাম
এই যে একটা মূহুর্ত আমরা
ধার করে নিয়েছি জীবন থেকে
গান গেয়ে সেই ধার চুকিয়ে দেব