অজিত দাশ
বিষায়িত জলের অন্ধকার
(ম্যাগডিলিনাকে…)
আমার শুধুই তোমাকে পাওয়ার চেষ্টা
এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়
এক শরীর থেকে অন্য শরীরে
যে দিকে চোখের তারা সরে যায়,
বুকের সুতো ছিঁড়ে যায়,
ধীরে ধীরে বিস্মৃত হতে থাকে
বিষায়িত জলের অন্ধকার।
কখনো বিকেলের হাওয়ায় যেন
কী রকম গুনগুন করে কাঠ চেড়াইয়ের শব্দ
অথচ কী পাবো এমন নির্বিবাদে।
কয়েক শতাব্দী কেবল তাকিয়ে দেখছে
শ্রী দেব
রজঃস্বলার পাঠ গ্রহণ শেষে
অমন সকাল মাড়িয়ে গেছে যে দৃশ্য
রাতের কাছে তা লীন….
অন্ধ হয়ে আরও প্রশস্ত করি রঙের আকার
ঊর্বরা হয়ে উঠেছে যেন তিবিধ গুণে।
রজঃস্বলার পাঠ গ্রহণ শেষে
এসেছো হে নারী—
এই বিমূর্ত কাব্যিকতায়!
কাব্যিকতা, তোমার ভেতর
তীব্র এক কামপ্রবাহ—
টেনে নিচ্ছে আবার নবরাধা ঘোরে।
বিনয় কর্মকার
খাঁচা
ঝাঁপি থেকে বেরিয়ে দাঁতভাঙ্গা সাপটা ফণা তুললো, আর এ-সব অসহায়ত্ব দেখে ফিক করে হেসে উঠলো মজমার ভীতু লোকটাও।
ভেঙ্গে ফেলো চিড়িয়াখানার খাঁচা এমন প্লেকার্ড বুকে নিয়ে রাজপথের মাঝে দাঁড়াতেই আমাকে রক্তাক্ত করলো প্রিজনভ্যানের ধারালো নখ।
অবৈধ গর্ভধারণের বার্তা ছাপাতে; কোথাও ছাপা হলো না, কাঁটাবনের পাখির খাঁচা অ্যাকুরিয়াম—-
আর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে পাশকাটিয়ে হেঁটে গেল একটা লোক, হাতে তার গলায় শেকল পরানো বানর।
সুবীর সরকার
আড্ডা
শীতকাল হারিয়ে গেলে পড়ে থাকে গল্পের খোলস
আড্ডা জমে উঠলে মাঠে মাঠে পতাকা রেখে আসি
ময়দান কাঁপানো মিডফিল্ডারকেও জার্সি খুলে
রাখতে হয়
যে লেখায় সানাই নেই।
যে সম্পর্কে হেঁটে যাওয়া খরগোশের ছায়া
নেই।
সেসব নিয়ে বস্তুত কোন আগ্রহ নেই।
স্মৃতি এক মস্ত স্থলবন্দর।
স্মৃতি জুড়ে হাহাকারের মত পাতা খসা
দুপুর
নোমান প্রধান
শত্রু
জলধির তলদেশে উল্টে থাকা এক নৌকার বুকে
জন্মানো অন্ধকার আর হাল ছেড়ে দেয়া মাঝির কপালের কলঙ্কের অবাধ সঙ্গমে জন্মেছে প্রগতিশীল কালো।
রোজ সে বাড়ছে আলেক লতার মত__
সব সয়ে যাওয়ার গ্রহে, শত্রু আছে তারও।
কৃষ্ণপক্ষের রাতে_
ডোবার জলে মিথেন ঝলকে
আগপিছ না ভেবেই, এক পলকে
বীর বিক্রমে দাঁড়াতে চায় যেই ধারণা
ভুলে বুঝে তারে, লোকে ভাবছে নয়া আলো।
শাহ্ মাহফুজুর রাহমান
স্তব
অস্পষ্টে, হাই তুলছে মরা ঘাস…
শত্রুদল নিজেদের মানুষ ভাবতে অক্ষম। অতএব,
অসমতল ভূমিতে
প্রত্যেকের হিংস্র হওয়ার চিহ্ন-
বেষ্টিত কাকেদের প্রহরায়
জনৈক বেদুইনের আহত শরীর – শোভা, মদির
বিলীয়মান-
সূর্যের তিক্ততা ফলিত হচ্ছে- চাষ- খেলায়…
আর
চারিত্রিক ঋতুমাস কোরাস করে গাইছে- ফানুস ওড়াবার
দিন…”
‘হায়, ‘উহুবাদী’ দের
যারা
দানো, কীট,কেচু বলে জানতো-
তাদের মূকাকার
এখন
দৈব, প্রশস্থিজ্ঞাপক।
অস্পষ্টে, হাই তুলছে মরা ঘাস…
ধীর লয়ে
ফর্সা হচ্ছে গিটার-
সদ্য সমুজ্জ্বল
তোমার জন্য রাতের কবিতা
চাই নিদ্রার নিশ্চয়তা, অধিক আদরজনিত ঘুম
প্রিয়স্পর্শ অনুষ্ঠানের উপভোগ
আরও চাই সুখের বিস্তারিত অনুরণন
কোমল-কাতর দৃষ্টি বিনিময়
চাইলেই পাব না জানি, তবু চাই, চাওয়াতে দোষ কী
পাশাপাশি ছায়াদৌড়, ছায়াহীন বসন্তবরণ
সাফল্যের অসুখ, ব্যর্থতার সুখ, যৌবনের শিশু
না-বোঝা অভিমান, আনমনা খুনশুটি
অভিমানে বাড়ন্ত ক্ষণ, নিজস্ব আয়োজন
এসবও চাই, চাইলেই পাব না জানি– তবু চাই
বহুবার চেয়েছি আঙুলের সাধনা, যৌবনের কল্যাণ
দৈহিক শিল্প, গ্রহণযোগ্য ঢেউ, মোহের নতুন সংস্করণ
আত্মমগ্ন গতি, তবু বারবার সব গল্পে তোমার রক্ত-মাংস
আশার জমিনে নিত্য ক্ষয়, পিছুটান, অভিমান
এরপরও চাই রূপালি, চাইলেই পাব না জানি
সঞ্জয় পুণীক
পিতলের গেলাসে আঁকা ফুলগুলো
ফুলের ধারণা হতে কিছুকিছু পাপড়ি ঝরে যায়
ধার করা রোদেরোদে তার রঙ বিধবার চোখেতে ভিড়ুক,
পাথরে খোঁদাই করা ফুলগুলো কার গান গায় ?
তবে কি ফুলের নামে মানুষ পাথরে আঁকে মানুষের মুখ ?
কথাদের জেল হলে বাতাসেরা বসে মদ খায়—
নৌকার পাল ঠেলে কোনদিকে বেদেদের সাথে যায় ভেসে?
হাতঘড়ি অচল হলে হাতে তবু দাগ থেকে যায়—
কথারা বাঁচলে প্রেম, মরে গেলে পরে কবিতা হয়ে আসে।
হাটবারে গাছে-গাছে চলে ফুল ফোটার বিরতি,
সব ফুল সেঁটে গেছে মানুষের আসবাব-বাসনের গায়ে,
সুখের সন্ধানে দেখো চারদিকে লুকানো পিরিতি
নিমেষে আছড়ে পড়ে পাথরের দগদগে পুরাতন ঘাঁয়ে।
তবু—
পিতলের গেলাসে আঁকা ফুল হতে ঘ্রাণ শুঁকে দেখি—
ফুলের ছবিতে মিশে কোনো কোনো ফুল থাকে নাকি !
রাফসান গালিব
বংশানুক্রমিক
বাবা আমার স্বপ্ন দেখতেন
একদিন তিনি বড় হবেন অনেক
ছেলেকে কিনে দেবেন খেলনা গাড়ি
মাঝখানে একটা মরুভূমি শুষে নেয়
যাবতীয় স্বপ্ন তার, শুকিয়ে যাওয়া
ঘামে আবার ভিজেও যায় শরীর
ছেলে বড় হয়ে যায়, সে – ও স্বপ্ন
দেখতে শুরু করে তার ছেলেকেও
একদিন কিনে দেবে খেলনা গাড়ি।
বাবা তবুও দাঁড়িয়ে থাকেন আজও
খেলনার দোকানের সামনে
এভাবে বংশানুক্রমে আমরা চড়ে বসি
একটা খেলনা গাড়িতে
আমাদের যাওয়া হয় না কোথাও
হয় না আদৌ বড় হওয়া
আমাদের স্বপ্নগুলোর ফুরিয়ে যায়
ব্যাটারি
মোস্তফা তারেক
ইস্কুলকালের ইরেজর
মুহূর্তেই মুছে নিত ভুল বানান
না হয়ে ওঠা নদী ও বৃক্ষের আঁকাআঁকি
ইস্কুলের ইরেজর আমার রঙিন আর সুগন্ধি
এই যে এত যে ভুল – ভুল চোখ
ভুল – ভুল মন, ভুল – ভুল মুখের ছবি
এই যে এত যে কষ্ট বুক ভারি
আহারে! কোথায় থাকো আজ?
ইস্কুলের ইরেজর আমার রঙিন আর সুগন্ধি।
সাফওয়ান আমিন
ওষধি
সহজিয়া ধ্যানে বোধহয়
মাকড়সা সেঁধিয়ে রাখেন বুক-
মেটারনিটির নামে
নিজেই ছা- এর খাদ্য হয়ে যায়…
কী তরিকা পালন করিলে গো মা
আমার মানবজনম তো বুঝলো না!
মা বোঝে এপাড়ে ক্রমশ হচ্ছে বিলীন,
ওপাড়ে নতুন সৃষ্টির উল্লাস-
তবু তৃপ্তির বুদ্বুদ সন্ধ্যার ভিতর…
কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঘ্রাণে
নিজেরই ফাঁদজালে ঝুলছে আটটি শূন্য-
বিজয় আহমেদ
মেহেরের প্রতি নিবেদন
মেহের, উঠেছে সূর্য ব্রণের আড়াল পেয়ে পেয়ে
স্তুতি রাখো দেহে আজ। যেনবা দরদ লুকিয়েছে–
কোথাও। বেহেস্ত আর কতইবা দূরের কৃষিজমি
জবানের কাছে ঈর্ষা এই, প্রেমে পড়ে গেছি তোর।
ধূলিঝড় শেষে, তুমি রক্তিম লাজুক এক মাছ
গর্ভে পুনরায় করো ধারণ, পালন দুনিয়ায়;
আমার কিছুই নেই সিনায় সাহস ব্যতিরেকে
তোমার পিঠের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যেন জাগি রোজ।
মেহের, কিছুই নেই আর অবশিষ্ট দুনিয়ায়
যখন ষাঁড়ের শিং থেকে মেঘ, হয় কেন্দ্রাতিগ;
তখনও আমিই মুয়াজ্জিন শেষ বিচারের দিনে
বলি ভালোবাসি তোকে, ব্রণের আড়াল সহ্য করে।
চঞ্চল মাহমুদ
উচ্চতা-বিষয়ক
এই অনুর্বর মাটিতে পাথরের চাষ করে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি অ্যালেক্স। দিন শেষ হয়ে এলে আমরা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছি। দূর থেকে কেউ কেউ ভাবছে শুয়োরের খামার জেগে উঠেছে পৃথিবীতে। আমাদের সেইসব তরঙ্গ উৎপাদনের দিন হেঁটে গেছি পাহাড়-ঘেঁষা রাস্তা বেয়ে। আর নিয়মিত পাহাড় ধসে গেছে আমাদের উপর।
অ্যালেক্স, আমরা চাপা পড়ে গেছি উচ্চতার নিচে।
কুশল ইশতিয়াক
কোনোদিন পাওয়া হয় না
তারার বাগান তলে
মাটির সাজানো পথ
গাছগুলি মাথা নাড়ে
ফুলের সৌরভে জগত ইশারাময়
এরকম রাতটিকে মনে হয়— নিছক কল্পনা
আমাদের রূপকথাখানি, নীরবে তোমাকে বলি
তোমাকে যতই পাই, কোনোদিন আমি পাই না
হাওয়ার গোছানো রাত, যদি সারারাত—
স্থির ধরে রাখি
চুল সরে যায়, বাতাসে আঙুল কেটে যায়
রূপার জাদুর কাঠি
অলক্ষ্যে লুকিয়ে রাখি
বুকের পিঞ্জর জুড়ে শুধু অপূর্ণতা
নিশ্চুপে দুজনে শুয়ে থাকি
পাশাপাশি। সিলিংয়ে কি চাঁদ থাকে?
এত কাছাকাছি থাকি ভেতরে-বাইরে
কখনই, কোনোদিন পাওয়া তোমাকে হয় না
হোসেন রওশন
জ্বর
বাংলা সিনেমায়
বোতল ভাঙ্গার দৃশ্য দেখে
চোখ সরানোর বয়স তখনও হয় নাই।
তোমাকে চিনতাম। তোমার মাকেও।
সিনেমার দৃশ্য দেখে চোখ সরানোর বয়সে
তোমার মায়ের পাশে দাঁড়ায়ে থাকা এক স্কুল টিচারকে চিনতাম। মায়ের প্রেমিক।
তুমি উনাদের প্রেমের ভিতর টিফিন ক্যারিয়ারের ভূমিকায় থাকতা, প্রায়ই সময়।
আর তিনজনেই ঘুরতে গেছিলা ডোমার ফরেস্ট।
বহুদিন পর ঐ ফরেস্টের এক ড্রেনের পাশে
একটা ছেঁড়া কামিজ দেখে আমি বাড়ি ফিরছিলাম।
সেইরাতে আমার খুব জ্বর আসছিলো।
মোস্তফা হামেদী
আভা
মৃত ফুলের ঝাড় থেকে খসে পড়ছে রোদ
এক অনুক্ত দুপুর
মেঘে নিপাট হয়ে আছে;
আমি তার সঙ্গী হই
এক হতশ্রী গাছের মতো বিগত গানগুলি
গেয়ে চলেছি
ডুবে থাকা বিল কিছু ধ্বনির জোগান দিয়ে যায়,
যখন মন্দ্র মুহূর্ত
ছিন্ন কোন ঋতু ফুরিয়ে এসেছে এখানে,
যেন খসা ফল
স্রোতে বহুদূর ভেসে গেল;
তার আভাটুকু লেগে আছে এই এখানে
পাতায়, ডালে, স্মরণঘরের গোলায়।
সারোক শিকদার
বিকল্প প্রস্থান
আর একবার সচেতনে পাপ করতে চাই-
তোমার প্রেমে পড়ার মত নিখুঁত পাপ।
যেন সিংহের ধারালো দাঁতের ফাঁকে নিরুদ্বেগ বসে
শিকারের রক্তের জন্য এ এক আদিম অপেক্ষা,
এই অপেক্ষা আছে বলেই আজো চলমান যুদ্ধ
বিরতির নামগন্ধহীন পূনঃপূনঃ আঘাতের আয়োজনে
তোমার চতুর্পাশে পুঁতে রাখে সচেতন ফুলেল মাইন।
নিশ্চিত থাকো, এই ফুল বিস্ফোরিত হবে একদিন
আর তোমার মাংশের ভেতর বুনে দেবে প্রেম-
প্রত্যেক অবহেলার প্রতি নেবো নির্মম প্রতিশোধ
অভ্রান্ত প্রতিটি তিরষ্কার আর চতুর এড়িয়ে যাওয়া
ভারীমেঘা আকাশে সন্ধ্যার মত নিস্তব্ধতায় ডুবে
এই বিষাদ ও বিরহের আয়োজনে তোমাকে রাখবো
চিতার চন্দন কাঠ করে, যৌথ পুড়ে যাবার আয়োজনে।
তোমার নিরীহ চোখে একে দেবো আজকের গুপ্ত ক্ষোভ
সন্তর্পণে তোমার দুর্গম উপতক্যায় আমার পতাকা ওড়াবো
সমস্ত অহংকারের চুর্ণ দেহাবশেষের পাশে তোমার মিনতি রেখে
তোমাকে চূড়ান্ত একা করে চলে যাবো, পাপীরা যেমন যায়…
সারাজাত সৌম
বাজিকর
তারই চোখ আমারই চোখে জীবাশ্মের মতো কোথায় যে উড়ছে কখন!
কারখানার শব্দরে মতো ফেটে পড়ছে চারদিকে শরীর-সন্ধ্যা এবং সানাই।
দেখো পিতলের পিন থকে উড়ে যাচ্ছে ফুল-ফলের স্বভাব আমারই। যতোদূর
এই পা পেঁচানো আছে পাপে কিংবা প্রেমে, তারই ঘর এখন পড়ে আছে উদলাই।
শূন্য থেকে ছুটে আসছে সফরীর ঘোর, আর তোমার হাতের তালুতে মেহেদি
আঁকা ঘোড়াটি লাফিয়ে পড়ছে জগতে-যেন তার প্রতিটি শব্দ ছড়িয়ে দিচ্ছে
রৌশনাই।
এই চোখ বাজি ও বাজিকর হতেই পারে আজ রাতে-মিথ্যা ও মিথের ব্যবহারে।
আর দাবার ঘরগুলি ভরে গেছে শকুনে-শ্মশানে, উড়ে যাচ্ছে বালক হাওয়াই মিঠাই।
নাঈম ফিরোজ
সম্ভবত— কিছুই হারায়না
হারানোকে আনকা অবাক করে দিতে পারে কেউ কেউ,
যারা ঘুম থেকে জেগে ওঠে খরচ না করে নিজেকে, নিকানো স্বপ্নে।
কিছুই হারায়না আদপে, রুপান্তর এ টিকে থাকে,
সেটাও কোনো বড় কথা নয়, উৎস টিকে থাকে
হারানোকে ফিরে পেতে নতুনরুপে।
আবার টিকে থাকে হারানোর স্মৃতি, সেটাও
হৃতজিনিসের অবচেতনভাবে বেঁচে থাকা,
বহুপশলায়
ফিরে পাওয়াটাওয়া স্থিরায়ু, অমরতা।
হারানোকে আনকা অবাক করে দিতে পারে কেউ কেউ,
যারা ঘুম থেকে জেগে ওঠে খরচ না করে নিজেকে, নিকানো স্বপ্নে।
সব ফিরে আসে ফের, কিছুই হারায়না—
সম্ভবত হারানো এতো সহজ নয়।
উপল বড়ুয়া
ব্রেক-আপ
আমি কি তারপর
হয়ে যাব দূর, পর!
থাকবে না কিছুই
আমাদের ভেতরে।
যা ছিল, প্রেমত্রেম
দুয়েকটা নিকনেম
রবে না কিছু তার
আমাদের ভেতরে।
যা কিছু যায়, দ্রুত
যেমন, নদী ও দিন
মানুষের চলাফেরা
আমরা আজ মৃত।
যা কিছু চলে গেল
লোকাল বাসে চড়ে
কালো ধোঁয়ার মত
আমাদেরও তেমন
স্মৃতি থাকতে পারে।
নাদিয়া জান্নাত
যোগাযোগ
চমৎকার এই হায় হায়, জানলা খুললে ভেসে আসে বাতাস, জননীর ঘরে তুমি শুয়ে আছো গুঁটিসুঁটি হয়ে
না থাকার দিন বেদনার ভারে কত টানটান
ঘ্রাণে ঘ্রাণে কত গোপন কত মারাত্মক!
গোগ্রাসে যদি ধরা যেত তোমার হাত, ঘুমের ভেতরে
ফ্যাকাশে দিনে ফুলদের আয়ু নিয়ে নদী সমেত বসে আছো তুমি, আকাশগঙ্গায় যখন তোমার কাছে উড়ে আসে ফড়িং, সে যেন আমি হয়ে যাই
আমার ভেতর ক্রমে ক্রমে জাগে পাহাড়
সরে যাওয়া আলোয় আমি তোমাকে ডাকি, মনে মনে
শৈবাল নূর
শারদীয়
মনোরথ জুড়ে তুমি কার অপেক্ষা করছো
সে কি আমার ছায়া না দেহ—
নৈঃশব্দের গভীরে যে একাকিত্ব
তা তেপান্তরে হারিয়ে যাওয়া নিশিট্রেনের শব্দের মতো প্রতীকী
হাসপাতাল ফেরত মানুষ যেমন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে
তেমন যদি আমাদের অশ্রুপ্রণয় ঘটে
তবে শরতের কাশফুলে প্রতিমা বিসর্জ্জনের সন্ধ্যা হয়ে
আমাকে খুঁজবে কি তুমি?
আমাদের সাম্প্রদায়িক ক্ষত জুড়ে একটিবার
শুশ্রূষা হও, সবুজ হও প্রেমে
ক্লান্তি আসার আগেই
তোমার হৃদয়ের ধারণা জড়িয়ে শুধু বলতে চাই
ভালো নেই মা—
ফরহাদ নাইয়া
উড়ে যায় টেন্ট
গৃহ নাই, একটা জানালা সাথে লইয়া ঘুরি। জানি ঘর বানাইতে পারলেও দরজা বানানোর টাকা আমার কখনোই হবে না। তাই জানলা বানাইয়া ঘুরি। ঘরে আমি প্রবেশ করতে না পারলেও আলো-বাতাস যেন প্রবেশ করতে পারে, যেন ঢুকতে পারে তোমার বাড়ির ফুলের গন্ধ।
দিপংকর মারডুক
প্রাক্তন
যদি জাগাও দৈবচয়ন
তবে হে প্রাক্তন, ডানা মেলে ক্লান্ত পাখি আমি
তোমার কৃপা করে কম্পমান কিংবা একসমান
কোথায় আজ জ্যামিতিক ক্লাসের পরস্রীকাতরতা
কে ছিলো মুখোমুখি ছুতোয় ফেলে রাখা বলবিদ্যার জমজভাই
এতোটাই নিকটে তুমি—আগুন, সমাজ, খোলামেলা মাঠ
এখানে ওখানে যা কিছু আলফা বিটা ওমেগা! এবং
মর্ত্যলোকের পরিধিহীন পাশ কেটে যাওয়া পাকা সজনে চত্বর
তবু এলোমেলো রাখি ওই হাঁটুভাঙা নদীকূলের দীর্ঘায়ু
নেহাতই নিম্নচাপে আকরিক ও বাতাস বাতাস সমস্ত ঋণ
ম্রিতোষ তত্রাচ
পদ্ধতি
ধনুক পদ্ধতিতে টিকে আছে জীবন
সুতাটা ছিঁড়ে যাবে, সাপটি সোজা হবে
তার আগে ফনার ফেনায় লুটোপুটি খাবে ঝিনুক
আর ফোস ফোস নীল রাতের পেটে ব্যাঙ নাচবে ভীষণ
গানের লিরিকে টগবগ লিকারের ভয়েল
ধনুকের ফলায় বিদ্ধ
নিথর পরে আছে হরিণ
কে যেনো বিলাপের মূর্ছনায় কাঁপাচ্ছে বন
সুন্দরী গাছের ডালে শকুনেরা স্তব্দ
পাশাপাশি ভাসছে ধনুক ও সাপ আর প্রাণ
অথৈ ঢেউয়ে প্রাণীর থেকে দূরে ঘুমিয়ে আছে প্রাচীরের ভেন্টিলেটারে
কিশোর মাহমুদ
কোরবানি
( মুর্শিদ ক্বেবলা শাহ্ সূফী সাইয়েদ আলম নূরী আল্ সুরেশ্বরী বাবার চরণে)
মুর্শিদ তোমায় ভালোবেসে
আমার নিবাস হলো অশ্রুদেশে
তাতেই রাজি ওহে পুষ্পপুরুষ
সুর-সুবাসে করো দেওয়ানা
গলায় এস্কের পোঁচ মারো
ছড়াক রক্ত পিনকি দিয়ে
রসুল প্রেমে উঠুক হাঁক
মহা-মদে মাতাল দেহের
শিরার বাঁধন খুলে যাক
যেমন খুলে কসাইখানায়
ছুরির ধারে ফরফরে
তেমন খুলুক চামড়া আমার
নূরজাহানের আদরে আদরে
প্রতি পোঁচে মাংস আমার
ডাকবে মাওলা বার বার
কাঙ্গাল যত ভুখার পেটে
সুস্বাদু হোক এই আহার
আমার হাঁড় কোপানো সময়
ওয়াইসীপাক স্বরণ হোক
পাথরে দাঁত ভাঙার মতন
কোপে কোপে সে আওয়াজ হোক
অনুরাগের কবিতা এ নয়
নয় ইব্রাহিমের খোদার সেই চাতুরী
কসম মাওলা আলী জুলফিকারের
সর্বস্ব বেঁধেছি দিয়ে কলেমা দড়ি
নূরী-চান্দের নূরানী ঝালর
ঝলসায় যেমন রাত্রিময়
বক্ষ মাঝে নূর-জালালি তেজ
কলব ঘরে জানু জানু জাগো আলো প্রলয়
এমনতরই বন্ধুর প্রেম
এই দেহেতে কসাইখানা
আরশ কুরসি লৌহ কলম
এই হারামেই হয়েছে ফানা
তাতেই মধুর কুরবানি হই
হয়ে নূর-জাহানের দেওয়ানা
কাউকাব সাদী
মাধ্যাকর্ষণের সহজ ভূমিকায়
খতিবের মোড়ে এলে
লোকটারে দেখি— অতিকায়
সাড়ে এগারোটার রাতে
নিভে যায় দোকানপাট
কিন্তু নিভে না দুয়েক
তাদের শপ-কিপারেরা
ঢিমে আলোর রশ্মিতে
অনন্ত হিসেবে আছে?
কেনো তারা দাঁড়ায় না সে চোখ অনুসরণ করে?
ও কি গাঢ় কাজল পরে থাকে?
কাটা কাটা ব্যঙ্গ —কে জানে —দুঃখ হবে
কীভাবে একা তাকাবো সে গভীরে ?
কীসের এতো হিসেব দু’চার দোকানির?
সমান্তরালে ,কেনো তারা দাঁড়িয়ে
ছয় ফুটের কম হতেও পারতো সে লোকের চোখের রেটিনায়
পানি ঢেলে দেয় না? দৃষ্টি নরোম করে না?
কীভাবে পৌঁছুবো ঘরে
খতিবের মোড় না হয়ে
আহা, এমন অনন্ত রাত্র আমার ফুরায় না
দিনের খেয়ালে
যখন ঘুমে আছি, দূর প্রবোধের ঘুমে
তার রাত, বোধ করি, কেটে গেছে
গায়ে শাড়ি চাপিয়ে
তালুতে তালু বাজিয়ে লোক,
ভোরের দোকানে হাজির
রবিকান্ত পয়সা তোলার প্রস্তুতিতে
সাঈদ শ
ভান
যেভাবে নদী আড়াল করে রাখে গভীরতা
সেভাবে নিজেকে করি
আড়াল
অতলে মীনরাশি, গোপন ভিত
নড়ে ওঠে হাওয়ার ইশারায়
অরণ্যে চিঠি লিখি
আর নিয়ম মেনে করি সঙসার
এত যে চাই তাকে
তবু দু’শব্দ করি না মুখে
ফুলের দেশ থেকে দূরে
পাথরে বসিয়ে রাখি প্রাণের মৌমাছি
মনে হয় এমন–
একটা ফুলের চেয়েও কম ফুটে আছি
বায়েজিদ বোস্তামী
এমনকি স্বপ্নেও
ঘুম থাকি জাগি
তোমারে শোনার পিপাসা নিয়া
পিপাসা মেটে না
কী এক দুনিয়ায় থাকি!
অগত্যা যন্ত্রস্থ স্বর শুনি
ইহুদি নারী হিব্রু ভাষায়
সলোমনের গীত গাহে
আন কোনও পীরিতের গীত
গাহিতে জানে না সে
ঘুমায়ে পড়ি ফের
স্বপ্নে আমি খালাসি এক
আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরে
ছুটির ষোলোআনা
উসুলের ফিকিরে
উদ্ভ্রান্ত ঘুরিফিরি
আকণ্ঠ শরাব পিয়ে মাতাল হই
বন্দর-বেশ্যার সাথে করি আশনাই
ইজিপশিয়ান রমণীর
বগলের ঘামঘ্রাণে
তোমারে ইয়াদ আসে
আমি কি কখনোই
তোমার থাকি দূরে যাইতে পারবো না?
এমনকি স্বপ্নেও!
নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
চাঁদ ও চন্দ্রমল্লিকা
চাঁদ ও চন্দ্রমল্লিকার নামে একটা খুন করে ফেলেছি। আমার হাতে রক্ত লেগে গেছে। গত ছত্রিশ বছর ধরে এতো ধুচ্ছি তারপরও হাত লাল হয়ে আছে।
জেনেছি, তোমার পায়ে এই লালে অলক্তরাগ পরালেই আমার হাত ফিরে পাবে পূর্বের বর্ণ।
তুমি আসো না কেনো? হাতে রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকা অনেক যন্ত্রণার। কেনো পৃথিবীতে এখনো তোমার জন্ম হয় না, কুসুম?