চ্যালেঞ্জ
রুপা একটা প্রশিক্ষণে গেছে। সাথে দেড় বছরের ছেলে। যাওয়ার সময় ভালই ছিলো। হঠাৎ করেই শুরু হলো ছেলের বমি, ডায়রিয়া। সে কিছুই খাচ্ছে না। ঔষধও রাখতে পারছে না, বমি করে ফেলে দিচ্ছে। রুপা না পারছে ছেলের যত্ন নিতে, না পারছে প্রশিক্ষণে যোগ দিতে! সে ভাবে, এটাই কর্মজীবি মা’দের অনেক চ্যালেঞ্জর মধ্যে একটি……
নিজেকে আড়াল
রুপা ভোর বেলায় বের হয়ে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে এসে শাহেদকে বলে, “শুভ বসন্ত”। শাহেদ হাসে আর বলে, “গাধা, আজ ৩১ মাঘ।” রুপা এতে কিছু মনে করে না। রুপা জানে, শাহেদ তাকে অপচ্ছন্দ করে! মাঝেমাঝে ভালবাসার অভিনয় করে! আর রেগে গেলেই গালাগালি, তুইতোকারি করে। রুপার এতে খুব কষ্ট হলেও নীরব থাকে…..
যে জীবন দোয়েলের
রুপা প্রতিদিন রাতে একের অধিক ঘুমের ট্যাবলেট খায়। নিরবে কাঁদে। চোখের কোণে কিংবা হৃদয়ে নিঃসৃত হয় জল।এলোমেলো অনেককিছু ভাবে, এরপর হঠাৎ ঘুমিয়ে যায়। ‘ ইস্ তোমার এত্ত ঘুম, এপাশ ওপাশ’ও করো না, সারারাতই মরার মত ঘুমাও।’ শাহেদ ঠাট্টা করে, হাসে! রুপার কষ্ট আরো বেড়ে যায়! শাহেদ এই ঘুমের কারনও খুঁজেনি কোনদিন!
জলময় জীবন
ছুটিরদিনে সকালেই গাড়ী নিয়ে শহর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। শাহেদকে বলে গ্রামের মেঠো পথে ঢুকে পরতে। রুপা সবুজ ভালবাসে, তাকিয়ে আছে গাছগাছালির দিকে! নিজেকে হারায়ে টেনে নিয়ে যায় অতীতে! পাশে বসা মানুষটার ভালবাসা, কখনোবা মনে হয় অভিনয়! রুপা বাইরে তাকিয়ে থাকে, যতদূর তার চোখ যায়, একসময় চোখ জলে ঝাপসা হয়ে আসে……..
হুইল চেয়ার
“করোনা বা যা-ই হোক একুশ, ফাগুন, বসন্ত, ভ্যালেনটাইনস সবদিনগুলোতে লাল, বেগুনি, সাদায় রাঙাবো আমাদের ভালবাসাকে, খুব বেড়াবো, বসন্ত এসে গেছে।” বলে শাহেদ। রুপার হাত ধরে, গালে, চোখের পাপড়ির কোণায় হাত দেয়, অনুভব করে, চোখটি ভেজা। একসময় রুপার গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরে! রুপা হুইলচেয়ারে বসে দূরে কোথায় যেনো তাকিয়ে আছে….!
পাখি ও একঝাঁক স্বপ্ন
শাহেদ বেলকনিতে আছে। করোনা শুরুতেই বিনানোটিশে সে চাকুরীচ্যুত হয়। ছেলে ১০ম শ্রেণীতে উঠেছে। স্কুল বন্ধ থাকলেও এসাইনমেন্টের অজুহাতে প্রতিমাসে বেতন দিতে হয়েছে। ছেলে বলে, “বাবা, ভর্তির সময়, স্কুলের উন্নয়ন তহবিল বাবদ দশহাজার টাকা দেওয়া হয়নি, দিবে না?” দূরে একঝাঁক পাখি উড়ে যাচ্ছে, শাহেদেরও ইচ্ছে করে শিকল ভেঙে অজানায় উড়ে যেতে……।
অধিকার
দুই মেয়ের পর এবার অবশ্যই ছেলে, আশায় ঘুম নেই রুপার চোখে। সেদিন পরীক্ষা করে তার স্বামী জেনেছেন, এবারও মেয়ে! রুপা জানে না। গতকাল চেকআপে এনে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। আজ সকালে জ্ঞান ফিরতেই রুপা শুনলো তাকে গর্ভপাত করানো হয়েছে! কান্নায় আর চিৎকারে বলে উঠলো, “এইটা অন্যায়, নির্যাতন, নারীর প্রতি অন্যায়……..
দৌড়
করোনার শুরুতেই হেমার বাবার গার্মেন্টসের চাকুরীটা চলে যায়। হেমা দশম শ্রেনীতে উঠেছে। গত সপ্তাহে হেমার দুই বান্ধবীর বিয়ে হলো, একই পাড়ার। বারান্দায় সেই ঘটক চাচা, তার বাবাকে ফিসফিস করে কি বলছে! হেমা পিছনের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যায়, হাঁটতে থাকে ক্ষেতের আল ধরে। দুপাশে হলুদ সর্ষেক্ষেত। কিছুক্ষন পর হেমা দৌড়াতে থাকে…..।
সম্পর্কের আয়না
অনেকদিনের ভালবাসা। পারষ্পরিক যত্ন, ভালবাসা, শাসন সবমিলিয়ে তাদের সম্পর্ক। মাসখানেক হাসানকে ফোনে পায় না পূনম। রিং হয়, ওয়েটিং থাকে। হঠাৎ ফোন রিসিভ করে হাসান। “হ্যালো পূনম, বলছিলাম, ফোন দিবা না, সহ্য হয় না তোমাকে, আমিতো নিজেকে তোমার কাছে বিক্রি করে দেইনি।” ঠাস করে ফোন কাটে হাসান। পূনম আবার কল দেয়……..!
তৃপ্তি
জামালপুরের যমুনার চরের হানিফা “কাজের বিনিময়ে টাকা” একটা প্রকল্পে কাজ করে পাওয়া ৪৮০০ টাকা দিয়ে চাল ডাল তেল লবন এর পাশাপাশি চারটি মুরগী কিনেছে। তিনটি ভবিষ্যতের জন্য পালন করবে, আর একটি রান্না করে খাবে। খেতে বসে হানিফার ছেলে সুমনের চোখ চকচকে আনন্দে, “আম্মা, আইজ ছয় মাস পর মাংস খাইবার লাগছি!”