ধার
হাতখরচের জন্য অনেক বছর পর
তোমার কাছে কিছু সুখ ধার চাইতে গেলাম
শোধ করতে পারব না জেনেও তুমি রাজি হলে,
তুমি বললে, ‘তোমাকে আজ সেই সুখ ধার দেব
যে সুখ আমি কুড়ি বছর অপেক্ষা করে পেয়েছি-
তোমাকে সেই সুখ ধার দেব
যে সুখ প্রণয়ের স্মৃতি হয়ে চোখে ভেসে ওঠে
তোমাকে সেই সুখ ধার দেব পার্থ!
যে সুখ বিরহের যন্ত্রণা হয়ে বুকে বিঁধে আছে-
তুমি কি নেবে না বলো?
ধার চেয়েছো, তোমাকে কি ফেরাতে পারি?
তোমাকে আজ সেই সুখ ধার দেব
যে সুখ অবহেলা আর উপেক্ষার মাঝে পেয়েছি
তোমাকে আমি সেই সুখ ধার দেব
যে সুখ ঘৃণা থেকে আমি কুড়িয়ে নিয়েছি বহুকাল
আমার কথা শুনে দেয়ালে কি পিঠ ঠেকেছে তোমার?
এবার কি ঘুরে দাঁড়াবে? তোমার সম্মুখে আমি
তুমি ধার চেয়েছো, তোমাকে ধার দেওয়ার সুযোগ
আমি কি হেলায় হারাব?
আজ সেই সুখ ধার দেব তোমাকে
যে সুখ অশ্রুর দাগে এতগুলো বছর ধরে আগলে রেখেছি
তোমাকে না পাওয়ার সুখ, আজ তোমাকেই ধার দেব।’
বিপরীত শব্দ
মাঝি আজও ঢেউকে হৃদয় দেবে
ডুবিয়ে দেবে সকল ভালোবাসা
রাতের ঠোঁটে বিষ মিশিয়ে যেন
অন্ধ বুঝে অন্ধকারের ভাষা
বনের ভেতর কোন কাঠুরে এলো
গাছটা তাকে হৃদয় দিলো বুঝি
সে কি বুঝে করাতকলের ভাষা
মন যেন তার অলক চুলের গুঁজি
ভোরবেলা এক নদীর কাছে গিয়ে
দেখে এলাম মাছের ভালোবাসা
মন নিলো তার মাছরাঙা এক পাখি
তারও ছিল হৃদয় ভরা আশা
ডানায় চেপে মেঘের আকাশ যেন
তীরন্দাজের পথে নেমে আসে
খাঁচায় হৃদয় ফেলে আসা পাখি
সে যে আজও ধনুক ভালোবাসে
ঠিকানা
রোজ রাতে, করুণ সেতারের মতো
রক্ত বেজে ওঠে
কতো চাঁদ অবহেলা করে দেখিনি উঠান
শুনিনি কতো পাতার আবৃত্তি, ফেটে যাওয়া নিদারুন ঠোঁটে!
বড় আফসোস নিয়ে কেটে যায় এইসব মামুলি বিকেল
যোগ বিয়োগের যে খেলা পেতেছে জীবন
তার মাঝে প্রেমের সংজ্ঞা বসিয়ে দিয়েছি
এ যেন সার্থক গাণিতিক বাক্য!
তবু হারানোর মাঝে পাওয়ার যে বেদনা পেয়েছি
সেইসব ফিরে আসে রোদের হাসিতে-
যেন প্রতিটা ভোরে বুক খুলে ডাকে শোকাহত পাখি
বলে, ‘এই কি আলোর রঙ? হাওয়ার আদর?
আবার কি ফিরেছো এই রক্তের স্বাদ নিতে?’
ভেবেছিলাম মোম জ্বেলে দিলে
মাথা নোয়াবার ভাষা খুঁজে পাব
আরো একজোড়া পাথুরে চোখ প্রেমের উত্তাপে গলে যাবে
ফোঁটায় ফোঁটায় সে-ও একদিন অশ্রু ঝরাবে
অথচ হায়! মিথ্যে আশা নিয়ে সব কাজ করি
ডাকি, ফিরে এসো! ফিরে এসো স্মৃতির সময়
এক চিমটে আশ্রয় দাও, যেন আজীবন থেকে যেতে পারি;
তারপরও কোনো সাড়া নেই, আকাশের পাড়ে আসে রাত
সেই রাত! যার বুকে ডানা ভাসায় মানুষ রঙের পাখি
তার ছিল রূপালী রঙের দুই ডানা
এতো এতো চিঠি ঘেঁটেও, কারো দুয়ারে
নিজের নামে আজও পাইনি ঠিকানা।
রঙমশালের স্রোত
দৃষ্টি গোচরে রেখে জানলা বন্ধ করি-
চাই না এ চোখ
এই রঙমশালের স্রোত একটু দেখুক,
একটুও চাই না সুখ জীবনের
ভুলে গেছি যা; নাম- ঠিকানা
আরো কিছু স্মৃতি ভুলোমন
শুনি, পায়াচারি ছেড়ে থেমে যাওয়া গান
আনন্দের থেকে বেদনা বরং ভালো
জানি, সেই পথশিশু
সাইনবোর্ডের অনুদান ভুলে দেখেনি পাহাড়ি ফুল
খুব ভুল হয়ে গেল, প্রেম! জীবনের বড় ভুল যেন!
আরো কিছু ভুল জমিয়ে রেখেছে পকেট
পয়সার বদলে যদি কিছু ব্যথা পাও
এই পথ সরে গেছে- সরিয়ে রেখে তবু ছায়া
কুড়িয়ে নেবে না-কি পাখি?
কালো রঙ, খুব কালো- আঁধারও যেখানে বেমানান
যার কাছে কবিতার ভাষা পানির মতন সহজ
সে-ও কি আজ সুখ ভাঁজ করে, রেখে দেয় গোপন ড্রয়ারে?
পানি কি এতই সহজ? বুঝা যায় ডুবে গেলে পরে
বুঝা গেল অশ্রু হাওয়ার চাকা নিয়ে ঘুরে
বেনামী ঘুড়ির কাছে যতো চিঠি আসে
তারও তো নাম নেই! পানির অপর নাম না-কি জীবন?
জানি, দুপুরবেলার ঘোড়া পিওনের মতো খুব ছুটে
আরো জানি প্রেম, ক্ষতের ঢাকনা হয়ে বারবার ফিরে আসে
রক্তে রক্তে কবিতার মতো দীর্ঘ হয় রাত
চাইলেই কি পথ থামিয়ে দেয়া যাবে?
আরো জানি, কোথাও তো কেউ বলে!
এই যে কবিতা
কোন পাখির মতো মাথার ওপর দিয়ে গেল উড়ে?
তারচে কি থেমে যাওয়া ভালো?
যখন জানাই গেল না গন্তব্য, চেনাই হলো না কারো দুয়ার
বৃথা কার কাছে যাবে?
তারচে কি ভুলে যাওয়া ভালো
যখন কিছুই মনে নেই; নাম- ঠিকানা অথবা কোনো স্মৃতি
জানি, আজকাল চোখও রঙ পাল্টায় আকাশের মতো
সাদা, কালো না-কি নীল? কোন রঙ ভালো লাগে তার?
যখন কিছুই মনে নেই
আজকাল সবকিছু ভুলে যাওয়ার রোগ হয়েছে আমার।
অসুখে বৃষ্টিও কাঁদে
অবশেষে বৃষ্টি হানা দিল
মেঘ ছেড়ে গেল তার বুক, ভীষণ অসুখ যেন
যে অসুখে বৃষ্টিও কাঁদে
তবু্ও তো কোনো একদিন হেসেছিল সে!
তার হাসির রঙ ছিল না-কি খুব সাদা?
তাই যদি হয়- জানি, আয়নায় চোখ রাখে নদী
পৃথিবীর প্রথম মোরগের ইতিহাস
আর তার রঙ কী ছিল, লাল না-কি কালো
এমন প্রশ্নও লিখে রাখে মানুষ
এমনও কি দিন আসে, স্মৃতিহীন?
প্রেম ছিল কুয়াশায় রঙহীন যেন!
কলমির ফুলের ভেতরে আজও কিছু সুখ লেগে আছে
ছুঁয়ে দেব? আজও খুব ভয় হয় তারে!
মনে হয় যেন চাঁদ ডুবে যাবে
মনে হয় আরো কাছে আসি দূরে গেলে পরে
যেন পথিকের কথা লিখে রাখা বহুক্রোশ দূর
আবারও যদি মেঘে ভেজা পাহাড়ের ডাক শুনি
তবে যাবো, তার কাছে গিয়ে হৃদয় খোয়াব
জানি, আজও তার হাসি বৃষ্টিকে ভিজিয়ে দেয়
সেই বৃষ্টি হানা দিল মনে— মেঘের আদরে আজও খুব ডাকে
হৃদয়ের গানটুকু চোখের এই পাড়ে এসে
তারে খুব চিনি, যে বেঁচে আছে মাকালের ফল ভালোবেসে।