অনিকেত
হৃদয় রেখে ঘরের কোণে
মানুষ যায় চলে
উর্ণনাভ আঁধারজল ব্যথায় টলটলে।
উঠছে পড়ছে, ভাঙছে তীর
আশার স্রোতস্বিনী
মৃত্যুমুখ নীল -নীলাভ দুঃখ সুরধুনী।
ইষ্টনাম জপতে গিয়ে আধেক বোষ্টমী
মালা গাঁথা অসমাপ্ত
পুড়ছে হৃদয় জমি।
ও বোষ্টমী টুকুন দাঁড়াও
ভিক্ষাপাত্র দেখি
উপুড় করো ঝোলার থেকে কৃষ্ণনামখানি।
হা কৃষ্ণ, হা কৃষ্ণ!
কোথায় পাবো তারে
হৃদয় রেখে ঘরের কোণে
মানুষ গেছে চলে।
মধ্যাহ্ন চিল
মধ্যদিনে উড়ছে যখন
প্রচ্ছায়হীন একলাটি চিল
সুপক্ক সব ধানের ক্ষেতে
দাঁড়িয়ে আছে সঙ্গীবিহীন
কাকতাড়ুয়া।
এরপরেও কবিতা লেখা
এরপরেও পুরনো লেখার কাছে আত্মসমর্পণ
এরপরেও যূথবদ্ধ সময়ের জন্য আকুতি
এরপরেও আদরের অভিজ্ঞান।
মধ্যদুপুর ক্লান্তি বিহীন
উড়ছি একা।
খুব ইচ্ছে করে, নিজেকে
প্রচ্ছন্ন ছায়ার কাছে বন্ধক রাখি।
তৃষ্ণায় জলে
জল আর তৃষ্ণায় মাখামাখি দিন
কাটে আবার কাটেও না।
আকাশের অরণ্যে কান পাতি
সবুজ বৃষ্টিদিন অসামান্য রোদ্দুরে বিলীন।
ওইখানে এসে বসো,
আঙুলের ইশারায়
দিগন্তের ঝাপসা গোধূলি।
তোমার প্রচ্ছন্ন ইচ্ছা বুঝি—
সঙ্গমে কবিতা আসুক,
পাই আবার হারিয়েও যায়।
তোমার চোখের অমেয় সরোবর
তীর্থযাত্রায় ডাকে,
হৃদয়ের শব্দ ওঠে ছলাৎ ছলাৎ
তৃষ্ণা হাত বাড়ায়–
জানু পেতে বসি তৎক্ষণাৎ
গন্ডুষে পান করি সমগ্র উল্লাস।
অভিবাসনের কাল ফুরিয়ে আসে
পুনরায় তৃষ্ণা ফোটার আগে
প্রাণপণে দশ আঙুলে
কবিতা বাজাই।।
পালকের মত হালকা
সমস্ত স্মৃতিই একসময় ফ্যাকাশে–
সব মৃত্যুই একদিন ঘুঘুর পালকের মত হালকা।
সকালের বাসন কোসনের শব্দে
কাপড় কাচার সাবানের গন্ধে লেপ্টে থাকে
মায়ের চুড়ির রিনরিন, শরীরের ঝাপসা গন্ধ।
বেলা বাড়লে ওইসব শব্দগন্ধ ঝাঁট দিয়ে মনখারাপ গুঁজে দিই ডাস্টবিনে
একমনে বাড়ি -রান্না- স্কুল,..
স্কুল -বাড়ি -রান্না…
কাঁচের আড়াল থেকে মা দেখেন,
বোধহয় হাসেনও।
তারপর অন্ধকার গাঢ় হয়
দরজায় যেন কড়া নাড়ে কেউ
গেট খুলে দাঁড়াই
ঝটকা হাওয়া ঢুকে আসে–
ঘরময় ঘুরে বেড়ায় মাগন্ধ।
ভারী হয়ে আসে বাতাস
জোরে জোরে শ্বাস নিই
পাথরচাপা বুক ভার–
ফ্রেমে আটকানো হাসি ঝলমল করে ওঠে
কপালের গুছিচুল সরিয়ে হাওয়া প্রশ্ন করে
ভালো আছিস সোনা?
যতদিন না সমস্ত স্মৃতি ফ্যাকাশে
যতদিন না সমস্ত মৃত্যু পালকের মত হালকা……
তুমি জানতে
প্রতিসন্ধ্যায় চন্দ্রমল্লিকার পাশে গোলাপের চারাগুলি
বেহাগের বোলতানে মাতোয়ারা হলে
আমার খুব মনখারাপ হয়।
তখন সবুজ পাথর-পাতার উপর
ঘাসফড়িংটা উড়ব উড়ব করেও-
ঠায় বসে ডানা তিরতির করে।
তুমি জানতে,
ঘনকুয়াশার কার্শিয়ং, ঝাপসা ডাউহিল
আমার মনকেমনের এস্রাজ
গরমের ছুটিতে গাইলে
মেঘরং বাতাসিয়া দুপায়ে জড়ায়।
আমি জানতাম,
কলিংবেলের লালাবাই সন্ধ্যের নুপুরে নাচে
সব মনখারাপ উড়িয়ে
তখন তুমি এসে দরজায় দাঁড়াও
ঠোঁটে নিয়ে হারিয়ে যাওয়া চাবি।
কিন্তু,সব জানাকে মিথ্যে করে দিয়ে
আমাদের নৈশ চায়ের কাপে এখন
থিকথিক করছে ভাইরাস
এক দুর্জয় প্যাথোজেন।
আর আমরা খড়কুটোর মত
মনভালোকরা বিকেলগুলোকে
প্রাণপণ খুঁজে চলেছি।।