অন্তর্বর্তী
(ঋণস্বীকার: আমির আজিজ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য ।)
মানুষের ভেতর হেঁটে যাচ্ছে আরো একটা মানুষ অবিরাম
অথচ,
সে খবর টের পাচ্ছে না কেউ,
কথা বলতে বলতে অনেকটা পথ পার হচ্ছে দুজনেই।
আদুরে শব্দে ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ,
বালির মতন উড়ছে মাথার চুল-
ওদিকে,বন্ধুতা… বিছিয়ে রাখছে পরকাল।
পাশের বাড়িতে ফিরছে বিদেশের ‘মানুষ’।
এমনই সময়ে কবি কান পেতে শুনতে পান,
“সব মনে রাখা হবে, সবটা মনে রাখা হবে”
বিকেল গন্ধ
মা বরাবর গাইতে ভালোবাসতেন,
আজও বাসেন।
তবে গান না।
আটা মাখতে মাখতে গুনগুন করেন।
বাবা নির্বিকার বসে থাকে এককোণে।
ঐদিকে বিকেল নামতে থাকে
অন্ধকারের নৈঃশব্দ্যের মতন।
একটি (খারাপ) স্বপ্ন
সলতে হাতে বসে আছি- চুপচাপ,
অথচ অসম্ভব চঞ্চল হয়ে।
পাড় ভাঙছে, নদী ভাঙছে,
আমি তবু বসে আছি চুপচাপ।
সামনের মাসে বিয়ের তারিখ সারারাত্রি জেগে এসবই চিন্তা,
আমি আর সামলে রাখতে পারছিনা-
আমি শান্ত হয়ে আছি কুমীরের মতো।
পাড় ভাঙার শব্দে
আর কিচ্ছু শুনতে, পাচ্ছিনা।
গর্জন শুনতে পাচ্ছি নিজের ভেতর,
সামনের মাসে এসময় আমি অন্য পাড়ায় –
বাসন ধুচ্ছি,কাপড় নিংড়ে হাতে ফ্যাসফ্যাসে দাগ…
আমি জোর করে খুবলে নিচ্ছি জীবন-
ছটফট করে খুঁজে ফিরছি নদীর জল…
তবুও, গতজন্মের ঋণ রয়ে যাচ্ছে,বিয়ে হয়ে যাচ্ছে –
নদী মরছে, বেলা সরছে ঘাট নেই, পাড় ভাঙা…
দুঃস্বপ্ন…
ভাঙছে-
ও বাবা, একটা কবিতা লিখেছি…
একবার দেখবে…???
৩০শে পৌষ
এই সময়টা একেবারেই কাম্য নয়
শক্তিবাবু, সুনীলবাবু থাকলেও
এমন সময়ে সামনে
সাদা পাতা রেখে বসে থাকতেন
ছেঁড়া রুটি জমছে যখন রেললাইনে
রক্তে ভাসছে যখন সারা রাস্তা
তখনই,
সেই মৃত প্রহরে
আলো জ্বলল দূর থেকে
সামনেই মাঘ মাস-
পৌষ, তুমি ফুরোলে ব’লে।
পরিযায়ী কবিতা
একরত্তি শিশু হাঁটছে গায়ে অবমাননার চাদর জড়িয়ে।
শ্রমিক স্পেশাল ছুটছে ধীর গতিতে।
সভ্য দেশের অলিন্দে আজ বিষবাষ্প,
যদিও ঠাণ্ডা ঘরের পুরুষদের তা ততোটাও ঘামাচ্ছে না।
সমাজ বদল একেই বলে বোধহয়,
দুধের শিশু মরছে রোজ, দলে দলে।
আশ্বাস আর ভরসা যোগান দিলেও
তারা কাজে সেসব কোরে দেখালেন কই…???
কীসের নেশায় হরফ জমাচ্ছেন শাসক আপনারা!
অবেলার চাঁদ আসবে বলেও আসছে
না আর আপনারা তামাশা করছেন?
মা কাঁদছে মা মরছে
চুরি হচ্ছে জীবন।
হাত পাতা ফুল সবেতে
এক অদ্ভুত কানাকানি চলছে
সুইসাইড নোট পাওয়া যাচ্ছে না
কিন্তু রোজ মানুষ মরছে।