এক.
এক পাও ঠেলে দিয়ে দু পায়ে দুলে উঠি। সঞ্চয়ের ঐশ্বর্য নিয়ে পালিয়েছে ভবিষ্যতের সময়। তাইতো অতীতের বিয়ে দিয়েছি রাতের পাটাতন খুলে। অরণ্যানী অঞ্চলের পেটে শৈশব ঘুমিয়ে আছে ভাঙা সাকো নিয়ে। দোল দোল দুলুনি উঁকুন মাথার চিরুনী। অভিযানে সব খোয়া গেছে তাহাদের খোয়াড়ে, কনডেম শেলে এমন ঘোরতর নেশা বেড়ে যায়, তাইতো রাতের পথে এগিয়ে আসে বৃদ্ধের হারিকেন। মননের সলতে জ্বলে উঠে শিকারী চোখের রাংতায়, আর কিছু পাখি উড়ে যায় হাতের মুঠোয় রুমাল উড়িয়ে। তাইতো-
এই বোধের রেহালে ঐশ্বর্য তোমাকে বারবার পাঠ করি ঐতিহ্যের নিয়ম না মেনে।
দুই.
আরো এক এক করে গেঁথে নিচ্ছো নিপূণ হাতের কূর্ণিতে। দৌঁড়ে দৌঁড়ে ক্রমেই হয়ে উঠি উসাইন বোল্ট। তাইতো জীবনের ছন্দে দুলায়িত নদি হয়ে আমিও ছুঁতে যাই আকাশ। নাটাইয়ের ছলাকলা রপ্তানি শেষে আটকে যাবে চুক্তির ট্রানজিট। পোড়া ইট কথা বলা শিখে গেলে জানাবে দূর্বোধ্য শিলালিপির ব্যাখ্যা। তাইতো ভূতাত্ত্বিক সেজে বুক রাখি পাথরের বুকে। দখলে রেখে বেদখল করে খাবো জনতার আঙুর। আতুরীয় মসলার ঘ্রাণে ভাঙবে কাচের আয়না।
জগজিৎ সিঙ হঠাৎ পড়বে মারা
ওরে বুবু সরে দ্বারা
আসছে আমার পাগলা ঘোড়া………
তিন.
এই সেই সম্পর্ক গাছ। যার তলানী থেকে উঠে আসে আফিমের লিকলিকে দানা। পাতাদের সকল ছায়া মেতে উঠে কালো কালো অন্ধকারে। ভোগের লুটপাটতন্ত্র শিখে নিয়ে তাইতো সকলকিছু সাপ হয়ে গেছে। সেই বিষে চুবিয়ে এনেছি দুটি চকচকে সুলতানী তরবারী। সব শাসকই তো শোষক। তাই সব গানগুলো শুধু উল্টো স্রোতে বাইতে থাকে দুঃস্বপ্নের সিঁড়ি। সকল ভরানদী লাশ নিয়ে বইতে থাকে সম্পর্ক গাছের ভেতরে। জঠরের ক্ষত থেকে আলো দেয় রাতের নক্ষত্র। প্রশাসনিক আয়নায় দেখা মেলা অবদমনের অবশিষ্ট হাড়গোড়।
আর আমাদের স্বপ্নের ভেতরে ধীরে ধীরে ধীরে ধীরে মরে যায় একটা পরিচর্যাহীন সম্পর্ক গাছ।
চার.
আমারি কেবল রাত হয়ে যায়। রাতের নখে জড়িয়ে থাকে ডোরাকাটা সাপ।সমস্ত সম্পর্কই তো পাপ হয়ে যায়, তার ভেতরে জড়ো হয় অসুখের নীল রঙা জোনাক। তাইতো মাধুরী ভরা স্নানঘরে জলের বাষ্প উড়ে যায় খোপার পথ ধরে। এভাবে সমস্ত দুপুরগুলো জীবনের রঙ এঁকে এঁকে- উঠে পড়ে স্বপ্নের রেলগাড়িতে। ব্ল্যাক টিকিটে ধরা খেয়ে সাপেদের নাম হয় আসামী,যেভাবে রিতিনের নাম হয়ে যায় খুনী । তাইতো বুকের উপর বসে থাকে দারুণ এক সাপুড়ে। দেখায় কাল নাগিনীর খেলা। নানান কিসিমের কসরতে হিম হয়ে শুয়ে থাকে ব্যাগভর্তি মাছ।
এ কেমন ভেলকিবাজি এ কেমন নজরবন্দী খেলা শুধু দিনকে নিয়ে যায় রাতের গোহার ভেতরে।
তাই তো বুকভর্তি গহবর থেকে জেগে ওঠে বাদামী রঙের সাপগুলো। তারাও জানেনা-
হৃদয়ে প্রেম পুষে কি লাভ?
ব্যাঙের ফলন ভাল হলে আগামী বছরে আমরা অনেকগুলো সাপ পুষবো।
দেহের সাথে দেহ মিলিয়ে আমরা গড়ে তুলবো
দেহ পালিত সাপের খামার।
পাঁচ.
মৃত্যুর পর সব দেহ সাপ হয়ে যায়। এই বিভ্রমের জোস্না রাতে সাপগুলো দেহ থেকে বের হয়ে আসে!
হাজার নদী পারি দিয়ে মননের মঞ্চে তারা গেয়ে ওঠে হৃদয়ের মনসা মঙ্গল-
“পৃথিবীর সব পুরুষ যেন হয়ে ওঠে লখিন্দর
সব নারী বেহুলা”
এই প্রার্থনা শেষে তারা ফিরে যায় নিজেদের দেহের কবরে।
তারপর তারা গভীর এক ঘুমে তলিয়ে তলিয়ে যায় বাদামী স্বপ্নের ভেতরে…
ছয়.
খোলা হাটের ভেতর ঢুকে পড়েছে রাষ্ট্রীয় সাপ। সমস্ত হাটগুলো বন হয়ে যায়। আর এখানে মুড়ি- মুড়কি, সুতা, ফ্রক, সেমিজ, বালি, চিনি, এসিড ও ওষুধের দোকানগুলো ক্রমশ বন্ধ হয়ে যায়। মানুষগুলো ভীষণ ত্রস্ত হয়ে পালিয়ে যায়, সাপগুলো ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে। প্রচণ্ড ক্ষুধার তোড়ে এগিয়ে এগিয়ে আসে কোর্ট প্যান্ট পড়া সাপ। সমস্ত মানুষগুলো যেন— তাদের কাছে ব্যাঙ। তাইতো ক্ষুধার্ত ব্যাঙগুলোকে খেয়ে ফেলে ক্ষমতার সাপ।
সমাগম কমে আসে, সাড়াশব্দহীন মানুষগুলো ক্ষমতার পেটের ভেতর হজম হওয়ার দিন গোণে অনন্তকাল…
সাত.
ছন্দের ভেতরে সন্ধ্যা নেমে আসে আর হাতে হাতে হাতগুলো হাতপাখা হয়ে যায়। বারুনী স্নানে যে পাপ মিশে যায় কিশোরী জলে তারও গভীরে থাকে পূণ্যতার অধিকার। শূন্যতা’র তো জানা নেই— কোলাহল ভেঙে গেলে একেকটা মাছের বাজার হয়ে যায় তুখোড় বিরানভূমি। যেখানে বেড়ালের নাক নিয়ে গন্ধ শোঁকে ঋণগ্রস্ত শরীর।
আর লালসার আগুনে পুঁড়ে পুঁড়ে ছবি হয়ে যায় শুকনো রুটিগুলো। ছবি—সেওতো ছিলো হৃদয়ের অন্দরে কাচা কাচা ঘুমের ভেতরে— কে তাকে জাগালো?
কেইবা বাজিয়ে দিলো ঘুম ভাঙার পূর্বেই মৃত শালিকের রেকর্ড করা গান!
আট.
চিন্তার ভেতর দিয়ে সকল রাস্তাগুলো ঢুকে যায় দুঃশ্চিন্তার ভেতর। আর পাশের শ্যাওলা পুকুরগুলোতে মাছের মতো খাবি খায় মানুষ। অপ্রস্তুত সাতারে শুধু ভেসে আসে মানুষের কান্না।
সকল মৃত্যুচিন্তাতেই বেলা ডুবে যায়— শেষে মানুষ ও মাছেরও থাকে করুণ আকুতি।
তাইতো জীবনের পথ বেয়ে কবর কবর কলরব ওঠে।
আর কবর থেকে উড়ে যায় বিগত আত্মার পাখি।
যুদ্ধের সকল আকাশজুড়ে পাখিগুলো উড়ে যায় দূরের ডানা মেলে। আর মনগুলো মিডিয়ার গান গেয়ে ছুঁতে চায় লোভাতুর বন্দুক।
পৃথিবীর সকল বন্দুকের বুকে এখন বিরান শশ্মান সেখানেই ঘুমিয়ে আছে আমাদের পরিচিত অন্ধকার৷
তাইতো বন্দুকের পূজা করি, পূজা করি সাপের।
সাপ ও বন্দুক দুটোই জানে মানুষের বেঁচে থাকার আয়ুষ্কাল।
নয়.
গলাকাটা হাঁসের মতো একটা রাত নেমে যাচ্ছে গলা বেয়ে।
কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে তুমুল আর উঠানে ভিজে যাচ্ছে প্রশ্নোত্তর হৃদয়।
খেয়ালের ভেতর দিয়ে যে উক্তিটি ছোটে বেখেয়ালের দিকে— তার কাছে অবিশ্বাসও একটি গুণ। ধাতব মুদ্রার শব্দে শব্দে শাড়িগুলো ভেঙে দেয় উঠানের মৌনতা—সারি সারি স্তব্ধতার ভেতরে যে চিঠি উড়ে আসে অনন্তদূর হাওয়ায়—সে হাওয়ায় হাঁসগুলোর ঘুম ভেঙে যায় আলতা রাঙা দুপুরে। সিথানের পয়সা দিয়ে কেনা সে হাঁস আজ নেমে যায় গলা বেয়ে। আর নাভীকূপের গর্ত থেকে বের হয় বিচ্ছেদের বাচ্চাগুলো!
এভাবে নরম নরম বিভ্রমে,নেচে উঠে —
প্রাণই হয়ে যায় একমাত্র সত্য।
একমাত্র পরম আশেকের এক ও অদ্বিতীয় সত্বা।
যে সত্বা কখনো মরমের আধুলি দিয়ে বিনিময় করেনা কৃত্রিম হাওয়াই মিঠা।
দশ.
কফিনের ভেতরে বড় বেশি অন্ধকার। বড় বেশি নিঃসঙ্গতার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নামে। দূরের ধু ধু প্রান্তর থেকে কে যেন ডেকে যায় জাহানারার মতোন। বানার ভিটা থেকে মৃত সুর ভেসে ভেসে আসে— গায়ে হলুদ,পায়ে আলতা, হাতে মেহেদী। সে সুরের পথ ধরে তাইতো স্বপ্নগুলো ছুটে যায় শৈশবের পুতুল বিয়েতে।
দৃশ্যবাস্তব সকল কিছুই ধরা দেয় স্বপ্নায়িত চোখে।
নিষ্ঠুরতাও ক্রমশ ফুটে ওঠে সৈনিকের হাতে।
আর শেষের দৃশ্যপটে সবকিছুই যেন ঘোলা হয়ে আসে। ধাতব পিন্ড নরম পাখিকে আরো শান্ত করে তোলে।
তাইতো আরো বেশি অন্ধকার হয়ে ওঠে কফিন।
তাইতো স্মৃতিগুলো ফিরে যায় অনন্তপুরের দিকে। অনন্তপুর আর বানার ভিটা জুরে—আজ এ কেমন রক্তক্ষরণের আয়োজন।
এ কেমন ঘোরতর বেদনাবিধুর অন্ধকার।
সবগুলো অন্ধ কুঠরী—আমিই কি রাঙিয়ে নিলাম আলতার রঙে রঙে?
ওপারের আকাশে বড় বেশি অন্ধকার বড় বেশি ক্ষুধার্ত শকুন।
যারা মুহুর্তেই লুফে নেয় প্রস্ফুটিত পাখি—
নাম যার বাংলাদেশ।