কালো বক
কলসের পানি যতটা কম হলে একটি কাককে বক হয়ে যেতে হয়, তারচেয়েও কম পানি রেখে, একটি কলস পেতে রাখি উঠোনে। কণ্ঠে তীব্র তৃষ্ণা নিয়ে একটি কাক উড়ে এসে ধরা পড়ে, কলসে গলা বাড়িয়ে পানি খেতে গিয়ে বক হয়ে যায়; তারপর তৃষ্ণার কথা ভুলে হঠাৎ ক্ষুধার্ত হয়ে উঠলে— মাছ ধরতে নেমে পড়ে কলসে। আমরা কলসের ঢাকনা ফেলে বকটি ধরে ফেলি, এক টানে খুলে ফেলি তার উকিলের পোশাক।
বকের মাংশ খেয়ে বাবা রায় দেন— বিভিন্ন মাছের স্বাদ পাওয়া যায়।
তলপেটের ব্যথা
রশি দিয়ে মানুষ বেঁধে রাখা হয় নাকি মানুষ দিয়ে রশি?—তর্ক যেদিকেই গড়াক না কেনো, মানুষ মুক্ত হলে জানি রশিও মুক্ত হয় অথবা রশি মুক্ত হলে মুক্ত হয় মানুষ! আমারও কোথায় যেন প্যাচ লেগে আছে, তলপেটের ব্যথার মতো চিনচিনিয়ে ওঠে। আমাকেও কি বেঁধে রাখা হয়েছে অথবা আমাকে দিয়ে কাউকে? জানি না কোথায় সেই বাঁধন, কোথায়ইবা বাঁধনের যন্ত্রণা! আমি কেবল ব্যথা পাই, কিসের টানে যেন আমার সেন্টার ছিঁড়ে যায়!
নাভিতে হাত দিয়ে বুঝি—নিজের সাথেই গিট লেগে থাকা আমি এক আশ্চর্য রশি!
শিকার ও শিকারী
নদীতে ছিপ ফেলে বহুবছর ধরে বসে আছি যে মাছটির জন্য, তার ছেলে, বন্ধুদের নিয়ে এসে আমাকে দেখিয়ে বলে—ঐ দেখো, বাপের শিকার। ছিপটার ঠিক নিচেই একটি সাপ, ফণা তুলতে জানে না, ছিপের ভয়ে সেই যে মাথা পেতে রেখেছে উঁচিয়ে, আর যেতে পারেনি। কতো ঢেউ এলো গেলো, ধাক্কালো, জলের ওপর ছিপের ছায়াটিকে নিয়ে যেতে চাইলো, ছায়াটি আর গেলো না। নড়চড় নেই দেখে যে ফড়িংটি আমার ওপর বাসা বেঁধেছিল, তার ছেলে আমাকে পৈত্রিক ভিটা দাবি করেছে। এসব নিয়ে ভাবছি না অবশ্য। ভাবছি—তাকিয়ে আছি যে উড়ন্ত প্রজাপতিটির দিকে, সে কেনো যেতে পারেনি।
একজন সিনেমাপ্রেমি অন্ধ
দাঁত ব্রাশের সাথে প্রতিদিন সকালে নিয়মিত কান পরিষ্কার করে যে অন্ধ লোকটি, তাকে সকলেই চিনে একজন তুখোর সিনেমাপ্রেমি হিসেবে। কান পরিষ্কার করেই টেপ রেকর্ডার নিয়ে বসে পড়ে সে, তারপর ক্যাসেট চালু করে রেকর্ডার কানে লাগিয়ে শুনতে থাকে অডিও সিনেমা। তার সিনেমা শোনার এই নেশার সাথে কোনো মাতালই পেরে ওঠে না, যেনো গোগ্রাসে গিলছে সব। নিয়মিত হলেও যায়, নতুন নতুন সিনেমা শুনে আসে। নতুন পুরনো সব সিনেমা শোনা হয়ে গেছে তার, এখন কান পরিষ্কার করে বসে আছে মুক্তিপ্রাপ্য সিনেমার অপেক্ষাতে।
এই ফাঁকে তার মনে পড়ে নির্বাক চলচ্চিত্রের কথা, যার অস্তিত্ব প্রমাণিত নয় তার কাছে।
বৈদ্যুতিক শালবন
এই-যে দেখছেন শালগাছের বৈদ্যুটিক খুঁটি, রোপন করা আছে রাস্তা/ঘরের পাশেই, এর গোঁড়ায় নিয়মিত পানি অথবা রাসায়নিক সার দিলে বিদ্যুতের ফলন পাবেন ভালো। আলোর জন্য বাল্বে বাল্বে পৌঁছে যাবে বৈদ্যুতিক জ্বালানি। এবং ফ্যানের নিঃশ্বাস থেকে উৎপন্ন হবে অক্সিজেন। শহরজুড়ে অসংখ্য শালগাছ নিয়ে যে শালবন, ঘরে বসেই পাওয়া যাবে তার সুবিধা। এবং ডাইনিং-রুমে বসেই সারা যাবে বনভোজন। কল ছেড়ে তালের রস পাবেন অবশ্যই, যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঘরের পাশের খুঁটিটি তালগাছের দিতে পারেন।
আমি দিয়েছি ধানগাছের—কুকার সংযোগ দিতেই ভরে ওঠে ভাতে।