১
একবার আমি উঁচু একটা সুপারি গাছে উঠেছিলাম।
খুব উঁচু।
আমার পটকা শরীরের চাপে
একবার ডানে একবার বামে
হেলতে হেলতে দুলতে দুলতে কাঁচা সবুজ সুপারি
আর সুপারির খোল এদিক ওদিক ফেলতে ফেলতে
দেখেনিচ্ছিলাম দত্তবাড়ির উদোম স্নান ঘর।
আর দেখেনিচ্ছিলাম
সাদা সাবান ফেনার সাদা ভেজা শরীর।
আর ভাঙা রান্না ঘরের চালে ভাদ্রের রোদে
মেলে দেয়া আমসত্ত্ব আর বোয়াম ভরা আচার।
জিরো ফিগার সুপারি গাছে
এইটুকু হেলার জন্য
এইটুকু দোলার জন্য
কতবার যে গেছি সুপারি তলায় !
২
টুকটাক কথা বলুক সমস্যা নেই।
প্যাঁচামুখ নিয়ে দুই
চার কথা আমি বলি কোন অসুবিধা নাই।
পাশাপাশি বসলেই অর্নগল কথা বলা
আমার পছন্দ নয়।
কথা বলতে ভালো লাগে না— সেটি নয় বরং
আমার পাশে অচেনা লোকটির
এতো এতো কথা আমার সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়।
পাশাপাশি মানুষ— মানুষের পাশে মানুষ
একই শহরে মানুষ
একই কাঁচা বাজারে মানুষ
আমি তাকে চিনি না সেটি সত্য নয়– সত্য এই
যে লোকটি অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে আমাকে
সে কোন পরিসর দিচ্ছে না।
তিনি নিজের পরিসর চারলেন ছয়লেন
করে নিয়ে
আমাকে ফেলে দিলেন
গলির মুখে কাঁচা সড়কে।
৩
মাটি ছেনেছুনে মাটি মিশাই মাটির সাথে।
ভেজা ভেজা লালে লাল মাটি
জুড়ে কেঁচো কেন্নো
আর কালো কালো পিপঁড়ের সংসারে
দাউ দাউ লাল আগুনে আগুনে সয়লাব।
গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে
ভেঙে দিলাম পিঁপড়ে আর
কেঁচো কেন্নোদের অচঞ্চল জীবন।
দলবেঁধে শরনার্থীদল একেবেকে
চলছে চলছে জীবনের খুঁজে।
আমি মাটি ছেনেছুনে মাটি মিশাই মাটির সাথে।
৪
বুঝি এটি চিৎকার নয়—স্রেফ অগোছালো হল্লা।
চিৎকারে যে তরঙ্গ ভেসে ওঠে সেটি
আমার মাইলস্টোন।
বুঝি মাটির গভীরে কোথাও ভাঙছে
বীজের দেয়াল।
তুমি টের পাও বা না পাও।
আমি জানি ক্রমশ ভাঙছে পাড়।
আমার বীজের দেয়ালের সাথে
কোন মিল নেই পিতা বা প্রমিতামহের
চিৎকার বীজের।
যেমন থাকবে না আমার সাথে
আমার সন্তানের।
যার যার সময়ের বীজ তার তার চিৎকার বীজ।
৫
রৈখিক জীবন আমার নয় বরং অসংখ্যা বক্ররেখায় ঠাসা যে জীবন
সে জীবন মেনেছি
একান্ত আমার।
কে কবে সরলে হাঁটে?
যে সরল তুমি দেখছো সে তো বৃহৎ বৃত্তের
একটি খণ্ডিত চাপ।
দেখা অদেখার নানা সবিরোধে
গিজগিজ করছে
আন্তজীবন অথবা
যে জীবন অন্য দেখে খুশি হয় সেই
স্যুটেড কোটেড
জীবনের পরতে পরতে সবিরোধে ঠাসা।
আমার জীবন সবিরোধের জীবন–
জট ও জটিলে আমি
এই সময়ের জটিলেশ্বর।