♦
তারপরও দেখেছিলাম শিশুর মতন সরোবর
মুকুটে ভেসে আসা কালো কালো উত্তরাধিকার
অর্থাৎ অরণ্যের প্রতিবেলা,
পেরেকের দশক থেকে ঝলসে উঠে সজল ছায়া
ফুল ও পাতা
কিসের পরাগে মৃদু মৃদু ভাসে একফোঁটা মেরুপর্বত—-
সেই বৃষ্টি হওয়া আষাঢ়ের পুকুর
কত আকাশ পেরিয়ে
হারিয়ে যায় বাতাসের মাতৃভাষা
♦
হঠাৎ শুশুকের ঘাই আসে শতাব্দীর মেঘ দেখে
যারা আজ অতিথি সহজ দূর্বাঘাসের নীচে
মূলত আলেকদিয়ায় সালফারের অসুখে
সদর দরজায় কেঁপে উঠে ভোরের মন্দির
ধীরে আসে পুতুলের নাচ– নির্মাণ থেকে খুন হয় কালোমেঘের অশ্রু
তবুও মৃদু গান গাই মরুর বিহঙ্গে
পাহাড়ের পথ অথবা প্রিয় পাতার দহন
কোথায় মনে পড়ে আততায়ী শুভশ্রী
আবার উর্বর শিলাবৃষ্টি—কেবলি ইন্দের বলিদান
যেন ফুলের মতো মহোহর প্রেমিকার সহবাস
♦
অবশেষে বিবর্ণ উপবন আসে পাখির কিচিরমিচির থেকে
যে এক পূর্ণ আয়োজন
চাওয়া-পাওয়ার সন্ধ্যাবেলা,
যেতে যেতে পতনের মূলে বেজে উঠে
আদিম অক্ষরের প্রাবল্য
নিয়ে পাহাড়ের শতছিদ্র, দূর কত জলজ দেশে
কোনো এক অতিথি রজনীগন্ধার পথে
বৃষ্টিকে ভালোবেসেছিলো এই যুবতী মেয়ের ব্লাউজ
আজ নির্মল হয় শ্যাওলার স্বাধীনতা
তবুও দেখি মুখস্ত মানুষের মুখ
♦
দক্ষিণ দিকে ঘাসবরণ লোকালয়
ঝুরক দু’দিকে মাঝরাতের দুর্ভিক্ষ
দাও অন্ধকার, সহজ কোনো ইশারা
আজ প্রিয়তমা প্রতিবিম্ব হরিণের আত্মায় নির্মম—
কিভাবে চলে গেলো নদীর ধারণা নিয়ে
তার কতটুকু ছলনায় ফুটেছে হারিকেল ফুল
যদি সে গর্ভবতী শহরতলার বাড়িতে
তবুও মৃত্যুবীজে ছিঁড়ে গেছে লাউপাতার স্বাধীনতা
কোনো এক নিপুণ বেদনা, প্রতিদিন পারদের মতো
মুহূর্তেই আগলে রেখেছে দিনাজপুরের রমণী
কিন্তু আমরা শব্দহীন, অনেকের থেকে পার্থক্য
অবিচ্ছিন্ন রাখালের জমির মতো
তবুও নবজাতকের কান্নায় কেঁপে উঠে কুমারীকাল অভিধান;–
♦
মনে হয় বিকালের দ্রোহ
ঝলমলে বরফ নদীর অববাহিকা
তুমি, ক্লান্তি থেকে যতবার পূর্ণিমা মুখে
মেতেছ অপার নারকেল বনে
কিংবা নিভে যাওয়া কবুতরের ধ্যানে
গভীর আজ সৌন্দর্যের হতিয়ার
এই পাতাকুড়ানির কক্ষপথ
যেন মর্মর পালকের যৌবনকাল
রূপালি স্তনের মতো নিরাকার
কেবলি মৃত্যুর জন্য মৃত্যুর কবিতা
পৃথিবীতে— শূন্যের পর্বে কতটুকু শূন্য
যদিও আত্মসমর্পণে যায় বৃষ্টির পঙতিমালা
অথচ নীল, একটা অতীতের ঘুম
♦
কি এক অবিকল অপেক্ষা
এই নর্তকীর রাত
ঘোড়ার পা থেকে অনুভূত কুয়াশার দূরত্ব
যাকে আজ আর্দ্রতায় তীক্ষ্ণ করেছে তার উৎসব আর ক্ষুধার নির্জনতা নিয়ে হেঁটে গেছে গালিবের গজল
কোন পাশে নাগরিক উপগ্রহ
ক্রমে ক্রমে নরম হচ্ছে বয়ঃসন্ধির রঙ
কে তুমি মর্মাহত পতাকা
কুমারী বুকে এক শতাংশ জমি চাষাবাদ
কেবলি জল ও স্রোতের অমৃত ডাক
কত নৃত্যপর শুশ্রূষা এনেছে মৌমাছির উড়াউড়ি
এবং গাভির শাদা দুধের অভিমান
এখন মাঝে মাঝে সেগুনগাছের উন্নত স্বর
শূন্যতা পোষণ করে ফুটেছে আঙ্গুলের প্রতিশ্রুতিতে
♦
মানচিত্রের নিচে আমাদের দূরত্ব
তবুও বসবাস করি মৌনতায় আলোয়
এই যে সকালবেলার গান
যাকে বৃষ্টি ভাবে নেমে গিয়েছে ছোট রতনপুর
মানুষ, বুঝে নাও ঝরে পড়ার গোপনীয়তা
হঠাৎ যে বেতফুল ফুটেছে বিদায়ের কার্তিকমাসে
এবং একটি নতুন বউয়ের সুগন্ধে
তার পূর্বদিকে হারালো যুবকের পাতাবাহার
♦
ফলত হৃদয়ে আজ মনকাটা
তিমির বেদনা থেকে লজ্জার মতো গর্জন করে জারুলের ডাল
আরো দূরে রাত্রির পাশে, দেখেছি
মর্মাহত বিদ্যুতের আলো
এখন যেখানে নিঃসত্ত্ব নগ্নতা
শোনা যায় অশেষ প্রান্তর
বাতাসী মাছেরা উড়ে গেছে শুদ্ধতা নিয়ে
হে সঙ্গম, বৃষ্টির রূপালি স্রোত
একটি লজ্জাবতী কুসুম
নক্ষত্রের সন্ধানে পুড়ে নিথর মানুষের সত্যতা
♦
যা কিছু উড়ে গেছে রক্তের মূর্চ্ছনায়
তুষার কিংবা নির্জল রহস্যে
আকাশ যতদিন মনে রাখে ধুলার মিতালি
যেন দৃষ্টির আড়ালে চোখে পড়ে দুর্গম পাপ
এই ক্ষুধার্ত বৃষ্টি
কোথায় সে পৃথিবী—যেখানে পেতেছে সিংহের পা
কি নিবিড় কিশোরী বউয়ের পাদদেশ
তারাদের আহার্যে নিষিদ্ধ ব্যবহার
অর্থাৎ মঙ্গলকান্তির ছায়া
তরণি আজ বনের নিমিত্তে এঁকেছে শিবের প্রতিলিপি
মুছে দিয়েছে স্তনের মরণ
তবু পড়ে থাকে লাবণ্যের বোধিবৃক্ষে একমুখ বেদনা
♦
আমার না-বালিকা বউ
তোমার সম্পূর্ণ শরীর
যেন ইরি ধানের গন্ধ
অথচ আজও জাতীয় সংগীত থেকে মুখস্থ করি প্রেমিকাদের নাম