ফানা
উল্লেখিত কোন শব্দ নেই। আসমানে সারিবদ্ধ তারাদের ঝুকে পড়া আলো, দমকে দম জিকির উঠেছে। হে অন্ধ আকাশ, ওহে ঘরহারা পাখি, আর মাতাল বাতাস, সালাতের নবম মুদ্রা থেকে কেউ ছিটকে পড়ো না। পঞ্চম মুদ্রায় যে সমুদ্র পাগল হয়ে গেলো, সিনা’য় তার মোহর করা ঢেউ। ঐ’যে পৃথিবীর একটুকরো দেয়াল, যার গায়ে সেঁটে আছে এক বন্ধ দরজা, ওপাড়ে আয়না। সত্যের প্রতিফলন থেকে খুব বেশি দূরে নও তুমি। জিকির! সেতো নোঙ্গর করা জাহাজ। যদি ভুলে যাও সাঁতার, অন্ধ নাবিকের চোখে তাকিও না। আরও ভারী, আরও গভীর সময় থেকে তুলে আনো পর্দা। পর্দা করো প্রিয় আত্মা। আসনে পেতে দাও লাল গালিচা। দমে দমে বুকে তুলে নাও সেই সমুদ্র, যে তোমাকে পঞ্চম মুদ্রায় ফেলে গিয়েছিলো। তোমার সম্মুখে সেই ছোট্ট দরজা, ওপারে আয়না। আয়না, তুমি সত্য থেকে খুব বেশি দূরে নও। চোখের পর্দা খুলে দাও। ঐ যে আরশ, শুন্য সকল। ঐখানে পেতে দাও শেষ সম্বল। সিলমোহর করিয়ে নাও কলব। দশম মুদ্রায় খুলে যাবে দরজা। যদি তুমি অধিষ্ঠান করো তোমার রক্ত বিধৌত আরশ কুরছি’তে! চোখ খুলে দেখতে পাবে, আয়নাটা তোমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
দীর্ঘনিকায়ে
ফিরে আসার আগে যারা ডেকেছিলো আজ তারা মিছিলে… নিথর, সারিবদ্ধ অথচ দীর্ঘ ওঙ্কার
গর্ভের গুন টানা দড়ি ছিঁড়ে যাবার পর রবের হাতে যখন আর কোন বন্ধন নেই,
খোদাই করা বুকে জড়িয়ে যাচ্ছিলো নূহের কিস্তি। জিহবার নিচে এটে যাচ্ছিলো লাম-আলিফ আর মিছিলে জ্বলছিলো ক্রুশবিদ্ধ মসিয়ের পূনর্জনম।
পরম
আততায়ী, পাতার বোল
আততায়ী, পাশে ঘুমাও
বাতাস ভারী আততায়ী
তুমি খালি পায় এসো
তুমি এসো রাত্রি নিবাসের কালে
এসো মিথ্যে কথার ছলে
ঝড়ের আগে ধানের দুধে
জিকিরের প্রথম ভাগে
ওঙ্কারে ঝঙ্কারে এসো আততায়ী
তুমি খালিপায়। এসো।
তৃতীয় পক্ষ
স্তূপাকার আমাদের পথ, ঢেকে গেছে মেঘে
ফিরে আসা বাতাসে পেতে রাখি চোখ
অন্ধ তবু, ফিরে আসা যায় না
পথ, সে কোথায় যায়?
উত্তর দিকে যারা পড়ে পড়ে ঘুমায়
পাহাড়ী বরফ, কেউ মৃত নয়। মৃতরা পাহাড় হয়ে যায়।
পৃথিবীতে কারও ধানের ক্ষেত নেই, এই আসসোসে
দক্ষিনের জল-বন তুলে নেয় পীঠে।
পীঠের পলেস্তারা খুলে যেতে থাকে,
আমরা স্বাদ-বাদে ঢালাই করতে থাকি সিঁড়ির পর সিঁড়ি।
মানুষ
মানুষ
তোমাকে জেনেছি প্রাচীন ছায়া
তোমার আঙ্গুলে বাঁধা ঘুর্ণনের দড়ি
মৃত্তিকার ঠোঁটের প্রথম চুম্বন, তোমাকে ডেকেছি মা
মানুষ, তুমি গর্ভে লুকিয়ে রেখেছো আততায়ী
আমি যাকে ধরতে পারিনি আকাশের বিস্তারে
মানুষ
তোমাকে ভালোবেসে হারিয়েছি প্রিয়তমা, যার বুক রেহেলে ঢাকা
যেখানে খোদাই করে লিখে রাখা হয়েছিলো ভবিষ্যৎ
গনণায় যাকে হারিয়েছি গণিতের ব্যর্থতম দিবস হিসেবে
মানুষ,
তোমাকে হারিয়েছি এক অসহায় বিদীর্ণ মধ্যরাতে।
গতিবিদ্যা
তোমার সৃষ্ট চুম্বকের দিকে তাকাও, যার উত্তর মেরুতে রয়েছে আত্মা। এবং দক্ষিণ মেরু থেকে তুমি যাকে ধরতে চেয়েছো, হাওয়ার বলে। আত্মা তোমার সেই সত্য জানে, যা দিয়ে তুমি আকর্ষণ করেছো পৃথিবীর তাবৎ দেহ। এমনকি আত্মা, চাইলে সেও ধারণ করতে পারে এমন সব দুঃখ, পৃথিবীতে যা কিছু দাহ্য এবং অনন্তবাহী রাস্তা।
হে আমার আত্মা, আমি তোমাকে বুঝেছি
নির্দিষ্ট দূরত্ব হিসেবে
তোমার দিকে ছুটতে ছুটতে কখনো যে দূরত্ব ঘোঁচে নি।
এবং আমরা একই সাথে তৈরি করেছি একটি বৃত্ত। পরিধি’তে তুমি আর আমি, আমরা ছুটছি পরস্পরের দিকে।
আমাদের ঘুর্ননে যে বৃত্ত তৈরী হয়েছে, তা অন্যদের আকাশে আজ পৃথিবী হিসেবে প্রস্ফুটিত। আমরা কখনো আমাদের আকাশ দেখিনি।
এমনকি আমরা কেন্দ্রশুন্য হয়ে, পরস্পর পরস্পরের দিকে ছুটে চলেছি।
হে আমার আত্মা,
আমি তো দেখেছি, একেকটা মানুষ কিভাবে ছুটে যায় আর একটি মানুষের দিকে। ক্ষুধা এবং সমস্ত দারিদ্রতা নিয়ে একজন আর একজন’কে আলিঙ্গন করে, উষ্ণায় হয়ে ওঠে তিয়াসার জল। তারা পরস্পর পরস্পর’কে কোথায় পায়?
তারা একজন আরেক জনের কাঁধে তুলে দেয়, অতীতের গতি। এইভাবে মানুষের শেকল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। যদিও খসে পরে প্রতিটি তারা, তবু শেকল ছেড়ে না। তারা বৃত্ত থেকে নেমে আসা পায়রার পালকের মতো চির শান্ত। পতনের কাছে এসে যে ফিরে পেতে চায় অতি দূর দম। তারা পরস্পর পরস্পরকে নিজেদের কবর ভেবে কেন্দ্রকে করে তুলেছে ভারী।
আমি তো জানি, পরিধিতে তোমার আমার নির্দিষ্ট দূরত্বই গতি।
পৃথিবী ঘুরতে থাকে, ফেনিয়ে উঠে জীবন। কেন্দ্র ঢেকে যায় বিষাদে।
নিখোঁজ জাহাজ
অনেকটা দূর হে আগুন উজ্জ্বল তারা বন
জোড় পায়ে হেঁটে এলে ফুল ঘাটে
কালো মেঘ ছায়া ফেলে করিলে গোপন,
গোপনে ধরিলে সে নুক্তার দানা
অতলে ডুবিয়ে হায় নিজের এ-তরি
আমারে জন্মিলে যদি হে ঝিনুক
নৌকার ভারে তবে কেন ডুবে মরি…