একা
তুমি আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে!
আমি একা একা আর কোথায় যাব? চায়ের দোকান,
জনাকীর্ণ পথ, পার্কের বেঞ্চ এতটা বিশ্রী, আগে
কোনো দিন বুঝিইনি। স্টেশন, মসজিদ-মন্দির,
আদালত ভবনএতটা বন্ধুত্বহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছে
শহরের বুকে, আগে কোনো দিন এভাবে দেখিইনি।
একা একা সারা দিন ভবঘুরের মতো ঘুরতেই আছি,
ঘুরতেই আছি।
যাই হোক-
যেহেতু আপাতত থাকার জায়গা নেই, ভাবছি একটু
স্বাবলম্বী হলে তোমার কবরটা ভাড়া নেব আমি।
তোমার হস্তরেখা আমাকে জ্যোতিষী বানায়
অদেখার পূরভাবাস বুঝি নাকো আমি, তোমার
দৃশ্যত হাত শুধু চোখের সামনে ভাসে। কীভাবে
কীভাবে যেন আগাম বার্তা জানায়। মূলত-
তোমার হস্তরেখা আমাকে জ্যোতিষী বানায়।
যদিও জ্যোতিষী জানে- হৃদয় রেখা শনির ক্ষেত্রে
এসে থেমে গেলে, জাতক আজীবন পার্থিব প্রেমের
আঘাতে ভোগে। তবুও ভালোবেসে তোমার দুটি হাত,
তুলে নেব আমার এ হাতে।
আমার হাতের আয়ু রেখা ধরে ধরে তুমি পাড়ি দেবে
সুদীর্ঘ রাহু মুক্ত পথ।
বই
এই যে গভীর রাত-
সংগোপনে আমাকে মেলে ধরলে তুমি।
তোমার মনেতে কাম! গভীর আবিষ্কারের নেশা!
নির্লজ্জের মতো আমাকে খুলে খুলে দেখছ।
আর সুকৌশলে আমার অক্ষরশরীরের ওপর দিয়ে
বেহায়ার মতো চোখ বুলিয়ে নিচ্ছ।
আর তোমার হাত ছুঁয়ে দিচ্ছ আমার দেহের প্রতিটি
পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়।
এই যে গভীর রাত- এই রাতে আমি
তোমার শৌখিন যৌনতার কাছে পরাজিত।
তোমার কাছে শরীর সপে দিতে দিতে
আমি শুধু ভাবছি-
তোমার হাতের আঙুল –
কীভাবে শিখল এ মেধার মৈথুন!
কীভাবে শিখল এ মেধাযৌনবিদ্যা!
বলো-
আমাকে কতটুকু পাঠ করলে তুমি?
কতটুকু রপ্ত করলে নিজের ভেতর?
হে সঙ্গমদক্ষ পাঠক,
আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।
কথা দাও –
শেষ পৃষ্ঠা পড়া হয়ে গেলেও
তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না কোনোদিন।
ইঁদুর
নিঃসঙ্গ আমি –
একটি আলোহীন সন্ধ্যা পকেটে নিয়ে বাড়ি ফিরি
প্রতিদিন।
আর বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দেখি-
আলনায় ঝোলানো আমার জামার পকেটে
ইঁদুরের মতো খলবল করে একটি ধেড়ে অন্ধকার।
নিঃসঙ্গ আমার ঘর-
প্রতিদিনই ভাবি সুযোগ এলে হুট করে উঠে যেয়ে
খপ করে ধরে ফেলব ইঁদুর-আঁধার।
অথচ বিছানা থেকে আমি উঠলেই
ইঁদুরটি পালিয়ে যায়।
অথচ বিছানায় যেয়ে নিজেকে এলিয়ে দিলেই
ইঁদুরটি আবার জামার পকেটে এসে ঢোকে।
প্রতি রাত জেগে ইঁদুরটির সাথে এই খেলা খেলতে
খেলতে
আমি আবিষ্কার করি-
ঘরের জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ছে সুবহে সাদিক।
আর
আলনায় ঝোলানো আমার ঘামদাগ জামার পকেটে
ইঁদুরের মতো খলবল করছে ভোরের আজান।
গাছ
আমার ছেলেটি আর গাছের ছেলেটির দারুণ ভাব।
ওরা গলায় গলায় বড় হচ্ছে।
ভালোবেসে আমার ছেলেটি গাছের ছেলেটির নাম
দিয়েছে চারা।
তো একদিন আমার ছেলেটি গাছের ছেলেটিকে
বলল-
‘জানিস চারা, আমার বাবা আজ আমার জন্য
নতুন বালিশ গড়িয়ে এনেছে।
আজ আমি নতুন বালিশে শোব।
তোর কি কোনো বালিশ নেই?’
এই শুনে চারা বলে-
‘না নেই।
গাছেদের কোনো বালিশ লাগে না।
কারণ, আমাদের সমাজে শোয়াই নেই।
বাবা বলেছে, শোয়া মানে মৃত্যু।
আমাদেরকে কেটে শোয়ানো হয়।
তাই তো আমরা সারা জীবন জেগে জেগে দাঁড়িয়ে
থাকি।’
একথা শুনে আমার ছেলেটি হাসতে হাসতে আমার
কাছে এসে বলে-
‘জানো বাবা, গাছেদের নাকি কোনো বালিশই নেই।’
এই হাসি থামিয়ে চারার বাপের মতো
আমিও আমার ছোট ছেলেটিকে কীভাবে বলি-
আসলে মানুষ ও গাছ – এই দুই সমাজের মধ্যে
তেমন কোনো পার্থক্য নেইরে খোকা।
গাছের মতো শেষমেশ মানুষেরও শোয়ানো হয়
বালিশ ছাড়াই।
কবরে বালিশ থাকে না।
মূলত প্রতিটি মানুষই এক একটি গাছ।