ডাবল সিটে
যে কথা বলব বলে ডেকেছি তোমায়
সে কথা পথের ধারে জলে পড়ে যায়-
কাহার সে কথাটুকু বাঁধাই-মলাটে
তোমার সে চেনা নাকি? চেনো নিজেকে?
কতটা ঝিলম হলো ভোরের বাতাস?
মনে হয় তোতাপাখি শিখছে বাহাস-
হৃদয়-হৃদয় করে সকলে ব্যাকুল
কোথায় প্রেমের তোড়া? কই মশগুল?
যেদিকে এসেছি, তুমি কি সেদিকে থাকো?
মসনবি জপ করা পাখিরে ডাকো?
এসব ভাবনা নিয়া, মাথার ভিতর
জীবন কাটায়ে দেবে, শোকের পাথর?
জীবন, আঁতশ-কাচে ঘোলাটে দেখায়
প্রেমিক যাতনা চেনে, মাথা চুলকায়!
কতটা ঝিলম তুমি স্বপ্নে এঁকেছো!
সময়, বৃদ্ধ-ঋষি, তারে কি দেখেছো?
কোথায় যাবার কথা, থামলে কোথায়?
ভ্রমণ লাগছে ধূসর, প্রশ্ন-ব্যথায়?
তারপর ডেকারের ডাবল সিটে
একটাতে বসলে, কাঁপন শীতে;
একটা ফাঁকাই থাকে, পাশের আসন;
এমনই শূন্যতাকে খুব প্রয়োজন!
যে-কথা আমল তুমি করোনি হৃদয়ে
সে-কথা নিলাম আমি, নিই ফিরিয়ে!
ক্বলব
ইয়েমেন, শুকনো পাতায় বসা রক্তবলাকা- আমাকে জাগিয়ে রাখে, মরুবাগিচার ধারে; কাছে এক বারুদগন্ধ এসে, তন্দ্রাকে ধাক্কা দিয়ে ডাকে, স্বপ্নকে আড়ষ্ট করে;
শিশুমৃত্যুর ভাষা, অযুত পিপার গায়ে, শুধু রক্ত, শুধু কলিজা এফোঁড় ওফোঁড় করা গ্রেনেডের কালি-
ইয়েমেন, পিপাসা গোপন করে শুদ্ধ গণিতে, শূন্যতা লেখা তুমি শিখে গেছো নাকি? সারা গায়ে ফুসকুড়ি নিয়ে হাঁটছে আরব! মানুষের বিশ্বাস থেকে, বিষাক্ত পিঁপড়া এসে জড়ো করে রাখছে বালি!
আমাকে বিদ্ধ করো আর্তচিৎকারে, ইয়েমেন; খুলিতে বাজাও জোরে, আগুনধ্বনি; মক্কাকে তাওয়াফ করে থ্যাঁতলানো পিঞ্জিরা, মৃতের ক্বলব-
প্রতিধ্বনি শেষ হলে মাটিও ভিজছে খুনে, ক্রন্দনে!
চারদিকে কোলাহল, আগুন! আগুন!
মৃত্যুকে ডেকে বলো ‘প্রভুর কসম’
বলো ‘কুন, ফা-ইয়া কুন’!
আয়না
জানি না প্রসঙ্গে কে, ডুব দেবে আমার সাথে?
মাটি গায়ে মাখা থাকে, শীতের দুপুরে;
তালগাছ, বক নিয়া সুখী ও সরল
জানি না এমন করে, কে হবে শিকার!
আমি তো কবেই গেছি, পঙ্কিলতায়;
পাতা আর পাড়ভাঙা নদীর ছবিতে-
গান গায় ভিখারীরা, গলায় গরল;
গান গায় মরণ এলিয়ে, শিশুর পাঁজরে!
আমারে ধাক্কা মারে নগরীর ধোঁয়া
পাতক আমিও জানে, মৃত করতোয়া;
কে যাবে? জ্বলন্ত চোখ, শিকে ঢুকিয়ে
দৃশ্যকে আগুনে দাও, দূর করো স্মৃতি!
এখন পারদ ওঠা আয়না আমিও
কে দেখে কাহার ছুরত, কে নিবে আলো?
এভাবে হয় না কিছু, হবে নাকি ঘুম?
রক্তে আছাড় খেয়ে, পড়ে আছে দ্বিধা;
পড়ে আছে মুখছবি, হাসির বেলুন-
কাহারো আপোষ লাগে, কাহারো প্রতিভা!
বাক্যব্যাধি
এসব যে কেনো বলি? কেনো যে বাক্যব্যাধি, সমস্ত গোলাপে ছড়ায়? তার কিছু ব্যাখ্যা থাকা দরকার। কি করে বাগানে এলো, ছানিপড়া গ্লানির কোকিল!
এর ওপর মেঘের পর মেঘ, ধুলার পর ধুলা, টিবির জীবাণু, হাওয়ার কম্পাস এসে জমা হচ্ছে দিনকে দিন! যেনো এক কাঠের চশমা চোখে,ঘাড় তুলে বৃদ্ধ সৈনিক, দেখে পতাকার পৌরুষ। গান গায় শিশুরা, আর, এক বিজয় দিবস এসে মুখ ধোয় বিধবার চোখের পানিতে, যেনো তারা বৃষ্টিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে বয়স্ক ভাতার কার্ড!
কেনোই বা বলছি এসব, কেনো সব মৃত নদী এসে ফোক ছেড়ে আশ্রয় নেয় মেটাল রকে, যেমন, তুমিও পিতার পাঁজর হতে বের করে আনছো তারার ছুরিটা, তাঁর চাওয়া ছিলো সামান্য পেনশন; তোমার বাড়িয়ে দেয়া হাতকেও, বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছে ঠান্ডা চোখের অডিটরটি!
ছিন্ন কাঁথার নিচে, কাঁপছে চরাঞ্চল; এখানে মাঠের পর মাঠ জুড়ে খড়ের গন্ধ, আর, এক রুগ্ন বাঁশিতে যেনো নিস্ফল বাজনা ওঠায় মহাকাশ, ঠাণ্ডা বাতাস! এর ভিতর বাইকে করে আসে শ্রমিক নেতারা, মৌজ করে, মৌন আলোয় তারা হাসে, গজদন্ত; গ্লেস মারে ত্রাণের জ্যাকেট, গায়ে!