শব্দের গল্প
বাংলা বর্ণগুলো সেলাই করতে করতে
জনৈক কবি একগুচ্ছ শব্দ তৈরি করলেন।
শব্দগুলো থেকে বিমূর্ত রূপে সাময়িক
কিছু শব্দের বিচ্ছেদ হলো।
কিছু শব্দ সম্পর্কের ভেতর ফাটিয়ে দিল বিচিত্র ককটেল!
কিছু শব্দের ভার্জিন দেহে নাচতে শুরু হলো মানুষের যাপনবৃত্তের অনুষঙ্গ!
কিছু শব্দ বাস্তবতার শরীরে—
নিরবচ্ছিন্ন পথে করছে প্রমোদ ভ্রমণ।
অব্যর্থ ইশারায় দুঃখের তর্জমায়—
বাকি কিছু শব্দ পায়চারি করছে হতাশার বাঁকে বাঁকে।
অতঃপর কবি দেখলেন:মানুষের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অমৃত যন্ত্রণায় শুধু “অভাব” শব্দটি মুচকি হাসছে…
জাদু শব্দ
আমার মগজ বেয়ে শব্দ নামছে—
সুখ
দুঃখ
হাসি-
আনন্দ
এমন রঙ বেরঙের নানা শব্দ—
কিছুকিছু শব্দের হাতে হাত রেখে মাইল মাইল পথ পেড়িয়ে বন্ধুত্বের বনিয়াদ গড়ি!…
আর কিছুকিছু শব্দের সাথে এলোমেলো বন বনান্তর উঁচুনীচু সরলবর্গীয় পথে পথে হেঁটে আমার দিক বেঁকে
যায় দিকভ্রান্তপুর—
.
আমার মগজ বেয়ে শব্দ নামছে—
সাহসী
নমনীয়
ভীরু শব্দ
এমন নানা শব্দের সাথে —
তাল মিলিয়ে পাশাপাশি আমি বাজি,আমাকে শব্দে শব্দে বাজায়;তবুও শব্দের কাছাকাছি আরও একটু
ঘন হয়ে বসি —
.
আমার মগজ বেয়ে শব্দ নামছে—
আগুন
পানি
হাওয়া শব্দ
এমন নানা শব্দেরও আছে
যৌনতা বোধ—তাঁরা লজ্জা পেয়ে উলঙ্গ হয়ে আমার সামনে কাঁপতে থাকে—এসব না দেখার ভান করে—
তুমি নামক জাদু শব্দ নিঃশ্বাসে চেপে জীবন গড়াগড়ি…
আপনি বরং ঘুমিয়ে থাকুন, বিশ্রাম নিন
বহুদিন হলো এখানে কেউ আসেনি
আপনি যাদের হাসির শব্দ শুনছেন
তাঁরা আগামীতে— মানুষের
জীবন দেখে দেখে কবিতা বুঝবে।
আপনি বরং ঘুমিয়ে থাকুন,বিশ্রাম নিন৷
এদিকে এখনো ভালোবাসা আসেনি,
আসেনি সুখ সুন্দর দিন —
আপনি বরং ঘুমিয়ে থাকুন,বিশ্রাম নিন৷
ততক্ষণে আমি —
আরও কিছু ডায়েরিতে লিখে রাখি —
যেমন আজকে কবিতায় লিখেছি—
এখানে কেউ কারো নয়,ক্ষত ফুপিঁয়ে কাঁদে রাতে
এখানে দুঃখমাখা খবর খায়, পেট ভরানো ভাতে
আপনি বরং ঘুমিয়ে থাকুন,বিশ্রাম নিন।
আমাদের জীবন, দুঃখিত মুখ; হারানো সুখ—
হাওয়ায়- হাওয়ায় তার গল্প বলে যায়।
আপনি বরং ঘুমিয়ে থাকুন, বিশ্রাম নিন৷
হে রাষ্ট্র— আপনাকে
মানুষের যাপিত জীবনের কবিতা আর নাই-বা শোনালাম।
একটি সুগন্ধের অন্বেষণ
দুঃখ আর মুখোশে ভরা —এ যাযাবরের শহর!
তোমার ধূলোর ধূসর গলিতে আহত হয়ে
দূর বহু-দূর পথে পথে ঘুরছি।
পদতলে প্রাসাদের মত দুঃখটুকরো।
একটি সুগন্ধের অন্বেষণে
রসহীন পাথরের ভেতর আটকে যাচ্ছি।
তোমার বাইরে ভেতরে যাওয়া আসা করে মরণ।
অনিশ্চিত আমি,
উঠে যাচ্ছি আলোর জঙ্গল থেকে-
নিজেকে নিজের থেকে অত্যাচারে –
উঠে যাচ্ছি দালচিনি রঙের গম্বুজগুলো থেকে-
থমকে থাকা মানুষের ভীড় থেকে-
ধারাবাহিক অনন্তের ভেতর।
দুঃখ আর মুখোশে ভরা এ যাযাবরের শহর!
স্মৃতিতে আগুন জ্বলে, দীর্ঘকাল!
একটি সুগন্ধের অন্বেষণ—
না পেলে কোনো অভিযোগ নেই;
পেলেও তা যেন আমাকে আনন্দ দেয়।
পাঠক
শুনেছি অন্ধকারের সাথে নিয়মিত
কথা বলো—
একটি প্রশ্নের পর উত্তরের জন্য
যেভাবে নীরবে তাকায়—
ঠিক সেভাবে নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকো
ঘোর আচ্ছন্ন দৃশ্যের দিকে—
তাকে সর্বসত্তায় জড়িয়ে ধরো—
এই তো মনোযোগ
মেধা ও মননের ভেতর
অদৃশ্য
এবং
দৃশ্যমানতার
পরিধি ছাড়িয়ে অনস্তিত্বের ভেতর খুঁজে পাও
শিল্পের জলঘর,রোমান্টিকতার নাচঘর—
সেখানে রোমান্টিক দৃশ্যের সাথে দেখা হয়
বসতে চাও
কথা বলতে চাও
হাসতে চাও
নাচতে চাও
গাইতে চাও
ধরতে চাও
কিন্তু সে এক অধরা, মরিচীকা তা তুমি ভুলে যাও
এই ঘোরতর পরিসীমা থেকে
চুপচাপ হেঁটে যাও
সীমাবদ্ধ আলোর বাইরে—
অচেনার ভেতর থেকে চেনাকে খুঁজে পাও…