হেমন্তের মাঠে সন্ধ্যা নামতেছে।
আমার ভাঙা ক্যারাভান যেইখানে থামতেছে—
তার পরে পায়ে হাঁটা রাস্তা।
জোড়া দীঘি, সরু পথ, আরও দূরে রেললাইন।
তারও পরে শিল, কড়ই আর পাতাবাহারের বাগান।
বাগানের শেষে পথের বাঁক।
বাঁক পেরোলেই কবর।
কবরের বুকে কে জ্বালাইছে মোম?
তারে খুঁজতে গিয়া দেখি অপরাজিতা গাছ,
কয়েকটা ফুল ফোটায়াই ভুগতেছে বিষণ্ণতায়।
তাহলে কি শীত চলেই আসতেছে?
সন্ধ্যা নামার আগেই ধানখেতে নামতেছে কুয়াশা!
শীতকাল আসে, আসুক; ঋতুতে কী আসে যায়?
কুয়াশাতেই বসে থাকে চিরকাল ফৌজিয়া সুলতানা।
২
যে সকল পাহাড়ের কাছে যেতে পারি
নাম আছে সেসবের আলাদা আলাদা;
যে পাহাড় কোনোদিন দেয় নাই সাড়া
তারেই তো ডেকেছি ফৌজিয়া সুলতানা৷
৩
বৃষ্টি ঝরা দেখি, জলের শরীরে করি পাঠোদ্ধার
আরও রূপবতী হবে গহীনের ঝর্ণারা এই বর্ষায়।
ঝিরিপথ মাড়িয়ে ডিঙায়া পাথর, ওদিকেই যাব
ঝর্ণা বেশেই চিরকাল বহমান ফৌজিয়া সুলতানা।
৪
বিষয়টা তেমনও নয়, যেমনটা ভাবি
চেনা-জানা যতটুকু, তাও ভুলে গেছি।
মনে পড়ে যদি দেখি— বরফের নদী
সূর্যের ঝিলিক যেন ফৌজিয়ার হাসি।
৫
কতকিছুই তো ডাকে
কতজন, কত দিকে।
সবদিকে যাইয়ো না
জহির, সবার কাছে।
শান্ত হইয়া বসো,
ভাবো— মোহের ডাক
যারা ডাকে, তারাই একদিন
টক্সিক হইয়া ধরা দেয়।
নিও না আর তুমি টক্সিসিটি,
হইয়ো না পাগল পুনরায়।
বরং ওদের কাছেই থাকো,
মূলত যাদের কাছে থাকো না।
আর ওই ফৌজিয়া সুলতানা
প্রেমে হও চূড়ান্ত প্রেমিক;
যারে না পাইয়াও পাইছো তুমি,
আর কিছু পাইবার হিশেব মিলায়ো না।
৬
সুন্দর ফুলগুলো ফুটে অন্ধকারে।
প্রবল জ্বরের পৃথিবীতেও বৃষ্টি হয়।
ফুলগুলো ভিজে পৃথিবীর জমিনে।
ফুল ফুটে, ফুটোক। বৃষ্টি হয়, হোক।
বৃষ্টির তোপে ফুল যদি ঝরেও যায়,
যাক। বিচ্ছেদের জগতে আমার কী?
আমার প্রেমিকা দূরের শহরে থাকতো
এখন সে দূরের দেশে থাকে, থাকুক।
৭
যদি তুমি মুরিদদের দলের কেউ হও
তবে অই যে পাহাড়, যে কিনা অতোটা
উঁচুও নয় যে লোকেদের চোখে পড়বে,
সে তো তোমার দরবেশ। যার বুক থেকে
একটা রাস্তা সামান্য বাঁক খেয়ে সোজা
নেমে এসেছে এবড়ো-থেবড়ো জমিনে।
আর তুমি সেই রাস্তা থেকে ছিটকে যদি
হারিয়ে ফেলো নিজের পথ, তবে এসো—
জিয়ারতে; যদি মুরিদদের দলের কেউ হও
অই যে পাহাড়, সেই তো তোমার দরবেশ।
৮
কী হতো?
যদি তোমার দেখা না পেতাম!
শৈশবের মার্বেলের মতো গড়িয়ে গড়িয়ে
হয়ত কোথাও নিজেকে লুকিয়ে ফেলতাম।
কী হবে?
যদি আজ তোমাকে না পাই!
বাতাসে মিলিয়ে যাব না’কি!
বুঝে নিও ঝড়ো হাওয়ার রাতে,
পাওয়া আর না পাওয়ার মাঝে
সামান্য স্মৃতি— এইটুকুই জীবন।
৯
কবে যে আমার দেহে লেগেছিল পউষের রোদ্দুর
তোমার ছলনা জেনেছিল ভালো গোর আজিমপুর।
১০
এ কেমন আশেক বানাইলা মাবুদ,
মনেতে দিলা এ কেমন ইশক!
আমি কি ফের পাগল হইয়া গেছি না’কি,
বাড়ি ছাইড়া আসছি যেন দূর-দূরান্তের দেশে!
কার নামে যে কান্না আসে,
চিনি কি আর তারে আমি?
মাথা ঠুকে রক্ত ঝরে,
কান্না তো আর নাহি থামে!
রক্ত-জলে গোসল সেরেও
আমি তো ফের একই আশেক,
কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে
মরছি যেন একই প্রেমে!