এখন যৌবনকাল

●●

রুগ্ন শরীর, তুলতুলে নরম চামড়ার বার্ধক্যকে দেখলাম
পথের ধারে বসে আছে।
নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় হাত দুটো থরথর করে কাঁপছে।
ছানি ধরা দুটো চোখে ওনার পক্ষে যৌবন দেখা সম্ভব নয়।

ঘরে ফিরে ঈশ্বরকে দুষলাম
ওনার কেঁপে ওঠা হাত দুটোর জন্য
ছানি পরা চোখ দুটোর জন্য।
সমস্ত দুর্ভাগ্যের জন্য।

দায় সেরে ঘুমোতে যাব ঠিক এমন সময় ভাবলাম
যৌবনে সবার চোখ নিরোগী।


তোমার আমার

●●

তোমার কাছে-

শীত মানেই কুয়াশা ভেঙে মুখ দেখানো
হালকা রোদের মুচকি হাঁসি।

আমার কাছে-

শীত মানে কুয়াশায়
খোলা আকাশের নীচে
জ্বলে জ্বলে নিভে যাওয়া আগুনকে ঘিরে বসে থাকা রুগ্ন মুখ।

দুজনার ভাবনাতে কুয়াশার অভিন্ন মিল

তোমার কাছে-

বর্ষা মানেই মুষলধার বৃষ্টিতে জানালার ধারে বসে কয়েকটি অলস মুহূর্ত পার করা!

আমার বর্ষা মানে
বন্যা,
সর্বহারা
অস্বাস্থ্যকর রিফিউজি ক্যাম্পের অপুষ্টিকর চোখের চাহনি!

দুজনার ভাবনাতে –
জল ফারাকটা তোমার ভেসে থাকার
আমার ডুবে যাওয়ার!

তোমার কাছে –
গ্রীষ্ম মানেই ছুটির দিন, কৃত্রিম বাতাস, সহজলভ্য পানীয়।

আমার কাছে-
গ্রীষ্ম একটা তালের পাখা।

দুজনের ভাবনায়-
গ্রীষ্ম স্বস্তি- অস্বস্তির মাঝামাঝি সময়

জানো?
তোমার কাছে প্রতিটি মৌসুম এক একটি কবিতার চিত্রকল্প,
আমার কাছে শুধুই বেঁচে থাকার সংগ্রাম!

তোমার প্লেটের ফুলকো লুচিখানা এখনও আমার কাছে গল্প


ফ্রেম বন্দী মানুষ

●●

সৌখিন কারুকার্য খচিত ফ্রেমে বন্দী একটা ছবি।

ছবি থেকে কে জেনো হাত নেড়ে আমায় রোজ ডাকে-
জিজ্ঞেস করে,

যে আগুনে নিজে জ্বলে তোদের একটি শীতল পাটি বিছিয়ে দিয়েছিলাম তাতে কি এখনও বরাবর ঘুম আসে?

খানিক বাদে আমি রোজকার মতো সেই প্রশ্ন এড়িয়ে কানে বালিশ চাপা দেই।

আমার ভেতরেও যে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন, তার তাপ কি সেই মানুষটার গায়ে লাগে?

আমি যে শীতল পাটির জায়গায় বিভাজিত মাটি রেখে যেতে চলেছি!

ফ্রেমে বন্দী হবার পর উত্তরসূরিকে কি জিগাব?
মাটির বুকেও জ্বলছে আগুন ।

ধোঁয়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে মনে হয় আমিও ঠিক একজন ফ্রেমে বন্দী মানুষ, যে বেঁচে থাকার সংগ্রামে এড়িয়ে চলে সবরকম স্ফুলিঙ্গ ।


ছায়াছবি

●●

আমি ঘুমালেই
জেগে উঠে
পুরাতন ইচ্ছে গুলো

আপনি যে রাতের পর রাত
নিজের শোবার ঘর ছেড়ে
উঠে চলে আসেন আমারটায়
পাশে শুয়ে গল্প বুনেন পূর্ণাঙ্গ সব সুন্দর কবিতার
কিংবা সম্ভাবনার!
মাঝে মাঝে আপনার চোখ দুটো কি এক অজানা মায়ায় দীপ্ত হয়ে ওঠে!
অন্ধকারেও আমি বেশ দেখতে পাই
আপনার আদর, আবদার, তাড়না

সন্মতি জানানোর ঠিক প্রাক মুহুর্তে আপনি উঠে চলে জান নিজের ঘরে—
পিলো কভারের ভাজেঁ ভাজেঁ আমি খুঁজে বেড়াই আপনার দীর্ঘশ্বাস!
ঠিক এমনি করেই রোজ ছায়াছবির মতো ঘটে যায়

আমি ঘুমালেই
শুরু হয় ছায়াছবি


দিনশেষে

●●

দিনশেষে কামরাঙা রঙের স্বপ্ন ঠোঁটে বেঁধে টিয়ে পাখিটা বাসায় ফেরে ।

দিনশেষে জীর্ণ কাঁথার ফাঁক দিয়ে গোটা আকাশ দেখা যায়।

দিনশেষে সুধরে যাবে বলে ভাবা মন্দাবস্থা মুচকি হাঁসে।

দিনশেষে চিৎকার এবং আর্তনাদ পাশাপাশি চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে।

সারাটা দিন যেটা মসৃণ আপেল ভেবে গিলতে কষ্ট হয়,
দিনশেষে সেটা একটা সুস্বাদু আতাফল হয়ে পড়ে থাকে ক্ষুধার পেটে।

এভাবেই একটা দিনের শুরু থেকে শেষ।

আমাদের স্বপ্নেরা চোখে বাসা বাঁধতে ভয় পায় দিনশেষে।


জ্যামিতিক

●●

আমি একটি রেখা হতে চেয়েছিলাম
অসংখ্য বিন্দুকে সংগে নিয়ে,
বুক ফুলিয়ে সমান পথে চলতে চেয়েছিলাম ।

একদিন তুমি বৃত্ত হয়ে আসলে
এখন আমি একটি জ্যা,যে সমতলে তোমার অবস্থান
তার যেকোনো দুটি বিন্দুকে ঘিরে আমি পথ চলি।
ব্যাস হলে অন্ততঃ তোমার হৃদয় জুড়ে থাকতাম।
জানইতো ব্যাসেরা জ্যা হলেও, জ্যারা ব্যাস হতে পারেনা কখনো!

তাই এখন থেকে আমি একটি জ্যা
বৃত্ত তুমি সুখে থাকো

Share.

আসাম এর ধুবড়ী জেলায় জন্ম ও বেড়ে উঠা। বাংলা, অসমীয়া, হিন্দি ভাষায় সাহিত্য চর্চা করেন। অনুবাদ করা তার অন্যতম কাজ। প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ - বাট (২০১৯ অসমীয়া) ইমেইল -saikiamun01@ gmail.com

Exit mobile version