তাপস চক্রবর্তী
জ্বর

 

জ্বরের ঘোরে দেখি, রোহিনীর জন্য রাষ্ট্র

তপতীর জন্য নির্মিত সিংহাসন

অনিন্দিতার জন্য উচ্ছ্বল নদী, শান্ত পাহাড়

আর সবুজে সবুজ স্থির বারিধারা।

 

আজ নাকি পহেলা মেশহরে মিছিল নেই

নেই শ্লোগান মুখরিত রাজপথ সব সুনশান

যেনো যমের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছেন ভগবান

তবু চাইচাই চাই শ্রমিকের জন্য গোলাপ।

 

আমার শরীরে বুকের পাঁজরে চোখের খঞ্জনে

শরীরিয় সংবিধানের তাপমাত্রা একশত ছয়

অক্সিজেন সংকট খিঁচুনি হৃদপিণ্ডের পরতে

মুখের গহ্বরে বগলে দিশেহারা থার্মোমিটার।

 

রাত জেগে জেগে দিতে হবে আজ জলপট্টি

নিতে হবে গরম গরম জলের ভাপ 

দারুচিনি লবঙ এলাচকমলার খোসায় 

স্থির হয়েছে মানুষের আজকাল।

 

হাজার ক্লান্ত পদাতিক জেগে আছে আজ

সহস্র রক্ত গোলাপ হাতে রজনীগন্ধার সংসারে।

কেরোসিনের কুপিতে জ্বলছে নিবু নিবু আলো

একেলা কেউ একজন জাগছে কারও শিয়রে।


সোয়েব মাহমুদ

জ্বর ১০৪

 

জ্বর বাড়ছে,

জেব্রাক্রসিং

লাল নীল হলুদ আকাশে নিয়ন বাতি,

জ্বর বাড়ছে

আর তুলোর জ্বরে  হাতের রেখায় ভর 

করে

উড়ছে ঘুড়ি,

নাটাই সুতার নীচে

দীর্ঘ হচ্ছে পৃথিবীর

সমানবয়সী প্রকাশ্য অভিযোগনামা।

পাখিদের সান্ধ্যআইন আর জ্যামিতিক

গল্পগুলোকে ধুয়ে এনে,

আমার নীরেট বায়ুশরীরে এড়িয়ে জাগতিক জঙ্ঘা,

বুদবুদের কুয়াশায় ঠায়,

তোমার স্পর্শে বাকরুদ্ধ হই,

তোমার ঠোঁটে হই স্তব্ধ।

খিলগুলো তুলে দিয়ে তাই দেখা হয়না

সেফটিপিন খুলে

দরোজার ওপাশেই;

স্তনারণ্যের প্রত্যাশিতগল্পে

স্পর্ধায় সকল যতিচিহ্নগুলোকে নিষিদ্ধ করে

নিঃশ্বাস যাচ্ছে ছেড়াবোতামের অন্ধগলি।

 

শুধু দেখি

জ্বর বাড়ছে স্তব্ধতার মোমবাতি চুইয়ে 

শরীরেরই বাড়ছে জ্বরের শরীর,

মিলিয়ে যাচ্ছে একের ভেতর আরেক।

বালিশগুলোকে কানে কানে তাই বলছি

আজ রাতে বাতিটা নিভিয়ে দাও

এখনই ঘুমিয়ে পড়ো,

দৃশ্যমান দৃশ্যের পকেট থেকে গড়িয়ে

পরে শব্দ দাঁড়িয়েছে শিয়রে।

বর্ণমালা দাঁড়িয়েছে ধরে আঙুল অসাধ্য রোদের।


হিজল জোবায়ের

সন্ধ্যাভাষা


শীতকালের কাছাকাছি এ সময়

পৃথিবীর দিকে ঝুলে আছে অপার্থিব সন্ধ্যার ছায়া

 

তোমার স্মৃতির বাইরে দেখো যেতেই পারছি না।

 

শহরের শেষ মাথায় বুচার হাউজ

নমিত গাছপালায় ঢাকা।

 

ছোটো ছোটো পায়ে হাঁটি,

আবার নতুন করে চোখ খুলে দেখি

এ কেমন নতুন চারপাশ!

 

বায়ুসমুদ্রে আকাশমণি ভাসিয়েছে 

নৌকার মতো পাতা।

 

জ্বর ছেড়ে গেলো।

 

বাতাসে কীসের গোপন অঙ্গীকার,

জলাশয়ের পানিতে দুলছে অচেনা ফুলের ছায়া।

 

গোধূলির ম্লান আলোয়
প্যাগোডার বিষণ্ণ মিনার থেকে শিস দিয়ে উড়ে গেলো পাখি


কবির হোসেন

তুমি না, জ্বর এসেছে

 

এক.

পাথরে আমার নাম লিখেছিলে,
তারপর একদিন আরেকটি পাথর দিয়ে
ঘষে তুলতে গিয়ে দেখলে আগুন জ্বলে।
আগুনের সৃষ্টি দেখে তুমি উল্লাসিত হলে

আলোয় আলোকিত হলে।
আমি তখন জলপট্টি শুকাতে দিই কপালে।
 

 

আগুনের উৎপত্তিটা তোমার ঘরে হয়েছে বটে
আমার ঘরে তাপ আর জ্বরের।

 

দুই.

 

জলপট্টিতে জ্বর সারলো, কপাল সারলো না!


হাসান রোবায়েত

তৃণাঙ্কুর 

 

জ্বর এলে তুমি আসো, তোমার করুণা 

আসে স্নিগ্ধ অভ্যন্তরে যেনবা আকাশ 

পরিণত সূর্যাস্তের কথা ভাবে, সোনা

 

জ্বর ভালো হতে হলে নাপা খেতে হয়

যেসব ব্যথার পথ্য আমি জানি তারা

তারা কেউ নয় অত ভালোবাসাময়

 

তুমি এলে কপালের জলপট্টি থেকে 

সমস্ত গানের সুর ধীরে কথা কয় 

তোমার আসার দিকে ফল ওঠে পেকে

 

সমস্ত জ্বরের মধ্যে খালি ভালো লাগে 

তোমার কাছেই বসাযেন শুয়ে শুয়ে 

অনেক বিত্রস্ত আমি, বিবমীষা জাগে

 

জ্বর এলে তুমি আসো, তোমার করুণা

আমাকে নীরোগ করে ভালোবেসে সোনা


সাম্য রাইয়ান

হালকা রোদের দুপুর ১০

 

অনেক গানই তো অহেতুক গাই।
অনেক সুরের ব্যাখ্যা জানি না।
ধৃতরাষ্ট্রে খবর পাঠাবো।
মোবাইলটা খুঁজে পাচ্ছি না
!
এইবার ডুবে যাবো পৌত্তলিক জলে।
ডুবো জলের ক্ষণে স্পষ্ট টেলিভিশন

পরশু সন্ধ্যার আড়াল। তীব্র লুকোচুরি,
পাশে গোল হয়ে বসো।
হরিণের স্বপ্নের ভেতর কার যেন জ্বর।
রাত্রির বারান্দায় লাফাতে লাফাতে
, যারা মেতেছিলো
থেমে গেল তাদেরও ভালোবাসাবাসি।
দুঃসহ আসিফের দিকে সামান্য ঝুঁকে
,
উন্মুখ, লুকিয়ে আছে ঝুঁকির

ইশারা।


শফিক সেলিম

জ্বর

 

ধ্বসে পরে নীতি নৈতিকতা

কুয়াসা গভীর হলে জল গড়িয়ে পরে খালে

সোনার রাজহাঁস, আহা রাজহাঁস

 

তুমি থাক রাজার বাড়ি

আড়ালে দেখা হলে জ্বর আসে

জ্বরে পুড়ে চোখ, কলংক কপাল

 

জ্বরে জ্বরে দুপুরে গ্রামের পথ তীব্র নির্জন

কোমরে কলস দেখে

এতো জ্বর কোথায় রাখি

 

পানাফুল খোপায় গুজে রাজহাঁস পুকুরে ভাসে

জ্বরে পুড়ে পুড়ে বদলে যায় শারীরিক ভূগোল

সহসা খসে পড়ে নীতি নৈতিকতা

 

হে রাজহাঁস, সোনার রাজহাঁস


শামশাম তাজিল

জ্বর এলে আম্মার কথা ভেবে 

 

তাপমাত্রা  বাড়ছিল।
বুঝতে পারছিলাম
  মাথা ভারি হয়ে আসছে।
উত্তাপ ও শীতলতা সমভিব্যাহারে ভোগ করতে করতে
বিছানায় শুয়ে ঠিকঠাক ভাবতেও পারছিলাম না।

 

কেবল ওষুধ নয়, আরও কিছু দরকার ছিল। 

 

এমন কিছু দেখছিলাম যা আমার দৃষ্টিপটে ছিলো না।

দেখছিলাম আম্মার হাত ও ফ্যাকাসে মুখ, চিন্তাক্লিষ্ট।
আব্বার উৎকণ্ঠা। পাউরুটি ও দুধের বাটি ।
 

অথচ সেসবের কিছুই কিছু না সম্মুখে

 

আমার আরও কিছু দরকার ছিলো 

 

আমার নড়তে ও লড়তে ইচ্ছা করছিলো না

মনে হচ্ছিল আমি তলিয়ে যাচ্ছি

উত্তাপের নিজস্ব গন্ধ ও স্বরের ভেতর শুনছিলাম
পানি পড়ার শব্দ।
ওষুধের গন্ধ ও নিজের গায়ের মৃদু
  আশটে সুবাস!

 

আমার আরও কিছু দরকার ছিলো 

 

আমার  দরকার ছিল চিকিৎসা ও শুশ্রূষা 

সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল
কপালে আম্মার হাত ও ভালোবাসা


হাসান জামিল

জ্বর

 

জ্বর একটি দীর্ঘ উষ্ণ আলিঙ্গন

আমি জ্বরের জন্য অপেক্ষা করি

সে আমাকে ঘোরের দিকে টানে

দুপায়ে কিছুটা ভার সেঁটে দেয়

আমি এলোমেলো পা ফেলি

আরেকটু হলেই বমি করে দেবো

আমি চোখ লাল করি

কাউকেই চিনতে পারি না

 

প্রেমিকাকে প্রাচীন মমির খোল মনে হয়

মনে হয় পচা ভঙ্গুর মাংসের স্তূপ

মা, সে যেন আমাকে এখনো জন্মই দিয়ে যাচ্ছে

বাবা, পাউরুটি আনতে গিয়ে নিজেই পাউরুটি হয়ে গেছে

আমার বোন সেই কবে থেকে একটি বন্ধ্যা লেবু গাছে 

পানি দিচ্ছে একটি সুগন্ধি লেবু ফলের আশায়

কারবালার এই তৃষ্ণাতেও যে দিচ্ছে না একটি তৃপ্তি

ভাই, সে কোন দূরে দাঁড়িয়ে দিচ্ছে আজান 

তার মিহি সুর কি পৌঁছে এই বধিরের কানে!

 

জ্বর আসলে হাড়ে হাড়ে বাড়ি লাগে

ভঙ্গুর সমাধির মতো সব ভেঙেচুরে পড়ে

বাঁশঝাড় আছড়ে পরে মাথার ওপর

আমি মাকে জড়িয়ে ধরতে চাই

কিন্তু সে তো কাতরাচ্ছে প্রসবব্যথায়!

বাবা, একটি পাউরুটি

বোন, বন্ধ্যা লেবু গাছে

ভাই, দূরের মুয়াজ্জিন

প্রেমিকা, সে তো প্রাচীন মমি

 

জ্বর এলে শুধু জ্বরকেই জড়িয়ে

ধরি আর কাঁপি তার উষ্ণতায়


তানজিন তামান্না 

উজ্জ্বল জ্বর

 

একজন বন্ধু নাম পরিবর্তন করেছে। 

ওকে পুরাতন নামে ডেকেছিলাম দুএকবার। 

নতুন নামেও হয়েছে আলাপ। 

হঠাৎই ওর পুরাতন নামটি মনে করতে পারছিনা!

 

এরকম অনেক কিছু ভুলে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশিত!

তুমি বলছো

এগুলো কোভিডের প্রভাব।
জ্বরাক্রান্ত দিনগুলোতে ভেঙেছিলো বেশকিছু উজ্জ্বল প্রেম।
তারা কোথায় গিয়েছে হারায়ে
; আজো খুঁজে পায়নি ঠিকানা!

 

ভীষণ ক্লান্ত আমরা

ঝাঁপিয়ে পড়ছি নিজেদের পুনরুদ্ধারে।

চুমুবাহিত সংক্রমণে জেগে উঠছি ঘোরগ্রস্ত শঙ্কায়!

মাঝরাতে টেনে দিচ্ছি কাঁথা পরস্পরের গায়ে

জলপট্টির আড়ালে আমাদের কপালে 

বেড়ে যাচ্ছে জ্বরের উত্তাপ!


সোহরাব ইফরান 

অপরাহ্ণের ঈষৎ মোহনা

 

()

 

ঝাউয়ের ছায়ায় হাজারো উপত্যকা!
বিশ্লেষনাত্তক মনোভঙ্গির আকাশে যাই।
ষ্টীমারের
  ভেঁপুর  মতো, বন্দরছাড়া দেখি!
বৃক্ষের নীমিলিত তন্তজ তির; বিপন্ন শ্বর আসে!
সদানন্দ হয়। নির্জন বনের দরোজা; ভয় খুলে।
না ঝর্ণা
, ঠোঁটের  উত্তাপ! রাতের অতিক্রান্ত নেই যেনো।
চিরন্তন আলো আর্চার
; ঘাসের বখামি;
নালদোল পালানো শালিখ যেমন।
দিনমান আকাশের আনিত পল পল্লব জানে না।
কার্বো কোনও লতার জন্য খয়েরী
হলদে হয়ে যাচ্ছে।

 

()

 

আগুনে লাল পাতা ঝোপঝাড়ে,
ত্বক কেঁটে অভিভূত পূর্বাপর বেড়াল।
জ্বর আসার পর থেকে বন্দরছাড়া ডাকাডাকি।
এরে কয় পায়রা
; দরজার কয়রা; ঘরের স্নান দুপুরে।
শুধু যেই মাউথওয়াশ করা হয় না।
যেই মাউথঅর্গান মার্কেটে কিনতে পাই না।
জ্বর রূপো
, পালাক্রমে উপকথার কোন বাস্তব অনুপ্রেরণা।
পা থেকে শূন্যতা পর্যন্ত জ্বর মাতমের শাড়ি
, উষ্ণ গহনা।
শাউয়্যার জ্যাল। জ্বর একটা ফ্যাটিশ সূর্য হয়তো না।
তোয়ালে টানানো হাঁসের এন্টেনা।
শীতকালীন অ্যান্টিক
; ‘ভেঁজা সিঁড়ির কয়েকটি ভাঙা ধাপ
পুরোপুরি অন্ধকারে; তখনো ডুবি।
বাঁকে বাঁকে এসব চপল তরু
, ভ্রান্তি যুগের সোয়ালক্ষ্য
ডিজাইন এর অধীর মনোভূমিভাবায় আমায়।
কোন ভেসেআসা না।
মনমাতানো নদী
, ‘আমি চাই ডুবে যাওয়ার অন্ন দিক তেশিরা।
কোনো তিসির দানা?  

 

()

 

মানুষের চেয়ে বালিশের যত্ন বেশি। 

ই জন্যই আর ঘুমাতে হলো না। 

টিকেট। তদ্দিন ধরে ধোয়া তুলসীপাতা। 

নিজের মাথার পাশে দিয়া আগরবাতি,   

প্রযত্নে শেষ হলো, বিগত ক্ষয়ক্ষতি।


হোসেন রওশন

জ্বর

 

বাংলা সিনেমায়

বোতল ভাঙ্গার দৃশ্য দেখে

চোখ সরানোর বয়স তখনও হয় নাই। 

তোমাকে চিনতাম। তোমার মাকেও।

 

সিনেমার দৃশ্য দেখে চোখ সরানোর বয়সে

তোমার মায়ের পাশে দাঁড়ায়ে থাকা
এক স্কুল টিচারকে চিনতাম। মায়ের প্রেমিক।

তুমি উনাদের প্রেমের ভিতর
টিফিন ক্যারিয়ারের ভূমিকায় থাকতা
, প্রায়ই সময়।

আর তিনজনেই ঘুরতে গেছিলা ডোমার ফরেস্ট।

 

বহুদিন পর ঐ ফরেস্টের এক ড্রেনের পাশে

একটা ছেঁড়া কামিজ দেখে আমি বাড়ি ফিরছিলাম। 

সেইরাতে আমার খুব জ্বর আসছিলো।


আবির আবরাজ

একটা নাম লিখলে উড়ে যায়

একটা নাম লিখি পাতার উপরে 

অক্ষরগুলি পাখি হয়ে যায়

উড়তে থাকে নানাদিকে যেনোবা বিদিক

গাছ আর পাখির বিচ্ছেদে হায়, আমার জ্বর উঠে যায়

উড়াউড়ি তো চিরচলমান

কে আর বলবে উড়ো না তাকে?

জ্বরের তাপে পাখি পুড়ে যায় কেবল 

গাছের গোড়ায় কিছু ছাই পড়ে থাকে


রাবিয়া সাহিন ফুল্লরা

ডাইলপুরি

 

একটা ডাইলপুরিই ত

ভিতরে ডাইল ছিল কী ছিল না তার চেয়ে

বেশি মনে পড়েখুব জ্বর ছিল গায়ে।

 

যখন নানু ভাইয়ার কোলে চড়ে বেড়াতাম,

খুব বেশি না, বছর কয়েক,

রঙিন তালের বড়া আর গোল গোল জামা

কিভাবে যে শেষ হলো, কিছুই মানি না।

 

তারপরও হেঁটে হেঁটে সান্ত্বনার ভিতরে

ডাইলপুরির কথাই মনে পড়ে, জ্বরে।


মুহিন তপু

তীব্র জ্বরের মৌসুমে 

 

যেন পৃথিবী ঘুরছেনা, আমি ঘুরছি

তোমাকে কেন্দ্র করে।

 

যেন আমি হেঁটে যাচ্ছি মাঠের পর মাঠ 

শব্দহীন।

 

তুমি ডাকছো ইশারায়, আমি প্রদক্ষিণ করছি চোখ

বারবার এক  রাস্তা

এক  মাঠতুমি – 

 

ভেতরে ঢুকতে গেলেই জলের দেয়াল।

ভিজে একাকার আমি।

 

শরীর কাঁপছে

চোখ লাল, খুব শীত

কোথায় আমার লাল সোয়েটার?


সৈয়দ এনামুল তাজ

কামভাব

 

এমন ভাবে রাত জাগে যেন একশত তিন ডিগ্রি জ্বর
দূর থেকে দেখি
কার সঙ্গমযোগ্য শরীরে কে তুলে তবলার তাল।
মাতাল কে এমন
, রথ ও লটকনের লোভে
ঘোরে যে ব্রাহ্মন্দী শহর
?
পুরাতন লঞ্চঘাটে একদা যার পড়েছিল শব
দূর থেকে তারেও দেখি
, দেখি
মেঘনায় ভাসতে থাকা নৌকার তল
কী ছলনায় ভাঙে নতুন পানির রতি


তানিম আলামিন

জলপট্টি 

গভীর রাত। কুকুরের ডাকে কাতরায় অন্ধকার।
জোনাকিরা আঁধারের গায়ে বাতাসকে পথ দেখায়
,
দখিন বাতাসে কেঁপে উঠে কুপির উলুধ্বনী। 

 

আমার মাথায় জলপট্টি দিয়ে, মা বাতাস করছেন।
আমি ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি
, আজরাইল এসে বললেন,
তোমার মাকে নিতে এসেছি।আমি বললাম,
আমার হায়াৎ মাকে দিয়ে আমাকে নিয়ে যান।
তিনি বললেন
, ‘তোমাকেই নিতে এসেছিলাম খোকা,
কিন্তু তোমার মা সব হায়াৎ তোমাকে দিয়ে দিয়েছেন।


দিলশাদ জায়দী

তোমার জন্মদিন

 

যেদিন তোমার জন্মদিন খুব করে বৃষ্টি হোক

ভিজবো আমি,গায়ে তোমার জ্বর আসুক।

কেউ পাবে না তোমার দেখা 

১০৪ এর জ্বর আসুক।

 

আমার তখন ভেতর বাড়ি উথাল হাওয়া

কপাল ছোঁয়ার ছল,

তোমার সেদিন ভীষণ জ্বর।

 

পাশে তোমার কেউ না থাকুক

আমার হাতের শীতল পরশ

তোমার কপাল ছুঁয়ে জ্বর মাপুক। 

তোমার যেদিন জন্মদিন,ভীষণ করে ঝড় আসুক

আকাশ জুড়ে অন্ধকার, সবাই এঁটে ঘরের দুয়ার

একলা আমি তোমার পাশে

এমন একটা দিন আসুক।


শুভ চক্রবর্ত্তী 

জ্বর পর্ব

 

মূলত যখন জ্বর আসে,
কাঁথারা কাঁপুনিতে শরীরকে জড়িয়ে থাকে।
আবার জ্বর হুট করে চলে গিয়ে দাবানল হয়ে ফিরে
,
সিদ্ধ করে পেলে ভেতরকার হংসী। 

 

জ্বরের তোপে মা মা করে ডুকরে কেঁদে উঠি। 

জলপট্টি সাদা পায়রা শান্তির প্রতীক হয়ে বসে  আছে।
বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছে মায়ের আঁচল আমার বুকে।
 

 

ধমনীর ভেতরে চঞ্চলতা

বিছানায় যন্ত্রনায় তুফান ঝড়ে মধ্যসাগরে চলমান
নৌকার মতো এপাশ ওপাশ দোল খাওয়া।

পেসক্রিপশন জুড়ে কার্তিকের রাত্তিরের
মৌমাছির ভন ভন শব্দে আমার মনে পড়ে যায় বৃষ্টিস্নাত

দুপুরের মায়ের খিচুড়ি রান্না


রিদওয়ান নোমানী

নাপা এক্সট্রারে বড় বেশি প্রেম বিদ্বেষী লাগে

 

নির্লজ্জের মত বারেবারে আসো তুমি

কতবার কত করে বলেছি

এসো না। বড় বেশি অসহ্য লাগে।

চুন সুরকির দেয়াল টানায়ে

কাঁটাতার বিছায়ে

কয়েছি, নিষিদ্ধ এ পথ।

মানো নাই।

 

জীবনের যত চাওয়া, সব চলে গেছে 

মুখ ফিরায়ে গেছে, শোনে নাই হাহুতাশ। 

কেবল যাও নাই তুমি। পলেস্তরার মত 

জড়ায়ে রেখেছো দেহবন্ধনী।

 

আজ আমি তোমারে মেনেছি,করেছি কবুল

তোমার মত করে কেউ বুঝেছি কি আমারে?

বোঝে নাই।

এই বাস্তবতারে ঠেলে আর কতদূর!

 

তুমি আসলে পুলক জাগে

বেখেয়ালে পরাবাস্তব গল্প বুনি।

 

রে জ্বর,

তোমারে ভালোবাসার পরে 

নাপা এক্সট্রারে বড় বেশি প্রেম বিদ্বেষী লাগে।


জুবায়ের দুখু

জ্বর রাতে স্বপ্ন

 

সে রাতে খুব বৃষ্টি হলো,

আর, আমার শরীর জুড়ে এলো জ্বর।

কোথায় থেকে এলো জ্বর

হিমালয়েও নিশ্চয় বৃষ্টি হচ্ছে

অতি হিমতায়পাখিদের মন খারাপ হয়।

পাখিদের মন খারাপ হলেই

উড়ে আসেবাঙলাদেশে

আর, আমার শরীরে জ্বর আরও বাড়ে।

চোখে বাড়ে রাত

সেই রাতে কাকে যেনো স্বপ্ন দেখি

যে আদম হাওয়ার পুত্র আমাদের পিতা।

কোথায় ছিল এই জ্বর

যে জ্বর রাতে সাক্ষাৎ হয় পিতার।

এখন সন্ধ্যা নামলে আমি কেবল

হিমালয়ে বৃষ্টির কামনা করি,

এবঙ মন খারাপ পাখিদের ফিরার অপেক্ষায় থাকি।

Share.

'কিংবদন্তি' সময়ের অভিমুখে নিজের পদচ্ছাপ রেখে যেতে চায়। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ তথা শিল্পের সকল শাখাই তার অভিলক্ষ্য। 'কিংবদন্তির' ইচ্ছে সমসাময়িক থাকা। অনলাইন ওয়েবম্যাগ হিসেবে শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে চায় 'কিংবদন্তি'। এটি যেমন কারোর একার নয়, তেমনি সত্য ও সুন্দরের পথে ধাবমান যে-কারোর একান্ত নিজের। 'কিংবদন্তি' নান্দনিক স্বার্থে এই প্যারাডক্স নিয়েই চলতে চায়। সফলতা নয় সার্থকতাই এর মূল লক্ষ্য।

Exit mobile version