পরমায়ু

পেঁয়াজের খোসার মতো নিজেকে খুলতে খুলতে দেখি শেষতক আর কিছু না,অপেক্ষমাণ খোসাগুলোই জমে আছে,সময়ের শরীর থেকেও যদি অনুরূপ খুলে নেই সমূহ ভ্রমণ; শেষতক শুন্যই জমাটবদ্ধ এক বিশীর্ণ লতাটির মতো জড়িয়ে রয়েছে ফাঁকে বুলটি তোলা কোনো মাছের ওষ্ঠ থেকে নির্গত বায়ুটির মীর
জীবনও এমনই, পরমায়ু বলে যদি ধরে নেয়া যায় তাকে প্রবল এক সত্যের স্বরূপ, শুচি বায়ু মানুষের মতনই সে
কেবল ধুয়ে যায় দেহ, যদিও তেমন আর ধুলা বালি বাকি থাকে না বিশেষ


রিফু 

সরাসরি করোনা নিয়ে কবিতা লিখবো, এই ভাবনায় মাস্ক পড়ে কীবোর্ডে বিলি মারি বুড়া আঙ্গুল, চশমাটা ঘোলা হয়ে আসে
জানি বাষ্পীভূত হয় প্রশ্বাসজাত সব বায়ুই একদিন, তাই ইত্যকার চুমুরা মেঘসঞ্চাত,যেনো শিরায় শিরশিরানির মরা হাঁসের পালক
সাদা স্পেইসে ব্যার্থ টাইপিংগুলো যেনো সদ্যজাত মরা মরা শিশুর ভিন্ন ভিন্ন বয়সের কিছু রক্তের দলা, যেনো চক পেন্সিলে লেখা মুছে ফেলা অক্ষরের গুড়া দাগ; হয় না, কাটা কাটা নাক মুখের ফর্সা বেবুনের মতো কোনো উত্তরাধিকার

যেনো বিফলতা পায়জামার আস্তিনে রিফুর মতোই, মেনে নিয়ে গুটিয়ে বলি ধুলা থেকে বেঁচে গেলো সামান্য আয়ু
করোনা নিয়েও সরাসরি কোনো কবিতা লিখতে বসে, বুড়া আঙুলটা সেই রিফুর মতনই কোনো আস্তিনটার আড়ালে দেখি রেখেছে তোমায় 


বেড়ীবাঁধ 

(শ্রদ্ধাভাজনেষু কবি শিল্পী হাসান মাহমুদ ভাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা স্বরূপ

প্রতিটা অন্ধকারেই আমি তোমাকে লতিয়ে উঠতে দেখেছি,

অনন্ত যাত্রার অভিমুখে যেভাবে সাটিন কোনো, মূক এক আবেশ ছড়িয়ে রাখে ঘোরের উঠানে, যেমন এইসব আকাশভেদী কিছু ইমারতের মাথাল,আমার শহরে, যেনো রঙিন টবের কিছু শোভাতুর উর্দ্ধপাতন; আকাঙ্খা নন্দনের মিছিল যার সমস্ত ভাষাই অলৌকিক মৌনতার মোন্তাজ; প্রতিদিন সূর্য্য ডোবার কালে তুমি তাতে জল ঢেলে যাও,যেনো পুনপৌনিক একটা ক্রিয়াদির জীবনে বহূদিন একটা বিষম বাহুর কোনো ভীষন ত্রিভুজ, তাঁর স্বাপেক্ষে আমারাই বারবার পাপেটের শোতে উঠাচ্ছি, নামাচ্ছি আমাদের কান্ড মস্তক আর হাসি বা মূর্চ্ছনা মুখ, আর মুখস্ত লোহিত বরন কিছু জাগতিকতা, প্রসাধন সর্বস্ব কিছু ডিঠান ত্বকে জমে যাচ্ছে শৈবালের মতন চুম্বন, বা কখনও দাঁতের দাগে 

প্রতিটা বিভেদেই আমি তোমাকে জেনেছি আরও মিহিন সূতার কোনো মালাটির বেড়ীবাঁধ,তা না থাকলে পৃথিবীতে বহূ আগেই বিলীন হয়ে যেতো সব বসতি আমার


শ্রাবণ

শ্রাবণ বরাবরই তোমার ঋতু, বিশেষত যখন বৃষ্টি পরে রাতে, কলা পাতা ধুয়ে নামে জল, যেন অবিরত কী এক কিসের কল কল

পথে ফেলা আসা পণ সব ভুলে, যেন সমুদয় দুপুরের ঘুঘুর ডাকের মতো সমুদ্র জানলার কাছে আসে চলে 

শ্রাবণ আজীবনই গড়িমা তোমার, মনে হয় মাঠে ঘাটে সব খানে জল না,জমে আছো তুমি 

আর উঠানে এক টুকরা মাটিটা, গলে যাচ্ছি মাটির সাথেই আরও আমি


সরন 

সরতে সরতে কতোই না সড়ক ফেলো ল্যান্ডে নেমে যায়, তবু যেন সরে না, মনপুত হয় না, আকুলির সমস্ত পা আর বাহু যেন ছড়িয়ে থাকে, যেনো সমবেত কতোগুলো ঘাসফুল; জল পেলেই আরও তাঁজা হয়ে যায়, অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় আরও দূরে, আরও অভিমুখে, যেন বাষ্পবহুল দিন মেলে ধরে কোনো আয়নাটা, শুকনো সময় থেকে ক্রমেই মুছে যাওয়া গন্ধ বাতাস জাগাতে চায় ইচ্ছার মতো কোনো বেহালার সুর 

দেশে পথে প্রান্তরে আজও বরুণেরা আয়োজনহীন চেয়ে থাকে, ফেলো ল্যান্ডে 

তাই বৃষ্টিকামী চাতকের জীবনে একান্ত কোনো সরন থাকে না, মনে হয় গানই গাইছে সে একটা তালে, ভাঙতে চাচ্ছে না রেশ, যেনো কোনো বিন্যাসে মোক্ষ প্রাপ্ত একটা  জনপদে মানুষ ভাতঘুমে যাচ্ছে, দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে

Share.

জন্মঃ ৩ অক্টবর, ১৯৮৪, শিববাড়ী শেরপুর। বসবাস করেন ময়মনসিংহে, পেশাজীবনে একটি বেসরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন। বহুমাত্রিক শিল্পমাধ্যম নিয়ে কাজ করেন, মূলত কবি, গদ্যকার, অনুবাদক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ ব্রহ্মপুত্র, আমি আপেল নীরবতা বুঝি, ব্ল্যাকহোল ও পড়শিবাড়ি, পিনাকী ধনুক, মনসিজ বাগানের শ্বেত। অনুবাদ ও কথাসাহিত্য নিয়েও কাজ করেন। ইতোমধ্যে অনুবাদ করেছেন মিরোস্লাভ হলুভ, জন এশবেরী, ইবসেন, ইয়াং লি সহ অনেকের কবিতা। বাই লিংগুয়াল এই কবির মৌলিক ইংরেজী কবিতাও ইতোমধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে জার্মানি,আয়ারল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশের সংকলনে সংকলিত হয়েছে। তাঁর কবিতা অনুদিত হয়েছে রুশ, ইংরেজী ভাষাতেও বয়ান সহ বেশ কিছু পত্রপত্রিকা ও ছোটকাগজে তাঁর গল্প প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম উপন্যাস ‘মধুপুর’ প্রকাশের অপেক্ষায়।

Exit mobile version