প্রফেসর গ.সা.গু। অনেক খুঁজেও মানুষটার দেখা পেলাম না। জনগণের ভিড়ে হারিয়ে গেল বিশিষ্ট বিজ্ঞানী-কোনো নোবেল প্রাইজ পেল না, বিজ্ঞানের তারকাপুঞ্জের তালিকার কোথাও তার নাম নেই, বিজ্ঞানতো বাদেই দিলাম এমনকি সাধারণ জনগনেরও কেউ তাঁর বিষয়ে জানে না। এই বিস্তৃত পরিভ্রমণের অন্তে, যখন আমি প্রফেসরের খোঁজ করেছিলাম –তখন পর্যন্ত তিনি নিরুদ্দেশ। মাঝে কাউকে বলতে শুনেছিলাম শ্রীমতী ল.সা.গু.র এই বিশাল শরীরটার জন্য প্রয়োজন হওয়া কুইন্টলাধিক চিপস চকলেট, হট-ডগ বার্গার-কোল্ড ড্রিঙ্ক, টিনফুড আদির আর্থিক ধার শোধ করতে না পেরে তিনি আত্মগোপন করে রয়েছেন। খাবার কারবারটা চিরদিনের জন্য বন্ধ করার জন্য তিনি ত্বকে হরিৎকণা উৎপন্ন করার ওপরে গবেষণা করতে শুরু করেছিলেন, যাতে ক্ষুধা লাগার কোনো ঝামেলাই না থাকে। সকাল বিকেল একবার করে শরীরে রোদ লাগালেই হল, বাকীটুকু সময় নিজের মতে যে ইচ্ছা তাই করতে পারি, রিয়েক্টরটা পুনরায় নির্মাণ করা আর তার দ্বারা হল না। এই সুদীর্ঘ সময়ের বিস্মৃতির পরেও আমার যত দূর মনে পড়ে আমার জীবনে কোনো মানুষ যদি ছাপ রেখে থাকে তাহলে তিনি হলেন প্রফেসার গ.সা.গু।

 

কত দেশ কত প্রান্তর পার করে এলাম, আমার এই নাতিদীর্ঘ জীবনে কত মানুষের সঙ্গে যে দেখা হল কিন্তু কোথাও তার মতো অন্য একজন পাইনি। আচ্ছা দাঁড়ান আমি কিন্তু আপনাদের প্রফেসারের বিষয়ে বলতে যাচ্ছি না। তাঁর বিষয়ে সবিশেষ বলার জন্য আমার সঙ্গে তার অত্যন্ত কম সময়ের জন্য দেখা হয়েছিল আমার যাত্রার কিছুকালের সহযাত্রী হিসেবে, কিন্তু সেই কিছুদিনের জন্য দেখা হওয়ার ফলেই আমি বহু গোপন তত্ত্ব শিখলাম, আমি আপনাদের কাছে সেই গোপন তত্ত্বগুলিই খোলসা করে বলতে চলেছি-আমার এই আজব জীবন ভ্রমণ কাহিনির মাধ্যমে, যার আমি নাম দেব- একটি অনাথ পরিভ্রমণ। প্রফেসর তার নাম দিতে চেয়েছিল মানুষটার সন্ধান।

 

সঙ্গীতের তরঙ্গে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের চাকনৈয়াবর লক্ষ্য করেছেন কি? আমার ঠিক সেই ধরনেরই একটা বুঝতে না পারা মন্ত্রপূত স্বরলিপির ঘূর্ণিপাকে প্রবেশ করে নিশ্বাস ফেলতে পারছিলাম না বলে মনে হচ্ছিল। আমি আমার জায়গা খুঁজছিলাম,কিন্তু কোনো মাথামুণ্ড না পেয়ে।
আমার জায়গা কোথায়?
এখন আমি কোথায় যাব?
কোথা থেকে এসেছিলাম।
আচ্ছা দাঁড়ান, আমার পরিচিতিটা দিয়ে নিই,আমার নাম গোগা। তার মানে কি আমি বলতে পারব না। এই নামকরণও প্রফেসারেরই। আমি হলাম একটি ফুলের মতো কোমল একটি মসৃণ ও অনাথ হাসি। আপনি বিশ্বাস করুন বা না করুন আমি অন্তত আমাকে একটি হাসি বলে ভাবি। কোনোদিন, কীভাবে আর কেন আমার জন্ম হয়েছিল, এখন পর্যন্ত কয়েকজন মানুষের মুখে আমি প্রস্ফুটিত হয়েছি তার উত্তর আমি দিতে পারব না, এই ধরনের কোনো কথাই আমার মনে নেই। আমার স্মৃতি যতটুকু পর্যন্ত আমাকে বহন করে নিয়ে গেছে আমি অবিরতভাবে বাতাসে ভেসে একদিক থেকে অন্যদিকে ঘুরে বেড়িয়েছি। অবশ্য লক্ষ্যহীন বলে বলতে পারবেন না,ঠিক তেমনই কর্মহীন বলেও বলতে পারবেন না। নিশ্চয় ব্যর্থ, আমার দিক থেকে যত্নের ত্রুটি আমি কখনও করিনি। কিন্তু প্রতিবারই আমি এক সঙ্গে হতে পারা দুটি ঠোঁট, একটি মুখ, দুপাটি দাঁতের খোঁজে তার সঙ্গে একত্রিত হওয়ায় আমি ব্যর্থ হয়েছি।

 

আমি একটা হাসি, কিন্তু কেউ আমাকে অনুভব করতে পারে না। সম্পূর্ণ মালিকবিহীন একটি ব্যর্থ হাসি। যখনই আমি কোনো উৎসাহী মুখের দিকে ধাবিত হয়েছি, যখনই আমার মনে হয়েছে যে যখনই আমি কোন উৎসাহী মুখের দিকে ধাবিত হয়েছি তখনই আমার মনে হয়েছে যে এবার আমি দুটি ঠোঁটের সঙ্গে একাকার হতে সক্ষম হব তখনই আমার গতিপথের তরঙ্গ গুলি স্খলিত হয়ে বিচলিত হয়ে পড়ে, যদি কোনো সঙ্গীতজ্ঞ এই পরিভ্রমণকে স্বরলিপিতে লিখে প্রকাশ করে তাহলে এটা পিয়ানোতে সি-শার্প মাইনর অক্টেভের ঐক্যতানের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে যার চরম এক্সিডেন্টেলের মুহূর্তে লিপি গুলি উইপোকা খেয়েছে এবং অনন্ত নিঃশব্দতার পরে আরম্ভ হয়েছে কিছু অর্থহীন কেকোফনির স্বরধ্বনি।

আমার জন্ম এবং শৈশবের বিষয়ে খুলে বলতে পারব না বলে আগেই বলেছি। বিস্মৃতির বুক ভেদ করে যদি আমি আমার অতীতের দিকে ফিরে তাকাই তাহলে আমার সেই প্রাসাদ সদৃশ্য ঘরটিতে কাটানো দিন গুলির কথা মনে পড়ে। চারপাশে উৎস দেওয়াল তারপরে খাঁজকাটা ঝোপের একটি বাগিচা, তার পেছনে ছিল সেই ঘরটা। তার আবাসিক অনেক ছিল তারা দেখতে অনেকটা আকারে প্রকারে মানুষের মতোই ছিল কিন্তু আমি অশেষ যত্ন করে কোনো একজনের আকার প্রকার ধরতে পারলাম না- সমস্ত কিছুই যন্ত্রের মতো। কখনোই একে অপরের সঙ্গে কথা বলত না, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সমস্ত কিছু যন্ত্রদের সঙ্গে থ্রিজি জিপিএস ওয়ারলেস ডাটা ট্রান্সফার ইন্ডিয়া ট্রাকিং ভার্চুয়াল গেমিং সবাই ব্যস্ত থাকে নিজের নিজের মনিটরের সামনে আমার এরকম মনে হচ্ছিল একটি বাড়ির সদস্য হলেও ওরা মনিটরে একে অপরের সঙ্গে কথা বলে যদি তারা কথা বলতে ভুলে না গিয়ে থাকে।

ওরা যেন ভার্চুয়াল পৃথিবীর বাসিন্দা, আমার এরকম মনে হল। সবকিছুই নিজের নিজের যন্ত্রের সঙ্গে। আমার মতো অযান্ত্রিক প্রাকৃতিক সত্তাকে জানার বা কাছে টেনে নেবার মতো কারোর সময়ই ছিল না। বাড়ির প্রতিটি মুহূর্ত ছিল অভাবনীয়ভাবে যান্ত্রিক, আমার মনে হচ্ছিল এটা একটি কারাগার বা কোনো গবেষণাগার যার বাসিন্দারা যন্ত্রমানব। তার আবহাওয়া জায়গাটার প্রতিটি পদার্থকে ধীরে ধীরে একটা যন্ত্রে পরিবর্তিত করেছে।

তার প্রমাণ পেলাম ফুলগুলি স্পর্শ করে, উজ্জল ফুলগুলি বহুদিন মূর্চ্ছা যায়নি আর তাদের কোনো ধরনের সুবাস ছিল না। তাই কৌতূহলের জন্যই আমি একদিন একটি গোলাপ স্পর্শ করে দেখলাম, গোলাপ গাছটা ইতিমধ্যে একটি প্লাস্টিকের ফুলে রূপান্তরিত হয়েছিল এবং তার চেয়েও আশ্চর্যের কথা হল সেখানে পড়ে থাকা ভ্রমরটা ও ছিল একটা ব্যাটারি চালিত প্লাস্টিকের মেশিন তার মানে সেই ঘরের প্রতিটি জিনিসই ধীরে ধীরে যন্ত্রে পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে নাকি? কেউ বোতাম টিপলেই আমি কাজ করতে পারব, না হলে কোনো কোণে পড়ে থাকব। আর হয়তো কোনো একদিন সার্কিটে বিচ্যুতি ঘটলে,আমাকেও ফেলে দেবে সেই ইলেকট্রনিক জঞ্জালের মধ্যে । আমার ভয় হতে লাগল এভাবে কোনো কারণ ছাড়া দিনদিন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যেতে পারিনা।

 

তখনই আমার উদ্ধারের জন্য এগিয়ে এল প্রফেসর গ.সা.গু। বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিক বিশেষভাবে তৈরি করা তরঙ্গের বাক্সে আমাকে ভরিয়ে একদিন তিনি বিজ্ঞানাগারে নিয়ে গেলেন। বিজ্ঞানাগার মানে, তার অফিসের ল্যাবরেটরির পেছন দিকে ছোট ঘরটায়, সেটাকে আপনি তার গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, শোবার ঘর সমস্ত কিছুই বলতে পারেন। প্রফেসর গ.সা.গু আমার ওপরে তার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা আরম্ভ করে দিলেন। আমার ঘনত্ব, ইলেক্ট্রোম্যাগনিট ফিল্ড তিনি বিশেষভাবে আবিষ্কার করা সুপার কম্পিউটারে ভরিয়ে আমার কম্পনাঙ্কের বারংবারতা এবং কম্পন দৈর্ঘ্য ইত্যাদি মাপজোক করায় তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সেই কয়েকদিন খাবার-দাবার সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে আমার অধ্যয়নেই মানুষটা সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করলেন।

 

বড় আপনভোলা স্বভাবের মানুষ ছিলেন প্রফেসর গ.সা.গু। পোশাকে আশাকে কোনো কৃত্রিমতা নেই। চালচলন কথাবার্তা কোনো কিছুতেই এটা মনে হয় না যে তিনি একজন বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক। এমনকি মাঝেমধ্যে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ কথাবার্তাও চলত। আমার এই জীবনে বার্তালাপ করা একমাত্র মানুষটি হলেন প্রফেসর গ.সা.গু। কিন্তু এতদিন একসঙ্গে কাটানোর পরেও, এত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠার পরেও প্রফেসরকে কখনও আমি হাসতে দেখিনি। একদিন আমার ভৌতিক স্থিতির মধ্যে থাকা আধান গুলি পৃথক করে রাখার সময় তার ঘুম পেল, নাকে ভট ভট করে পুরোনো দিনের ডিজেল জেনারেটর করার মত শব্দ করে তিনি মুখ খুলে শুয়ে পড়লেন। প্রায় দুদিন পরে তিনি শুয়েছেন বলেই নাকি মুখ দিয়ে লালা বের হতে লাগল, আমিও সুযোগ বুঝে তার ঠোঁট দুটির সঙ্গে মিলে যাবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু আশ্চর্যভাবে তার মুখে একটা হাসি ঢুকে পড়ার কোনো ব্যবস্থাই ছিল না, আকারে প্রকারে সম্পূর্ণ সুস্থ তার মুখ এবং ঠোঁট দুটি, কিন্তু তাতে হাসি কোনমতেই জায়গা করে নিতে পারে না।

বলছি এতদিন ধরে কী পরীক্ষা করছেন আমার মত সামান্য একটা হাসির ওপরে? একদিন সুবিধা পেয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম।

আমি তোকে বিলিয়ে দিতে চাই হাজার জনের মধ্যে। তোর কি এভাবে অনাথ হয়ে থাকতে ভালো লাগছে।
ডিজিটাল আণবিক দাঁড়িপাল্লায় আমার আণবিক ওজন মাপতে মাপতে প্রফেসর উত্তর দিয়েছিলেন।
এত কষ্ট করার চেয়ে আমাকে পরে নিয়ে খেল খতম করতে পারেন দেখছি?
আমি হাসতে পারি না বলেইতো হাসিকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ওপরে গবেষণা করছি বাবা। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রফেসর উত্তর দিয়েছিলেন, ওর মুখটা দেখে তিনি কি বৈরাগ্যের জন্য হাসতে পারেন না সে কথা জিজ্ঞেস করার সাহস আমার হল না। প্রফেসরের গবেষণা এগিয়ে চলল- হাসির তরঙ্গঘর, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড, আয়নিক তরঙ্গ রেখার দৈর্ঘ্য এবং বাণী, তার অনুক্রমাণাংক টেবিলের আণবিক ওজন, ভৌতিক ঘনত্ব ইত্যাদি নিরূপণ করে তিনি একটি লাফটার বিক্রিয়েক যন্ত্র তৈরি করলেন, বহুদিন কষ্ট করার পরে তিনি একদিন আমাকে রিঅ্যাক্টরে ভরার জন্য প্রস্তুত করলেন। অত্যন্ত অদ্ভুত ছিল সেই রিঅ্যাক্টরে প্রবেশ করার পূর্ব আবশ্যকতা সমূহ। প্রথমে একটি আয়নের আদ্র মেশিনে আমাকে স্নান করানো হল, তারপরে লেজার নিয়ন্ত্রিত কটারি দিয়ে পৃথক করা হল আমার চারপাশের ইলেকট্রনের ঋণাত্মক আধানের মেঘের কোষগুলি।
ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। ভৌতিক বা রাসায়নিক সত্তায় ইলেকট্রন প্রয়োজনীয় নয়। ইলেকট্রন সমূহ না থাকলেও তুই গোগাই হয়ে থাকবি। প্রফেসর আমাকে জানালেন।

আমার ইলেকট্রনসমূহ সরিয়ে বিক্রেয়ক যন্ত্রটিতে ঢুকিয়ে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন কেবল, ঠিক তখনই আরম্ভ আমার যাত্রার স্বরলিপির সবচেয়ে বড় ক্রেসেন্দা।
আর তারপরেই এক্সিডেন্টেল ক্যাকোফোনি, ক্যাকোফোনির চেয়েও কর্কশ আস্ফালন, যদি কিছু থাকে তা।
প্রফেসরের দরজায় কেউ নির্মমভাবে লাথি মেরে তাকে দরজা খুলে দেবার জন্য প্রত‍্যাহ্বান জানাল। আমারতো সামরিক বাহিনীর রেইড বলে মনে হচ্ছিল, না হলে হয়তো CIA বা RAW এর খানাতল্লাশি। প্রফেসরের মুখে কোনো শব্দ যোগাল না, তিনি হয়তো জানতেন বাইরে ওরা কে। তাই তিনি আমাকে এবং তার আবিষ্কার করা বিক্রেয়ক যন্ত্রটি লুকোনোর চেষ্টা করলেন কিন্তু ঘরটি এতটাই বিশৃংখল হয়েছিল যে সেখানে কোনো কিছু লুকোনোর মতো সুযোগ ছিল না।
এই তোরা কি সব মরেছিস নাকি? বাইরে থেকে অত্যন্ত রুক্ষ স্বরে একটা হুংকার ভেসে এল।
এবার প্রফেসরের হাতে আর কোনো পথ ছিল না।

দাঁড়াও বেঁচে আছি। বলে তিনি ধীরে ধীরে দরজাটা খুলে দিলেন।
বেঁচে আছ যদি দরজা খুলতে এত সময় কেন লাগছে? রণচন্ডী মূর্তি ধরে ভেতরে এল প্রফেসর গ.সা.গু.র ধর্মপত্নী শ্রীমতী ল.সা.গু। তাকে দেখে আমার জিহ্বা মেলে নরমুণ্ড পরিধান করে মহাদেবের ওপরে নৃত্যরত দেবী দর্শন করা হল বলে মনে হল।
বের করে দে ওকে। কোন মহিলার সঙ্গে লীলাখেলা করছিলি?
কে সে? প্রফেসর লজ্জিতভাবে জিজ্ঞেস করলেন।
রাখ, এখন কোনো কিছু না জানার ভান করছিস। আমি সব জানি, কার জন্য তুই গত একমাস বাড়িমুখো হসনি। আমিই একমাত্র জানি কীভাবে সংসারটা চালাচ্ছি।

 

তারপরে আরম্ভ হল আসল খানাতল্লাশি বা তাণ্ডব নৃত্য, যেভাবে মহাদেবের নৃত‍্যে প্রলয়ের সূচনা হওয়ার উপক্রম হয়েছিল ঠিক সেভাবেই প্লাবন আরম্ভ হল প্রফেসর গ.সা.গু.র বিজ্ঞানাগারে, তাঁর সুপার কম্পিউটার মনিটর, ডিজিটাল আণবিক ওয়াশার, লেজার সেপারেটর এক এক করে চূর্ণ-বিচূর্ণ হতে লাগল। একটা কথা আমি আজও বুঝতে পারলাম না যে সেই একহাত দীর্ঘ মনিটরটাতে বা এক বর্গফুটের আয়নিক ওয়াসারটিতে প্রফেসরের অভিসারিকা প্রেমিকার কীভাবে লুকিয়ে থাকা সম্ভব হতে পারে?
আমি প্রফেসরের শার্টের পকেটের ভেতরে ঢুকে ছিলাম, খুব সম্ভব আমি ভয়ে কাঁপছিলাম আর সেটাই আমার কাল হল।
পকেটে ওটা কী লুকিয়ে রেখেছিস?’
এবার দেখলাম ব্যাপার বিষম। উগ্র মূর্তি ধরে ল.সা.গু প্রফেসরের পকেটে হাত ঢুকালো, ঠিক তখনি আমি শুনতে পেলাম আমার যাত্রার একটি মূল শ্লোগান, তা যদি আমি ইংরেজিতে অনুবাদ করি তাহলে সেটা একটি সফল হলিউডের কথা ছবির নামের সঙ্গে ছন্দোময় হবে, সেই শ্লোগানটিকে যদি হিন্দিতে অনুবাদ করা হয় তাহলে তা একটি জাতিস্মর সিনেমার বিখ্যাত সারির সঙ্গে নকল করা হবে তাই আমি বাক্যটা আসামিয়াতে বলব।

দৌড়া, গোগা দৌড়া। প্রফেসর ল.সা.গু চিৎকার করে আমাকে জানলা দিয়ে ছুঁড়ে দিলেন, আমি দিশাহারা হয়ে পেছনে না তাকিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম, বহুদূর পর্যন্ত আমি প্রফেসরের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, দৌড়া গোগা দৌড়া।

উড়ে-আসা কোলাহলগুলি আমাকে জানাল যে শ্রীমতী ল.সা.গু প্রফেসরের প্রেমিকাকে তাঁর উদ্ভাবিত লাফটার বিক্রয় যন্ত্রের মধ্যেও খুঁজে পেল না ।

প্রাণের ভয়ে আমি যতক্ষণ মনে পড়ে দৌড়াতে থাকলাম। প্রফেসরের সঙ্গে সেই আমার শেষ দেখা।
তারপরে আরম্ভ হল আমার পরিভ্রমণের অশান্ত অনাথ অধ্যায়, এখানেই পেয়ে গেলাম আমার বহু কৌতুহলী প্রশ্নের উত্তর।
আমার কানে বাজতে থাকল সেই ঝংকার দৌড়া, গোগা দৌড়া। অবশেষে আমি যখন ক্লান্ত হলাম তখন আমি কোলাহলে ভরা এক ব্যস্ত রাজপথে। প্রফেসরের গবেষণাগারে ফিরে যাওয়ার পথটা আমি বের করতে পারলাম না। কিন্তু এই নতুন জায়গার কারবার গুলি সম্পূর্ণ অভিনব, গরিষ্ঠ সংখ্যক যুব প্রজন্মে ভরা এই জায়গাটিতে প্রত্যেকেই হাসছে, অত্যন্ত আশ্চর্যের। আমার জীবন ইতিহাসে প্রথমবারের জন্য আমি হাসতে থাকা মানুষ দেখলাম। আমি চেষ্টা করলাম- কারও ঠোঁটে ঢুকে পড়ার জন্য- কিন্তু পারলাম না। প্রতিটি যুবক-যুবতির মুখেই নিজস্ব শৈলির হাসি ছিল।

স্বাগতম যাত্রার জন্য অমুক বিমান নির্বাচন করার জন্য ধন্যবাদ। সুরক্ষার জন্য থাকা আকস্মিক দরজা দুটি সামনের দিকে আছে এবং দুটি পিছন দিকে… এটা একটি অন্য ধরনের হাসি।
সুপ্রভাত মহাশয়, আমরা এসেছি অমুক ইন্টারনেশনেল থেকে ।এটা দেখুন আপনার সুরক্ষা, সুস্বাস্থ্যের , পিতা-মাতার সবার জন্য ইনসুনরেন্স… তাদের হাসিটা আর ও অন্য ধরনের।
অনুগ্রহ করে আসন গ্রহণ করুন। স্যার এখন মিটিংয়ে ব্যস্ত…
এটি নতুন বই, ডিসকাউন্ট ফিফটি পার্সেন্ট + ফিফটি পার্সেন্ট…
জল সংশোধনের মেশিন, পৃথিবীতে প্রথমবারের জন্য এই নতুন টেকনোলজি….
মশা, মাছি, আরশোলা থেকে সাবধান। পুরো গ্যারান্টি সহ। নাহলে পয়সা ঘুরিয়ে…
টিংটিং।

আজব ছিল তাদের হাসি। আপনি তাদের প্রস্তাবটা প্রত্যাখ্যান করুন। ওরা হাসবে। আপনি ধমক দিন- ওরা হাসবে । হয়তো দুই চড় লাগিয়ে দিলেও ওরা হেসে হেসে বলবে – ধন্যবাদ মহাশয় আশাকরি আপনার দিনটি শুভ হবে।
এমনকি বিকেলে কাজের পরে ওপরওয়ালা খারাপ ব্যবহারের জন্য যখন গালি দেবে তখনও ওদের মুখে থাকবে সেই প্রাণহীন হাসি।
কারণ সেই হাসি হল প্লাস্টিক ইন্টারন্যাশনাল নামের কোম্পানি বানানো কৃত্রিম হাসি। প্রতিষ্ঠানটি হাজার হাজার কৃত্রিম হাসি নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে বিক্রি করে, যাকে মুখে লাগিয়ে নিলে মানুষের মুখে একটা প্রাণহীন হাসি আপনি বেরিয়ে পড়বে।

প্লাস্টিক ইন্টারন্যাশনালের কাজকর্মগুলি বড় আমোদ জনক যেন মনে হল আমার- কথাটা ব্যঙ্গাত্মক, আমি নিজে একটা হাসি এবং আমি এই এয়ারলাইন্স, বহু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান আদির কর্মরত যুবক যুবতিদের প্লাস্টিক হাসি গুলির ওপরে হাসছি। আর সবচেয়ে বড় কথাটি হল যে সেই প্লাস্টিক ইন্টারন্যাশনেলের কারখানাতেই আমি বন্দি হয়ে ছিলাম আমার প্রাথমিক দিনগুলিতে, সেই প্রাসাদ সুদৃশ ঘরটা ছিল প্রতিষ্ঠানটির কৃত্রিম হাসি বানানোর কারখানা যেখান থেকে হাজার হাজার কৃত্রিম হাসি পৃথিবীর প্রতিটি কোণে রপ্তানি হয়। প্লাস্টিক প্রদূষণের ঘোর বিদ্বেষী প্রফেসর গ.সা.গু সেই জন্য সেখান থেকে চোরাই পথে নিয়ে এসেছিলেন হাসির রহস্য উদঘাটন করার জন্য।

কিন্তু সেই প্লাস্টিক হাসির মালিকদের অবস্থা খুব করুন। কার্যালয়ে এসে প্রথমে ওরা সেই হাসি পরে নেয়, তারপরে ওরা উপায়হীন। এই সস্তা কৃত্রিম হাসি ওদের আবেগ, বিচারধারা সমস্ত কিছু একটা অক্টোপাসের মতো ঘিরে ধরেছে। হাজার ইচ্ছা হলেও ওরা সেই হাসি খুলে ছুঁড়ে ফেলতে পারবে না। সারাটা দিন বেমানান হাসিটা পরে বিকেল বেলা ওরা হাসিগুলি খুলে জমা দিয়ে যায় অফিসের স্টিল আলমারিতে।

এই হাসিগুলির গ্রাহক যে কেবল বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে ঠিক তা নয়, প্রতিটি রিসেপশনিস্ট, এয়ার হোস্টেস, সেলসম্যান, রাজনৈতিক নেতা এমনকি বিখ্যাত মডেল গুলির বিখ্যাত বিখ্যাত হাসিগুলি প্লাস্টিক ইন্টারন্যাশনাল বিশেষভাবে অর্ডার নিয়ে বানানো। মডেলের প্লাস্টিক হাসিটার বিজ্ঞাপনেই বিক্রি হয় হাজার টুথপেস্ট, সাবান, গাড়ি পর্যন্ত- অনেকেই প্রেমে পড়ে, এমনকি কেউ কেউ এই হাসিতে অনুপ্রাণিত হয়ে কবিতাও লেখে। এই কৃত্রিম হাসির প্রচলন এতই বেশি হয়েছে যে অনেকে পথে হাঁটলেও প্লাস্টিক হাসিটা নিয়ে বেড়ায়,যাতে পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা হলে পরে নিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারে, ভালো আছেন তো?

আর মানুষটা পার হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে হাসিটা খুলে নিজে নিজেই বিরক্ত ভরা মুখটা বহন করে পুনরায় হাঁটতে শুরু করে।
সত্যিকারের হাসি কেউ আজকাল ব্যবহার করে না কেন? আমি বলতে পারব না। এই প্রশ্নটা আমি নিজেকে বহুবার করেছি, কিন্তু কোনো উত্তর আমি আজ পর্যন্ন্ত পাইনি। এরকম চিন্তার ঘূর্ণিবাত্যায় অনেকদিন পার হল। আমি কী করছিলাম আমি জানিনা, বহু ব্যস্ত গলির হুলস্থুল, সুউচ্চ অট্টালিকা, কর্মব্যস্ত তথা কর্মহীন মানুষের উদাস মুখের অস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি আমার আবছা ভাবে মনে পড়ে, কী হচ্ছিল আমি স্পষ্ট করে বলতে পারব না, আমার ক্লান্ত লাগছিল। ধীরে ধীরে মালিকের সন্ধান কমে যেতে লাগল।

প্রতিটি মন, প্রতিটি মুখ ভীষণ ব্যস্ততার ভারে এতটাই চাপ যুক্ত যে কোনো মতেই তাদের সঙ্গে মিশে যাওয়াটা অসম্ভব ।চারপাশের মানুষগুলির ঋণাত্মক মন গুলি দেখে আমার দুঃখ হয়েছিল, তখনই আমার সঙ্গে নদীর তীরে দেখা হল কয়েকজন নবাগতের সঙ্গে, ওরা সেই প্লাস্টিক হাসি পরতে রাজি হয়নি। ওদের অবস্থা আরও করুণ। আদর্শগতভাবে ওরা সেই প্লাস্টিক হাসি পরবে না এবং প্লাস্টিক হাসিকে অস্বীকার করার জন্যই ওদের কোনো কর্মসংস্থান নেই, কেবল কর্মসংস্থানই নয়, পরিস্থিতি ওদের কাছ থেকে সমস্ত কিছু কেড়ে নিয়েছিল ।

প্রতিটি বিকেলে ওরা নদীর তীরে আসে, বাকিতে কেনা সিগারেট ফুঁকে এবং রাত হলে চলে যায় ।
ওটাই ওদের কাজ, অনেক বছর ধরে ওটাই ওরা করে আসছে। হাসিটা দূরের কথা, ওদের অভিব্যক্তিই শেষ হয়ে গিয়েছিল।
কর্মসংস্থান, পয়সা, স্বীকৃতি, সম্মান, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ ওদের কিছুই নেই। কেবল নিয়ম বলে নদীর পারে প্রতি বিকেলে আসে, কথা বলার মতো কোনো কথা নেই ওদের বাগযন্ত্র ঠিকই আছে কিন্তু একেবারে হতাশার কথা কত আর বলবে প্রতিদিন।
সেই বেকার কয়েক জনের দুঃখ ভরা মন গুলি দেখে আমার দুঃখ হয়েছিল, ওদের কিছু নেই, যা আছে কেবল অশান্ত হতাশার স্তূপীকৃত অবয়ব ।

প্রফেসর গ.সা.গুর বিজ্ঞানাগারেই আমার ইলেকট্রনের মেঘের ঋণাত্মক – আধান গুলি ফেলে রেখে এসেছিলাম। যদিও আমার আণবিক অভ্যন্তরীণের ধনাত্মক প্রোটনগুলি তখনও বাকি ছিল। ওদের শূন্যতায় আমার আণবিক আভ্যন্তরীণ দ্বিখণ্ডিত হতে লাগল- ধনাত্মক প্রোটন এবং আধানহীন নিউট্রনের মৌলিক উপাদানে। আমার ভৌতিক স্থিতির অর্ধাংশ সেই ধনাত্মক প্রোটনের উপাদানগুলি আমি ওদের হতাশ মনে যতটা সম্ভব ছড়িয়ে দিলাম। ওদের দেবার মত আমার আর কিছু ছিল না।বেঁচে থাকার জন্য ধনাত্মক আধানের বড় প্রয়োজন ছিল ওদের। প্রোটনের প্রস্থানরত আমি হয়ে পড়লাম কিছু নিউট্রন, যার কোনো আধান নেই। আধানহীন নিউট্রন হয়ে পড়ে রইলাম, উড়তে থাকলাম যখন মন যায় ,যেভাবে মন যায়।
অনেক জায়গা বেড়ালাম। নদীর তীরের বালি থেকে কোলাহল ভরা রাজপথে, খড়ায় ফাটল মেলা মাঠে, শহরনগর, গ্রাম গঞ্জের অলিগলি এবং প্রতিটি কোণে; কিন্তু কোথাও আমি আমার প্রয়োজন অনুভব করলাম না। একটা অকৃত্রিম হাসিকে আপন করে নেবে সেই সামর্থ্য যেন কারও নেই বলে মনে হল।

ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক সবকয়টি আধান হারিয়ে আমার গতিবেগ বাড়তে লাগল।

দৌড়, গোগা দৌড়, প্রফেসরের চিৎকার তখনও আমার কানে ভেসে আসছিল। আর তখনই একদিন বিক্রিয়াটা আরম্ভ হল। অকস্মাৎ কোনো পূর্বনির্ধারিত স্বত্ব না হয়ে, সেই সময়ে আমি আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম যে আমি আমার জন্য কোনো মালিক খুঁজে পাব না। কীভাবে জানিনা সেই ছোট্ট মেয়েটির সঙ্গে একদিন হঠাৎ ভয়ঙ্কর সংঘর্ষটা হল,সেই বস্তি এলাকায়। যেখানে শহরের সমস্ত নোংরা জিনিস বড় ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে ফেলে। সেই ছোট্ট মেয়েটি তাতেই উচ্ছ্বসিত হয়ে কী সব খুঁজে বেড়াচ্ছিল। দীর্ঘ চুলগুলি যত্নের অভাবে জট বাঁধতে শুরু করেছিল এবং বহু অংশই তামাটে বর্ণের রূপ নিয়েছিল। পরার মধ্যে ছিল ছোট্ট ছেঁড়া প্যান্ট, কৃষ্ণবর্ণ নাকের ফুটো দুটো থেকে অবিরতভাবে বেরিয়ে আসছিল ঘিয়ের মতো জলীয় পদার্থ।
আমি জানতেই পারলাম না, আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে মেয়েটির মধ্যের কিছু একটার সঙ্গে আমি ধাক্কা খেলাম এবং আরম্ভ হয়ে গেল- এক আনবিক বিক্রিয়ার শৃঙ্খল।

সেখান থেকে বেরিয়ে এল আমার মতো দুটি নিউট্রন, ওরা গিয়ে ধাক্কা দিল আর ও দুটিকে… এভাবেই চলতে থাকল এই বিক্রিয়া। তা থেকে উদ্ভব হওয়া মায়াবী শক্তিতে সেই ছোট্ট মেয়েটি হেসে উঠল।
নতুন নিউট্রনগুলি সংক্রমিত হল তার সঙ্গীদের মধ্যে,ওরাও হেসে উঠল এবং ওদের থেকে বেরোনো নিউট্রনগুলি এগিয়ে গেল। কোনোটি আপন করে নিল মাঠের চাষিকে,রোয়নি এবং রাখালদের, কোনোটি রাজপথের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে। এখন ও চলছে, ঠিক প্রফেসর গ.সা.গু চাওয়ার মতোই- নিউট্রনের কণিকা গুলি অকৃত্রিম হাসির দ্বারা সংক্রমণ করল হাজার জনকে, এখন ও নিউট্রনের গতির আড়ালে সেই ধ্বনি, দৌড়, গোগা দৌড়! কিন্তু তার মুখমন্ডলে একটা মুচকি হাসি তুলে দেবার জন্য প্রফেসর গ.সা.গুকে আমরা কেউ খুঁজে পেলাম না।

লেখক পরিচিতি – ভাস্কর ঠাকুরীয়া ১৯৭৬ সালে আসামের গুয়াহাটি শহরে জন্ম গ্রহণ করেন।
পেশায় চিকিৎসক শ্রীঠাকুরীয়া বর্তমানে অল ইণ্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স, পাটনার মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক।
যাত্রা, সিংহদ্বার ও বিবর্তন লেখকের অন্যতম প্রকাশিত গল্প গ্রন্থ।

Share.

১৯৫৮ সনে অসমের নগাঁও জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে গুয়াহাটি শহরে। ১৯৮২ সনে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও ভাষাতত্ত্বে এম এ করেন। তিনি একজন নিয়মিত অসমিয়া সাহিত্যের অনুবাদক। NEINAD এর পক্ষ থেকে অসমিয়া ভাষা- সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য Distinguished Life Membership দ্বারা তাকে সম্মানিত করা হয়। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৯ টি।

Exit mobile version