ও হও…। সে পাহাড় থেকে নেমে গান করে এইসব। মরো মরো… হ্যাঁ হ্যাঁ…। প্রথমে উড়তে হবে একজনকে। পৃথিবীর মাটি কোমল। হাসো হাসো। কীভাবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া ঈশ্বর কিংবা প্রিয়তম নারীর নখের কাছে যাবে? সে এতো উপরে থাকে! একশোমাইল উঁচু পাহাড়। এই মাঝরাতে শীতের বৃষ্টিতে গলে পাহাড় রাস্তায় নেমে কাদা। হা হা…

সে তারপর প্রস্রাবের সঙ্গে তার অনুভব নিঃসরণ করে কোলের উপর রাখা দুটি পাকা আম এবং রাস্তার ওপর জাল দ্বারা মোড়ানো উদ্ভিদের একটি গুচ্ছে গোপন হয়। আগাছা চাঁদের আলোকিত রশ্মি হিশেবে আঁধারে সে ঘরের ভিতরে গিয়ে খুঁজে সয়লাব। তোমাকে মরতে হবে। এটা সত্য। এটা সত্য। চাঁদ কাঁদে। পবিত্র শয়তান হাসে। হাসো হাসো। ছবিটি ক্রমে ছায়াছবি হয়। শব্দটি ইকো হয়ে ফিরে গলায়। এতো গোলমাল কীসের? ধূসর রাত্রির মানে বৃষ্টি অথবা কুয়াশা।

দুইশো এক। সবি অর্থহীন। গাব্রিয়েল তোর ডানা ভেঙে গেছে। জানলার ওধারে ভিজে যায় আমগাছ। আমি মাখন পছন্দ করি। পাউরুটি পছন্দ করি না। আমি তাকে ছুঁইনি। তুমি তাকে ছুঁয়েছো। দুইশো একবার বলেছো লবণ আর লিপ্সার কথা। লিবিডোগ্রামে তোমার মতো বালকেরা আঁখক্ষেত ভালোবাসে।

বাকরখানি খাও। জামার হাতলে হাত মুছে লুকিয়ে পড়ো বুক পকেটে। ছিলে তো নালাজীবী সঞ্চালক একাকার। হায়! ডোমের ভিতর কে হারিয়ে এসেছিলো সজারুর চক্ষু এবং কাঁটা? যারা কণ্টক ভালোবাসে তারা কি সবাই বেড়াল? ছবি মাইয়াটা মার্কিন কাঁথার ভাঁজে বেড়ালের চাষ করে। তার আগে এপাড়ার আরো দুইজন একই কাজ করে ফলবতী হয়েছে।

আমাদের কমলার বনে থোকা থোকা হরিণ আর হরিয়াল আসে। ভাগ করে খেয়ে ফেলে কমলার ঝাড়। আমি বিবাগীভাঙন শেষে লুকিয়ে পড়ি কমলার খোসায়। আমার অতৃপ্ত শৈশব মনে পড়ে। আমি কেঁদে কেঁদে বাদল আর বাদলকে হারিয়ে দিই। এমনকি ভিড়াক্রান্ত নাটমণ্ডলে বসে পাঁচটাকার বাদাম বিনাশ করি। আরম্ভের পূর্বে রাত্রি থেকে মানুষ একটি পর্বতের মতো জনগণের ওপর স্তূপাকার। আর আমি সজারু হলে জানি কাঁটার যন্ত্রণা।

‘যমুনাবতী! ধনেশের ঠোঁটে জেগে থাকে দুপুরের সুর।
তুমি তুলে নিও ওষ্ঠাধরে জেগে জেগে, জেগে জেগে…’

যমুনাবতী! ধনেশের ঠোঁটে জেগে থাকে দুপুরের সুর। তুমি তুলে নিও ওষ্ঠাধরে জেগে জেগে, জেগে জেগে…। আমি বাতাস কুড়িয়ে এনে সাজিয়ে দেবো ঝড়, তোমার অরণ্যে। তার আগে জেনো, শুধু একবার ধনেশ হবো। হলুদ চঞ্চুতে শুষে নেবো যমুনার দীঘলদেহের রেখা। মিনার্ভা এসে ভুল করে গেলো এলোমেলো। আমি তখন পম্পেই। ভিসুভিয়াস আমাকে ডেকে বললো, ‘শুদ্ধ হ! হারামজাদা।’ আমার জন্ম চব্বিশ আগস্ট, নয় ভাদর, বাঙলা। আমি কন্যা।

হ্যাঁ, চুরি করেছি। অন্ধকার চুরি করতে ভালো লাগে। বই আর ফুল চুরি করতেও ভালো লাগে। এইবার জীবনদাশ শোনাই—অবসরের গান, এখানে পালঙ্কে শুয়ে কাটিবে অনেকদিন জেগে থেকে ঘুমাবার সাধ ভালোবেসে…

পাথরের মধ্যে ক্ষয়ে যাওয়ার উপাদান লুকিয়ে ছিলো। সে পর্বতের গায়ে দেয়াল হয়ে ছিলো বহুদিন। তারপর ক্ষয়ে গেলো মাটি নদী আর কাদা হয়ে। একটি গাছ জন্মালো। গাছের নাম জানি না। আমি বিস্ময় ও শূন্যতার পাশে দাঁড়িয়ে লোপাট। আমাকে নাও, সমূলে বপন করো নদীতে।

Share.

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য এর জন্ম ২৪ আগস্ট ১৯৮১, চকরিয়া, কক্সবাজার, বাঙলাদেশ। লেখালেখি আর ছবি আঁকাই মূল কাজ। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা বিষয়ে। এখন পর্যন্ত বই লিখেছেন ১৬ টি। প্রকাশিত বই (কবিতা): পাখি ও পাপ (২০১১), কাপালিকের চোখের রং (২০১৩), মহিষের হাসি (২০১৫), হুহুপাখি আমার প্রাণরাক্ষস (২০১৭), উদ্ভিদ ও বৃন্দাবনী (২০১৯)। প্রকাশিত বই (মুক্তগদ্য): শোনো, এইখানে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয় (২০১১), পুরুষপাখি (২০১৪), আকাশ ফুরিয়ে যায় (২০১৭), কুসুমকুমার (২০১৯), কবিতালেখকের জার্নাল (২০২০), আমি ও গেওর্গে আব্বাস (২০২০)। প্রকাশিত বই (গল্প ও প্রবন্ধ): ডুবোজ্বর (২০১২, ), আরজ আলী : আলো-আঁধারির পরিব্রাজক (২০১৫), রাজহাঁস যেভাবে মাছ হয় (২০১৬), ফুলের অসুখ (২০২০)। সম্পাদিত বই : ওঙ্কারসমগ্র : বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণের শ্রুতিলিপি (২০১৭)। সম্পাদিত ছোটোকাগজ : মুক্তগদ্য (২০১১ থেকে) । সম্পাদিত অনলাইন : kothaboli.com

Exit mobile version