ক্ষুণ্নিবৃত্তির মৌতাতে

⬤⬤⬤

সেসব কুসুম সরিয়ে পাই এঁদো হাওয়া
যাকে জেনেছি সৌরভ বলে—
ঘেঁয়ো ঘ্রাণে ভরে উঠছে পাড়া
পেটভর্তি জিঘাংসা নিয়ে রক্তগোলাপ ফুটে থাকে
ক্ষুণ্নিবৃত্তির মৌতাতে ফ্যাকাশে প্রিয় পাতার রঙ
হিংসার গোলাঘর থেকে
ছিন্ন কোনো ফলের মতো গড়িয়ে চলেছি
ডোবায়
কীটদষ্ট মুখশ্রী নিয়ে
পথে পথে ছড়িয়ে পড়েছে ভেতরকার পুঁজ—

আহা! সেইসব ‘লাবণ্য’র গীত
বনে ক্ষতে অনূদিত
কষ ঝরছে ছাতিম বাগানে
শরীরের না ফোটা পুষ্পেরা,
ঘ্রাণে মরে যায় গর্ভের ডেরায়।


অচ্ছুত

⬤⬤⬤

আমি যেন শহরের শীর্ণ জলাধার
তোমার স্থাপত্যে অচ্ছুৎ;
আমাকে নর্দমা নামে ডেকো
আর বুকে ঠেসে দিও
কফ, থুতু, মল,
বাসি, পঁচা, উচ্ছিষ্ট যত
হৃদয় উগরানো ব্যাথা
বয়ে নিয়ে যাই
তোমাদের দীর্ণ কপটতা!


ক্রমে অবনত

⬤⬤⬤

বাবার কবর বুকে নিয়ে শোয়
এক রুমেরই ঘর—

সে আধিভৌতিক আলো—মরে মরে আসা
ওড়ে ঘরজুড়ে জামা রঙ খসা

ঢেউধোয়া পাড়, শস্যভূঁইয়ে চাঁদ
শনঘেরা ঘর আড়েঠারে স্মৃতি পাতে ফাঁদ;

এই উদ্ভিন্ন মূল

মাটি খুঁজে চলে
মাটি খুঁজে চলে

কোথায় গুঁজবে শরীর, রাখবে পায়ের পাতা?

থান কাপড়ের গাটরি রাখা মেঝে
থালাবাটি-খুচরা সরঞ্জাম

বয় কোথাও নদী এতিমের মতো
এক রুমেরই ঘর, ক্রমে অবনত।


ঝরে পড়া আম

⬤⬤⬤

সেসব নন্দনদৃশ্য কোথায়—

খাপছাড়া এই গৃহবিন্যাসের পাশে
কোনো ঘ্রাণ নাই

ইটখসা কিছু আলো বহুদিন ঝরে পড়েছে
এই সরুগলিতে
গুয়ের গন্ধমাখা সেই আভা পাক খায়-
গুলিয়ে ওঠে

কোঁকায় হোঁৎকা ছেলেটি
ভারী শরীর নিয়ে পৃথিবীকে শাপ দিয়ে চলেছে—

বকুলঝরার স্মৃতি নিয়ে ফিরে এলো জন্মক্ষণ
সবুজ আচ্ছাদনের ফাঁকে বেড়ে ওঠা মেঘের মতো মিলিয়ে যাওয়া মা—

ঝরে পড়া আম যেন
কেউ টুকিয়ে নিয়ে এসেছে

অন্তঃসারশূন্য এই এঁদো জলসায়
একটা ভেঁপু বাজে প্রাণ মন্দিরার সুরে।


মামুলি

⬤⬤⬤

চাপিয়ে দিয়েছো অনাঘ্রাণ
কিছুই শুঁকতে পারি না—

সাধারণ নাকের মতো
শুধু টেনে চলেছি
প্রাণ নির্বাহের হাওয়া;

সরল রেণুর উপর
পতঙ্গের সহিংসতায়
মৌচাক গড়ে ওঠে;

মধুর মিষ্টতার ভাঁজে
স্বর্ণঘ্রাণ আর
ঈষৎ ধূসর সেই ভায়োলেন্স মিশে যায়
গোধূলি রেখায়

যেভাবে

চূড়া দেখতে দেখতে
উপত্যকার ছোট ফুলটিকে
নজরেই এলো না—

ভাঙা এক পাথর টুকরা বেয়ে
পানির বহুভঙ্গিম চলা
চকচকে ছোট মাছ
কীভাবে ফুটিয়ে তোলে পাথুরে পর্বত বাহিত নদী

স্রোতের দুর্দম চেহারার ফাঁকে
সেসব মামুলি দৃশ্য

হারিয়ে যায় নিয়ত, যেভাবে আমি আমার চোখ থেকে খসিয়েছি দেখা
নাক থেকে গন্ধ
জিভ থেকে সোয়াদ

বাজেয়াপ্ত কোনো গ্রন্থের ভিতর আটকে পড়া শব্দের মতো
মিনিংলেস একটা ফুল খসে যায়
বেহুদা হাওয়ায়।


ব্যাহত বিকালে

⬤⬤⬤

বাগানটাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি
ফুটে আছে হলুদ হলুদ সোনালু
আর এক বিকাল লেপ্টে আছে
তার স্বর্ণময় শরীরে;

বয়ে চলেছে বয়সের সমান্তরালে
আরও বহু কারুবাসনার
গোত্রভুক্ত হয়ে—

অনির্ণেয় চিত্রকলা যেন
নিসর্গের চারুকলার ভিতর—

বাঁধাই না হওয়া খাতার মতো
এক প্রস্থ পট–
দোকানির তাক থেকে
উড়ে গিয়েছি
বাজারের শব্দে

বহুদূর পার হওয়া রাস্তার ধার ঘেঁষে
গড়ে ওঠা
কোনো সোনালু বনের ভ্রমে
পড়ে থাকছি—

স্মৃতিপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা রঙে
কীভাবে সেজে উঠবো

এই ব্যাহত বিকালে–বিছানায়?

Share.

চাঁদপুর জেলার ফরিদ্গঞ্জে ২৭শে আগস্ট ১৯৮৫ সালে কবি মোস্তফা হামেদী জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি সরকারি মুজিব কলেজ (কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী) এ বাংলা বিভাগে কর্মরত আছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ মেঘ ও ভবঘুরে খরগোশ (২০১৫), তামার তোরঙ্গ (২০১৮), শেমিজের ফুলগুলি (২০২০)।

Exit mobile version