ঘুমপাড়ানি গান

যখনি বুকের ব্যথাটা তীব্র থেকে
তীব্রতর হয়
আমি ব্যথা ভুলে থাকার জন্য
চোখ বন্ধ করে একটা যুৎসই, সবল অন্তমিল খুঁজি ব্যথার পাশে দাঁড় করানোর জন্য।
কী আশ্চর্য দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়
অথচ একটা সবল অন্তমিল খুঁজে পাই না
ফলে অন্তমিলের অভাবে ব্যথাটা একা একাই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়!
আর আমি নিঃশব্দে চিৎকার করে মাকে ডাকি!
যদিও ‘মা’ কোনো অন্তমিলই না
তারপরও ব্যথা আমার কমে যায়,
আমি মৃত্যুর মতো তীব্র এক ঘুমে তলিয়ে যাই,
ঘুমের মধ্যেই মনে হচ্ছিল মা আমার বেহেশত থেকেই ঘুমপাড়ানি গান গায়।


ভাইবোন

যদিও একই আঁতুড়ালয়
তবুও মনের সাথে হৃদয়ের হায়
কদাচিৎ দেখা হয়!
যদিও পিঠাপিঠি ভাইবোন
তবু মনের কথা হৃদয় বোঝে না
হৃদয়ের কথা মন!


প্রহেলিকা

জানালা খুললেই কিছু প্রতারণা
দরজা খুললেই মায়া মরীচিকা
মৃত শরীর ছুঁয়েছে জল জোছনা
প্রহর গুনছে আপ্রাণ প্রহেলিকা
আহা! জীবনের মানে ভুল আখ্যানে ভুলের মাশুলে
ক্ষত অবিরত আমি আহত শত অচেনা আঙুলে
একটু বাতাস চেয়ে হাহাকার, ছারখার
এ জীবন আজ উপড়ানো মূলে
হাজারো বড়শিতে ধরা পড়ি বারবার
জলজ জীবনে আজ কেউ নেই তিন কূলে।


যা চাইছিলাম আর যা পাইছিলাম তার মধ্যে তফাৎ

এই জীবনে আমি চাইছিলাম খুব বেশি কি আর
ধরো একটা বিপরীত দেহের উষ্ণ হৃদয়ে প্রোথিত
একটা ফ্যাকাশে সন্ধ্যা ও কিছু শীতল বিয়ার
আর যদি পড়ে থাকি বস্তুর মতো তথাকথিত
তারপর চাইছিলাম পতিত অপলক তৃষ্ণা থাকুক
তুমি পাশে থাকার পরেও শুধু তোমাকে দ্যাখার
চাইছিলাম সেই অভাববোধ গভীরে ঘুঘু ডাকুক
জানিই তো প্রেম দিনশেষে যারযার মতো একার
যা চাইছিলাম আর যা পাইছিলাম তার মধ্যে তফাৎ
অতটুকুই মানে লাফ দিয়ে পার হওয়া একটা ছোট গর্ত
কিন্তু সে সমস্ত ভাসায় নিয়া গেল একটা প্রমত্তা ভিন্নখাত
যার দুইপারে আমরা দুইজন দাঁড়ায় অনেক কাল নিঃশর্ত


বেনামি কবিতা

চুল গেছে পেকে, ঢেকে রাখি টাক,
কার আর বাল, এইতো আমার!
আর যেটূকু দ্যাখা যায়  ওহ নো ফাক
সেইটা কবেই পেচায়া তামার!
থামার
কি সময় হলো নাকি
ইশারা নতুন শুরুর?
গরু কিছু ঘরে রাখি
নাম দিয়েছি গুরুর!

ফুল থেকে বিষ বাছতেছে নুরু!
তারপরও বুকে দ্বিধা দুরু দুরু
বিষ পাতা বিষ পাতা পুড়তেছে কালে
দৌড়ায়া মন চায় শোন চায় পলাইতে!
টুক পলান্তিস, সুইট সিক্সটিন কিস
আর কিছু আর সত্তুর গলাইতে।
তারপর ভাসমান ফিস ফাস ফিস
ভরা বর্ষায় রুপালি নৌকা ইলিশ
পিলিজ খোঁজ নিও না এ কবিতার অর্থ
এ কবিতা পাঠের এই একটাই শর্ত!

পকেট গড়ের মাঠ, সেই মাঠে গরু গুলো ঘাস খায়! ঘাস খাক। মন চাইলে গুরু
হয়ে যাক গোমূর্খ, ওরা হোক শিমুল তুলো
দিয়ে নকল বানিয়ে কুচকাক সাদা ভুরু


সদা উদগ্রীব

তুমি চেয়েছিলে খুব পরিত্রাণ
আমি এনেছি বৈপরীত্য ছাপ
তাতে ধুলিস্মাৎ ফুলের বাগান
ধুলোর পাপড়ি, ছাইচাপা তাপ

তুমি চেয়েছিলে এদিক ভীষণ
আমার দুচোখ ছিল সদা ওদিকে
তোমার পায়ের ছাপ মৃত্তিকা মন
আমি হাত দিয়ে ছুঁই শুধু নদীকে

তুমি চেয়েছিলে নিশ্চুপ থাক
আমি শান দেই যত শব্দ করাত
কার দ্বারে বাজে কার স্বরে ডাক
কার আকাশ জুড়ে নামে ভুল রাত

তুমি চেয়েছিলে আমি হই মাটি
তুমি চেয়েছিলে হব ম্লান অণুজীব
তাই তো এখানে শুয়ে পরিপাটি
হৃদয়ে পঁচন রেখে সদা উদগ্রীব


গুমোট ফাপড়

আমি লাষ্ট বেঞ্চ, আমি ব্যাক ডোর
আমি মরে গেলে লাভ হবে তোর।

আমি পাড় মাতালের
জেগে থাকা ভোর।
তন্দ্রার কবিতায় শুন্য আসর।

আমি মরে গেলে লাভ হবে তোর
বিনয়ে বলছি ফের , লাভ হবে তোর
আমি বেঁচে থাকা মানে গুমোট ফাপড়


সার্জারিপূর্ব নার্ভাসরাত

আমার দিকে তাকায় থাকা একাধিক সিস্টার,
আমার দিকে এগিয়ে আসা ধীরে এনেস্থেসিয়া
সর্বোচ্চ কি ঘটিতে পারে আমার কপালে আর
কি খেলিবে ভাবো আজ বিধাতা আমারে নিয়া

আমারতো কোনো কৌতূহলই আর বাঁচিয়া নাই
চোখ বা হৃদয় বা তারচেয়ে নিচের অলীক ক্ষুধা
তাহারাও মরিয়া গিয়া বাঁচিয়াছে কৈশোরে, তাই
কেমনে বাঁচাবে আমারে বলো হে সঞ্জিবনী সুধা

বসুন্ধরা, ধরাকে সরা জ্ঞান করার দিন কবে শেষ
গুগোলে বেঁচে থাকা ভূগোলের কবরে ফুল দিও
তাতে তুমি ফিরে পাবে হয়তো কাল পাত্র দেশ
স্মরণে গানে, শ্লোগানে, এপিটাফ কিছু যুগ যুগ জিও

নতুবা নতুন কোনো কবি পেলে সাফল্যের হাতছানি
খুঁজে নিয়ে আমার কবর অবধি যদি ঠিক পৌঁছায়
আমার মর্মরে লিখে যায় তার কবিতার বিমূর্ত বাণী
তাকে সান্ত্বনাসহ বসায় রাইখো রিয়েলিস্টিক ছায়ায়

মায়ায় দ্রবীভূত হবার মতো কেউ নেই এই তল্লাটে
তরলের মতো উদ্বায়ু উদগীরণ পৌরাণিক কাহিনি
যেভাবে সময়ের সাথে সাথে মিশে যায়, না খাটে,
না ঘাটে, না হাটে না ঘরে আমি শুধুই শূন্যস্থান চিনি

সেদিকেই যেতে চাই নিয়ে যাও হে এনেস্থেসিয়া
পরকালেও আমার ডিজাভুই হবে, মনে হবে
দুনিয়াতে দেখেছি এই যে পুলসিরাত, অতি নীরবে
সহসা ফেরেশতাদিগকে যময ভাই মনে হয় ভাবিয়া

ভাবিয়া বের করি দেখে কেন মনে হয় চিনি উহারে
আমি অপারেশন থিয়েটার থেকে কই যাচ্ছি কার দুয়ারে
কে বলিতে পারে? তবু আশা রাখি সফল পরকাল উদ্ধারে
নতুবা পারাপার কি করে হইবো বলো জীবন রাখিয়া ঘাড়ে


হাসপাতাল

হাসপাতাল ছেড়েছি বহু আগে, আবারো হচ্ছে আন্ত:জালে পত্র বিনিময়
প্রেম করার মতো সুস্থ এখনো হয়ে ওঠেনি আমি অথবা আমার সময়
তাই বাড়ছেনা প্রেম, হচ্ছে না প্রকারন্তে পাগলামি, বাড়ছে শুধু ভয়
একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবো পৃথিবীতে
আদতে কেউ আমার নয়

স্বীয় চোখকানমন বুঁজে,
পাবেনা কোথাও খুঁজে
আমার এ হৃদয় সামান্য আশ্রয়
হয়তো একা থেকে খুব বেশি একা
নিজেকেই হতে দ্যাখা
জীবন এমনই সৌভাগ্যময়!


পুনর্জন্ম

এভাবেই দেখেছিলাম উষ্ণতম দিনে সমুদ্রতটে
বিশুষ্ক বাতাসের দেহে
ফসিল পাতারা ভাসে,
ম্রিয়মাণ হয়ে নয়, প্রসূতির জরায়ুতে
তীব্র আর্তনাদের মতো;
কিংবা ক্ষয়িষ্ণু জন্মের কথা কি আর শুনতে চাও আমার কাছে?
আমি গল্প বলিয়েদের দলপতি নই!
চেতনাবিরোধী মেঘের সঞ্চালকও নই,
তবু মাথার ভেতরে শুষ্ক জিবের মতো
ঊষরতা পরিত্যাগী স্বাদ বসে থাকে;
বীজহীন আবাদি জমির পরিভ্রমণে
নিঃসঙ্গ, একাকী ক্ষুধার্ত শাবক।

হে শুষ্ক পাতা,
তোমাকেই কি সে খুঁজে নেবে অথবা
মৃত্যুহীনতার উর্বরতা,
সুদীর্ঘ দিবসের সন্ধান করে কীভাবে?
ফেরারি চাঁদের মতো পৃথিবীতে এসে
স্মৃতিহীন পথিকের প্রতিটা পথই নতুন;
নতুবা এ সমগ্র জীবনযাপনে
তোমাকে অভিভূত করে সন্ধ্যা কিংবা
সকাতর সকালের আলো-সকল;
তবে পুনর্জন্মতাই ভাসমান ভাস্কর্য,
সহজাত বেদনার দলবদ্ধতাই
প্রজাপতি হয়ে ভাসে,
বিষণ্ন চোখের আরাম হতে চেয়ে।

Share.

রাজীব আশরাফ কবি, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গীতিকার। কাব্যগ্রন্থ: ধরেছি রহস্যাবৃত মহাকাল

Exit mobile version