কবিতা বিষয়ে কিছু লিখব বা লিখতে পারব এটি ভাবলেই খুব ভালোলাগে। কিছু কিছু কবিতা এরকম হয় যা একবার পড়লে বার বার পড়তে ইচ্ছে করে, মনে অজস্র ভাবনা দোলা দেয়, যাকে লিপিবদ্ধ না করলে তার ঘোড় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। ঠিক এমনটিই হয়েছে সৌহার্য্য ওসমান’র ‘জলঘুমে অথরা’ পড়বার পর থেকে। যদিও এই মূহুর্তে ঠিক কেমনটা অনুভব করছি তাকে পুরোপুরি সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে পারব কি না তা জানি না তবুও আমার মতো এক সাধারণ পাঠকের কলমে সবাইকে একবার কবির জলঘুমে ঘুমিয়ে থাকা অথরার কাছে নিয়ে যেতে চাই।

এই যে বিশেষ নামটা ‘অথরা’। কে এই অথরা? যার সঙ্গে বেশ কয়েকটি কবিতায় দেখতে পাওয়া গেছে কবির প্রেম, বিরহ, স্মৃতির টুকরো টুকরো ছবি। অথরা, যার সাথে কবির আলাপ যাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে এক একটা কল্পকাহিনী অথবা রূঢ় বাস্তব। অথরা হয়তো কবির সৃষ্ট এক কাল্পনিক চরিত্র যা হয়তো বাস্তবের সম্পর্কের চেয়েও নিজের কেও, কাছের কেও, পাঠকেরা এই রহস্যময় অথরার সাথে তখনই পরিচিত হতে পারবেন যখন কবির দৃষ্টিতে অথরাকে দেখবেন, অথরাকে গ্রহণ করবেন।

কবিতায় আধুনিক ভাষা, ধ্যান ধারণার যে প্রভাব বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সেই একই ধ্যান ধারণায় সম্পূর্ণ নিজস্ব একটা স্টাইলে কবি নিজের প্রত্যেকটি কবিতাকে খুবই সুন্দরভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। কী শহর, কী গ্রাম, জনমানসে কিংবা একাকীত্বে কবি এক একটা গল্প, এক একটা কাহিনী বলেছেন যার চিত্রকল্প/চিত্রধর্মিতা এতটাই নিখুঁত যে চোখ বন্ধ করলেই সমস্তকিছু ছবির মতো এসে ধরা দেয়।

তবে কিছু কিছু কবিতায় এক একটা এমন ধাঁধা অথবা পাক আছে যা ছাপিয়ে উঠতে একটু কষ্ট করতে হয়েছে বৈকি। এটা অবশ্যই পাঠক হিসেবে আমার সীমাবদ্ধতা এবং স্বল্প জ্ঞানের পরিণতি। তবুও বলব কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরলতা সবার মন ছুঁয়ে যায়। যেকোনো ধরণের সাহিত্যের ক্ষেত্রে আজকাল ভাষার সরলতা পাঠকের সাথে লেখকের বন্ধনকে আরও মজবুত করে। এ ক্ষেত্রে একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে কবির কাছে একটু আবদার রইল যাতে ভবিষ্যতে উপস্থাপন শৈলীতে সবরকম পাঠকের কথা মাথায় রেখে আরও একটু সহজ ভাবে নিজের লেখাকে জানতে সুযোগ দেন।

শেষে কবিকে অনেক শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার পছন্দের কবিতা কয়েকটির বিশেষ কতোগুলো অংশ উদ্ধৃত করলাম:

“শূন্য এ শহর চোখ মেলে ঝিমায়
ঝিমিয়ে জ্বলে সিরাজুলের চায়ের চুলা
শত চোখে রাতের তারা ফোটে ভোরের আশায়
ক্ষুধায় থালায় হাত মেলে বাজারের সবথেকে প্রবীণ পুরুষ-”

(কবিতা: শহর)

একখানা শহর আমাদের মতো অনেকের আছে কখনও কি এভাবে নিজের শহরকে আমরা দেখেছি? কবির সাথে আমরাও যেনো ঝিমিয়ে জ্বলা সিরাজুলের চায়ের চুলার পাশে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ ভিখারী একজনের করুণ মুখটা দেখতে পাচ্ছি। চিত্রকল্পখানি পাঠককে মোহাচ্ছন্ন করবার জন্য যথেষ্ট।

“বড় বাঁশবাগানের উত্তরের ভিটায়
দূরের কান্নাগুলো হালকা জলের কাছাকাছি থাকা হাঁসের পাখার ঝাপটায়
গড়তে গড়তে উরে গেল
কালো পালকের সন্ধ্যার ভাঙনের সাথে
যখন নাকফুল পরেও কবুল বলেনি অথরা”

(কবিতা: কষ্ট)

বিরহের এতো করুণ ছবি একটা শব্দের তুলিকা দিয়ে আঁকার কৌশল সত্যি ঈর্ষণীয়।

“অথরা চারপাশটা আজ নতুন লাগছে
ওইতো সেদিন তোমাকেই
আন্দোলনের মধ্যভাগে
খোঁপাতেও আটকে রেখেছিলে
কলমের লাল হেড”

(কবিতা: আন্দোলন)

প্রেমিক কবি, আন্দোলনের স্মৃতিতেও প্রেমিকার স্থিতিকে রোমন্থন করেছেন।

মোটের উপর ‘জলঘুমে অথরা’র কবি একজন প্রেমিক, একজন বিপ্লবী, একজন সুনিরীক্ষক, একজন শব্দের যাদুকর।আশাকরি ভবিষ্যতে কবির কলমে আরও সুন্দর সুন্দর সব লেখা পড়তে পারব।

Share.

আসাম এর ধুবড়ী জেলায় জন্ম ও বেড়ে উঠা। বাংলা, অসমীয়া, হিন্দি ভাষায় সাহিত্য চর্চা করেন। অনুবাদ করা তার অন্যতম কাজ। প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ - বাট (২০১৯ অসমীয়া) ইমেইল -saikiamun01@ gmail.com

Exit mobile version